Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Omicron: করোনার শেষ! প্রাকৃতিক নিয়মে তৈরি ‘টিকা’ হয়ে উঠবে ওমিক্রন?

COVID 19 Endemic: গবেষণায় দেখা গিয়েছে ১৪ দিনের মধ্যে ওমিক্রনের 'নিউট্রালজ়েশন এফেক্ট' ১৪ গুণ বেড়েছে। এর পাশাপাশি, আরও দেখা গিয়েছে যে ডেল্টা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় ৪.৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Omicron: করোনার শেষ! প্রাকৃতিক নিয়মে তৈরি 'টিকা' হয়ে উঠবে ওমিক্রন?
ওমিক্রনে ভয় নয়, সতর্ক থাকুন (প্রতীকী ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 30, 2021 | 12:48 AM

নয়া দিল্লি: করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে (Omicron Variant) আক্রান্ত হলে তা শুধুমাত্র এই ভ্যারিয়েন্টটির বিরুদ্ধেই যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে, এমন নয় বরং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের (Delta Variant) বিরুদ্ধে আরও ভাল সুরক্ষা দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার এক সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনটাই দেখা গিয়েছে। যদিও ওই গবেষণাটি এখনও পিয়ার-রিভিউ করা হয়নি। যাঁদের উপর এই পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাঁদের সংখ্যাও তুলনায় অনেকটা কম। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনে আক্রান্ত ৩৩ জনকে নিয়ে এই গবেষণা চালানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে টিকা পেয়েছেন এবং টিকা পাননি, উভয় ধরনের মানুষই ছিলেন।

বাড়িয়েছে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা

দক্ষিণ আফ্রিকার ওই গবেষণায় দেখা গিয়েছে ১৪ দিনের মধ্যে ওমিক্রনের ‘নিউট্রালজ়েশন এফেক্ট’ ১৪ গুণ বেড়েছে। এর পাশাপাশি, আরও দেখা গিয়েছে যে ডেল্টা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় ৪.৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষকরা বলছেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ফের ডেল্টায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকা স্থিত আফ্রিকা হেল্থ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অ্যালেক্স সিগালের মতে, যদি দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের অভিজ্ঞতা দেখা যায়. তাহলে এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে। বর্তমানে যেমন মৃদু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে ওমিক্রনের কারণে, যদি এমনটাই চলতে থাকে, তাহলে বিষয়টি খারাপ নয়।

ওমিক্রনের হাত ধরেই করোনা-মুক্তি?

গবেষণা অনুযায়ী, ওমিক্রন যদি ডেল্টাকে জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে পারে এবং আগের ভ্যারিয়েন্টগুলির তুলনায় অনেক হালকা বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে কোভিড-১৯-এর প্রভাবে গুরুতর কোনও রোগের প্রকোপ কমে যাবে। করোনার সংক্রমণ কোনও ব্যক্তি এবং একইসঙ্গে সমাজের জন্য কম বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তবে গবেষকরা বলছেন, এই যে শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা, এটি ওমিক্রন-আক্রান্ত হওয়ার ফলে তৈরি অ্যান্টিবডির কারণ, নাকি টিকার কারণ, নাকি পূর্ববর্তী সংক্রমণ থেকে প্রাপ্ত অনাক্রম্যতার কারণে তা স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে যাঁরা টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বেশি দেখা গিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রিটেনের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওমিক্রন সংক্রমিত ব্যক্তিদের ডেল্টায় আক্রান্তদের তুলনায় অসুস্থতা অনেকটা মৃদু। দক্ষিণ আফ্রিকায় এর আগের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি এবং গুরুতর রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমেছে। এর কারণ হিসেবে অবশ্য, একটি বড় অংশের মানুষের শরীরের অনাক্রম্যতার হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

ওমিক্রনে ৫০-৭০ শতাংশ কমেছে হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা

