করেনার দাপটে মনে বাসা বেঁধেছে লকডাউন-ভীতি, ফের ঘরের পথে পরিযায়ী শ্রমিকেরা
করোনা নিয়ন্ত্রণে মহারাষ্ট্রে জারি হয়েছে নৈশ কার্ফু, সপ্তাহ শেষে লকডাউন। মুখ্যমন্ত্রী থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী-সকলেই লকডাউনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই কথা শুনেই তড়িঘড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন হাজারো পরিযায়ী শ্রমিক।
মুম্বই: গত বছরের স্মৃতি এখনও তাজা। করোনা সংক্রমণের কারণে দেশজুড়ে যখন লকডাউন জারি হয়েছিল, সবথেকে বেশি বিপাকে পড়েছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকেরাই। পকেটে টাকা না থাকায় অধিকাংশই পায়ে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। মাঝপথে প্রাণও হারাতে হয়েছিল অনেককেই। বছর ঘুরতেই ফের একবার সংক্রমণের শীর্ষে মহারাষ্ট্র। করোনা নিয়ন্ত্রণে জারি হয়েছে নৈশ কার্ফু, সপ্তাহ শেষে লকডাউন। মুখ্যমন্ত্রী থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী-সকলেই লকডাউনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই কথা শুনেই তড়িঘড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন হাজারো পরিযায়ী শ্রমিক।
বছর ঘুরতেই পুরনো অবস্থায় ফিরে গিয়েছে মহারাষ্ট্র। দেশে যেখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছুঁতে চলেছে, সেখানে কেবল মহারাষ্ট্রেই প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন ৫০-৬০ হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতিতে যেকোনও সময় লকডাউন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামিদিনে লকডাউন করার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেও। তাই এ বছর আর ঝুঁকি নিচ্ছেন না শ্রমিকরা। বাসে, ট্রেনে বা নিজেদের অটো-ট্রাক্টরে চেপেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন তাঁরা।
ইন্দোরের এক টোল প্লাজার কর্মচারী জানিয়েছেন, বিগত ৪-৫দিন ধরেই মহারাষ্ট্র থেকে প্রচুর গাড়ি ভিন রাজ্যে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ যেমন নিজস্ব গাড়িতে যাচ্ছেন, কেউ আবার অটো, ট্রাক্টরে যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে পরিবার সহ ফিরে যাচ্ছেন। অধিকাংশই লকডাউনের সম্ভাবনায় বাড়ি ফিরছেন বলে জানিয়েছেন।
মহারাষ্ট্রের এক অটো চালক জানান, গতবছর আচমকাই লকডাউন জারি হওয়ায় প্রবল অর্থকষ্টের মুখে পড়তে হয়েছিল। কোনওমতে পরিবার নিয়ে ঝাড়খণ্ডে নিজের বাড়িতে ফিরেছিলেন। কিন্তু লকডাউন উঠতেই পেটের টানে ফের মহারাষ্ট্রেই ফিরে এসেছিলেন। তবে পরিস্থিতি ফের একবার খারাপ হওয়ায় ইতিমধ্যেই সপ্তাহ শেষে লকডাউন জারি হয়েছে। সম্পূর্ণ লকডাউন জারির আগেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এবার আর ফিরবেন কিনা, সে বিষয়েও নিশ্চিত নন তিনি।
আরেক গাড়ি চালক জানান, এখনও লকডাউন জারি না হলেও বহু মানুষই সংক্রমণের বয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। বের হলেও বাস, ট্যাক্সিতে উঠতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে এমনিতেই ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। দিনে দু বেলা খাবার জোগানোর মতো অর্থও রোজগার হচ্ছে না। ট্রেনে প্রচন্ড ভিড় হওয়ায় নিজের গাড়িতেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ফিরবেন আবার।
উল্লেখ্য, বিগত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরেই মহারাষ্ট্র থেকে বিহার, ঝাড়খণ্ডগামী ট্রেনগুলিতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছে। মুম্বইয়ের বিভিন্ন বাস টার্মিনাসগুলিতেও পরিযায়ী শ্রমিকদের টিকিট কাটার লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। একই অবস্থা দিল্লি, কেরল, তামিলনাড়ুতেও। সেখানেও ভিন রাজ্যের শ্রমিকেরা একে একে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: করোনা তাড়াতে বিমানবন্দরেই পুজো দিলেন ‘মাস্কবিহীন’ পর্যটনমন্ত্রী!