Panchayat Election 2023: বাহিনী নিয়ে ‘সুপ্রিম’ এজলাসে জোর টক্কর, কী যুক্তি সাজিয়েছিল কমিশন, কেনই বা ধোপে টিকল না?
Central Force: হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ভোটের জন্য সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর জন্য। আজ সুপ্রিম কোর্টও বাহিনী নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল। রাজ্যের তরফে এদিন আদালতে সওয়াল করেন সিনিয়র আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা। অপরপক্ষের হয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান আইনজীবী হরিশ সালভে।
নয়া দিল্লি: সুপ্রিম দুয়ারেও ধাক্কা রাজ্যের। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই করতে হবে পঞ্চায়েত ভোট। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমে হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, স্পর্শকাতর জেলাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ছিল, তারা এখনও স্পর্শকাতর জেলা বলে কিছু চিহ্নিতই করেনি। তাই আদালতের নির্দেশের ওই অংশটুকু রিভিশন চেয়ে পুনরায় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল কমিশন। আর সেই সময়েই হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ভোটের জন্য সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর জন্য। আজ সুপ্রিম কোর্টও বাহিনী নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল। রাজ্যের তরফে এদিন আদালতে সওয়াল করেন সিনিয়র আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা। অপরপক্ষের হয়ে মামলাকারী শুভেন্দু অধিকারীর হয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান আইনজীবী হরিশ সালভে।
এক নজরে সওয়াল জবাব:
বিচারপতি নাগারত্না: হাইকোর্ট তো বলছে, হাফ ডজন রাজ্য থেকে বাহিনী চেয়ে পাঠানোর বদলে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেওয়ার জন্য। খরচও কেন্দ্রীয় সরকারই বহন করবে বলে উল্লেখ করছে হাইকোর্ট। আপনাদের অবস্থানই বলছে, রাজ্যের পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য অপর্যাপ্ত। সেই কারণেই তো আপনারা ছ’টি রাজ্য থেকে বাহিনী চেয়েছেন।
মীনাক্ষী অরোরা: বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে (ভিন রাজ্যের পুলিশে) আমাদের কোনও সমস্যা নেই। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করছি। কিন্তু তা বলে এটা একেবারেই নয় যে, রাজ্যের পুলিশ বাহিনী পর্যাপ্ত নয়।
বিচারপতি নাগারত্না: নির্বাচন আয়োজন করা মানে অশান্তির লাইসেন্স পাওয়া নয়। অশান্তির আবহে কখনও নির্বাচন হতে পারে না। লোকে মনোনয়ন জমা দিতে পারছে না, জায়গায় জায়গায় গোষ্ঠী-সংঘর্ষ হচ্ছে। যাঁরা মনোনয়ন দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মারাও গিয়েছেন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কি আদৌ কোনও হোমওয়ার্ক করে নেমেছে?
মীনাক্ষী অরোরা: হাইকোর্টের একটি নির্দেশের সঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সহমত নয়। কোন কোন বুথ স্পর্শকাতর, সেটি চিহ্নিত করা দরকার। সেই কাজ করা হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কিছুই করেনি বলে যে পর্যবেক্ষণ রয়েছে, সেটি সঠিক নয়। ৮ জুন ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। আর ৯ জুন সকালেই পিটিশন দাখিল করা হয়ে গেল, কী হচ্ছে কিছু না দেখেই। আমাদের কী দায়িত্ব, তা নিয়ে আমরা (কমিশন) যথেষ্ট সচেতন। আপনিই বলুন, ৯ জুন সকালেই পিটিশন ফাইল করার কী দরকার ছিল!
বিচারপতি নাগারত্না: তারপর থেকে আপনারা কী পদক্ষেপ করেছেন?
মীনাক্ষী অরোরা: আমারা রাজ্যের থেকে অ্যাসেসমেন্ট প্ল্যান জানতে চেয়েছি। তাদের থেকে যা যা এসেছে, সেগুলি আমরা খতিয়ে দেখেছি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন নিজে থেকে বাহিনী চাইতে পারে না। কমিশন শুধু রাজ্যের কাছে অনুরোধ করতে পারে। কিন্তু হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা পুরো আলাদা। হাইকোর্ট বলছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন বাহিনী মোতায়েনের জন্য রিকুইজিশন দেবে। কিন্তু সেটা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। হাইকোর্ট বলছে, প্রত্যেক জেলায়, প্রত্যেক জায়গায় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে কমিশনকে। কিন্তু কমিশন বুথে বাহিনী দিতে পারে, গোটা জেলায় বাহিনী দিতে পারে না। আজ থেকে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রচার পর্ব চলবে। তারপর কুলিং অব পিরিয়ড চলবে এবং ৮ জুলাই ভোট হবে। বাহিনীর জন্য রিকুইজিশন চাওয়াটা রাজ্যের কাজ।
বিচারপতি নাগারত্না: হাইকোর্টের নির্দেশে আপনাদের আপত্তি কোথায়? আপনারা নিজেই তো বাহিনী মোতায়েনের জন্য অনুরোধ করেছেন। বাহিনী কোথা থেকে আসবে, সেটা তো আপনাদের চিন্তার বিষয় নয়। এটার কী ব্যাখ্যা দেবেন?
মীনাক্ষী অরোরা: আমরা রিকুইজিশন দিতে পারি না। আমরা রাজ্যকে বলতে পারি, কত সংখ্যক বাহিনী লাগবে। সেই চাহিদা অনুযায়ী বাহিনীর সংখ্যা কীভাবে পূরণ করবে রাজ্য, সেটা নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। কমিশন বাহিনীর জন্য রিকুইজিশন দেয় না। কোনও জায়গা স্পর্শকাতর নয়, কোনও নির্দিষ্ট বুথ স্পর্শকাতর হতে পারে।
বিচারপতি নাগারত্না: এই রাজ্যের যে অতীত ইতিহাস রয়েছে, সেটি বিবেচনা করেই হাইকোর্ট মামলাটি গ্রহণ করেছিল এবং তারপর রায় দিয়েছে। কিন্তু এটা তো আপনাদের (কমিশনের) সুবিধার জন্যই। আপনারা তো এভাবে আপত্তি করতে পারেন না।
কমিশনের তরফে অপর আইনজীবী: রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কড়া ভাবে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি নাগারত্না: অপর পক্ষ কী বলছে, তা শোনার পর আমরা নির্দেশ দিতে পারি।
মীনাক্ষী অরোরা: বাহিনী প্রয়োজন কি না, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত। এক্ষেত্রে রাজ্যের মধ্যেই বাহিনী রয়েছে। এরপরও যদি প্রয়োজন হয়, আমরা অন্য পাঁচ রাজ্যটির থেকে বাহিনীর জন্য অনুরোধ করতে পারি। এর আগে শেষবার যখন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হয়েছিল, তাতে সিআরপিএফ-এর গুলিতে মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। হাইকোর্ট যে যুক্তিতে এই নির্দেশ দিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্ষেত্রে বাস্তবে ভিন্ন অবস্থা দেখা গিয়েছে। আর কোথা থেকে বাহিনী নিতে হবে, সেটাও ঠিক করে দিচ্ছে হাইকোর্ট। তারপর এখন বলা হচ্ছে, শুধু বুথগুলিতেই নয়, গোটা জেলায় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তার মানে, গোটা রাজ্যজুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে।
বিচারপতি নাগারত্না: কিন্তু এটা শুধু নির্বাচনের সময়ের জন্য।
মীনাক্ষী অরোরা: হাইকোর্ট নিজের মতো করে গোটা বিষয়টির বিবেচনা করেছে এবং রাজ্যের হাতে এই বিষয়ে যা ক্ষমতা থাকে, সেটি নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্ব রাজ্যের। সেই দায়িত্ব থেকে পিছু হঠতে পারে না রাজ্য। আর এই আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের শৃঙ্খলকে বদলে ফেলাও যায় না।
আইনজীবী হরিশ সালভে: রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্যের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করলেও কমিশনের উপর আস্থা রাখা উচিত। আদালতের কাছে আমার প্রশ্ন, হাইকোর্টের নির্দেশে কমিশনের আপত্তি কোথায়? রাজ্যের অন্দরেই একটা সমস্যা রয়েছে এবং এটা বার বার ফুটে উঠেছে। এই মামলায় মূল উদ্দেশ্য, বাহিনী মোতায়েনের সমস্যা নিয়ে নয়, বরং কেন্দ্রীয় বাহিনী না আসতে দেওয়া। ১৪ জুনেও তাদের কাছে কোনও অ্যাসেসমেন্ট প্ল্যান ছিল না। আর কমিশন বলছে, তাদের উপর আস্থা রাখার জন্য! এমন অবস্থায় হাইকোর্ট যা নির্দেশ দেওয়ার দিয়েছে। রাজ্যের তা নিয়ে কোনও অনুতাপ নেই। রাজ্য লজ্জায় বলতে পারছে না যে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে তাদের উপর রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আর সেই কারণেই তারা কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছে না।
আইনজীবী মনিন্দর সিং: মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য সবরকম হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিনের আগেই যাবতীয় বাহিনী মোতায়েন হয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এখনও কিছুই হয়নি।
মীনাক্ষী অরোরা: ভোটের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার পর ৯ জুন রাজ্য নির্বাচন কমিশন যখন সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তার মধ্যেই এই মামলা হয়ে যায়। কিন্তু যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের সমস্যা অভিযোগের কথা জানিয়ে, ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে কি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে কোনও অভিযোগ জানিয়েছেন?