অন্যদিকে, ব্রিটেনের হেল্থ সিকিউরিটি এজেন্সিও পর্যবেক্ষণ করেছে যে ওমিক্রন আক্রান্তদের ডেল্টার তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ কম। তবে, তারা আরও উল্লেখ করেছে যেল এই ফলাফলগুলি “প্রাথমিক এবং অত্যন্ত অনিশ্চিত”। কারণ সেই সময়ে ওমিক্রনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা অনেকটা কম ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওমিক্রনে সংক্রমিত ব্যক্তিদের ডেল্টার তুলনায় গুরুতর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ কম।

তবে গবেষকরা এও উল্লেখ করেছে যে তাদের গবেষণায় ভ্যাকসিনেশন স্ট্যাটাস এবং পূর্বের সংক্রমণের কারণে অনাক্রম্যতা সংক্রান্ত তথ্যের অভাব রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য বলেছে, ওমিক্রন আগের যে কোনও কোভিড ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। হংকংয়ের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে ওমিক্রন মানুষের শ্বাসনালীতে ৭০ গুণ দ্রুত ছড়ায়। তবে ফুসফুসে সংক্রমণ কম গুরুতর বলে মনে করছেন গবেষকরা।

ওমিক্রনই কি স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চাবি?

টিকার মতোই একটি আস্তরণ তৈরি করতে পারে ওমিক্রন। অর্থাৎ, ওমিক্রন করোনায় মৃত্যু বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে অনাক্রম্যতা বাড়াতে পারে। ওমিক্রনের উপসর্গও আপাতভাবে মৃদু। দক্ষিণ আফ্রিকার ‘স্বাভাবিক’ ছন্দে ফেরার মডেলকে অনুসরণ করে আমাদেরও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার কথা ভাবা যেতে পারে। সীমান্ত সিল করে বা কোয়ারেন্টাইন এবং লকডাউন জারি করে আতঙ্ক না বাড়ানোই ভাল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

আমাদের ওমিক্রন সম্পর্কে খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না। এটি ক্ষতির চেয়ে বেশি উপকার করতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি-কাশির মতো হতে পারে।

করোনাকে ‘এন্ডেমিক’ করবে ওমিক্রন

ওমিক্রন কোভিড-১৯কে ‘এন্ডেমিক’ করে তুলবে। এটি প্রকৃতির অভিযোজনের নিয়ম। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়মে, যারা হত্যা করে তারা বেশিদূর যায় না, কারণ হয় ‘হোস্ট’ মারা যায় এবং ভাইরাসকে নির্মূল করে বা হোস্ট নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যে ভ্যারিয়েন্টটি হালকা হয়, সেটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।

“বাঁচো এবং বাঁচতে দাও”, এই কথাগুলো ওমিক্রনের জন্য সত্যি হবে, “যা আপনাকে হত্যা করে না তা আপনাকে শক্তিশালী করে”। ভাইরাসেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমরা এটি পছন্দ করি বা না করি, প্রকৃতি তাদের একটি ন্যায্য সুযোগ দেয়। সফল পরজীবিতার নীতি অনুসারে, এই অভিযোজন ভাইরাস এবং মানুষের উভয়ের জন্যই উপকারী।

প্রাণঘাতী বা ভাইরাল স্ট্রেনগুলি হোস্টের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায়। কম ভাইরাল যাতে মৃত্যু হয় মা, কিন্তু উপসর্গ তৈরি হয়, সেগুলিও বেশিদিন টেকে না, কারণ রোগীরা স্ব-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মিউট্যান্ট স্ট্রেনগুলিই একমাত্র টিকে থাকে, যা কম ভাইরাল হয়, যা হোস্টকে হত্যা করে না, খুব হালকা উপসর্গ তৈরি করে বা একেবারেই উপসর্গ তৈরি করে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মতো দেশে, ওমিক্রন ইতিমধ্যে ডেল্টাকে সরিয়ে প্রধান ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে উঠে এসেছে। তবে, ভারতীয় প্রেক্ষাপটেও যে এমন হবে তা আমরা বলতে পারি না। কারণ, আমাদের বিশাল জনসংখ্যা, যার প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ, টিকাকরণ চালু হওয়ার আগে আক্রান্ত হয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছে।

আরও পড়ুন : Coronavirus cases in India: যে কোনও মুহূর্তে দেশে লাগামছাড়া হতে পারে করোনা, পূর্বাভাস কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের