‘হামলার আগেই উধাও সিআরপিএফ’, ত্রিপুরায় দলীয় কর্মীদের উপরে হামলার ঘটনায় নমোকে চিঠি ইয়েচুরির
Sitaram Yechury writes to PM Narendra Modi: পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ইয়েচুরি চিঠিতে বলেন, "একাধিক ঘটনাস্থলেই পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। রাজ্য কমিটির অফিসে সিআরপিএফ জওয়ান মোতায়েন থাকলেও তাদের হামলার এক ঘণ্টা আগে সরিয়ে নেওয়া হয়।"
আগরতলা: প্রতিবেশী রাজ্য়ে বারংবার হামলার মুখে পড়ছে সিপিএম (CPM)। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই ত্রিপুরা(Tripura)-এ সিপিএম কর্মীদের উপর হামলা, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ বার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Narendra Modi)-র হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি লিখলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি (Sitaram Yechury)।
বিগত কয়েকমাস ধরেই ত্রিপুরায় রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের বারবার প্রতিবেশী রাজ্য় সফর ঘিরে যেমন অশান্তি বেড়েছে, তেমনই আবার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উপর হামলার নিন্দা করার পর থেকে সিপিএমের উপরও হামলা শুরু হয়েছে। দুই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই অভিযোগের আঙুল তুলেছে শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে।
চলতি সপ্তাহেই ত্রিপুরা জুড়ে যেভাবে সিপিএমের বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ে হামলা চলেছে, সেই ঘটনার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ত্রিপুরায় দলের পার্টি অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা আটকাতে প্রধানমন্ত্রী যাতে দ্রুত কোনও পদক্ষেপ করেন, সেই আবেদন জানিয়েছেন সিপিএম নেতা ইয়েচুরি।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, পরিকল্পিত ভাবেই সিপিএমের পার্টি অফিসগুলিতে হামলা চালানো হয়েছে। সংবাদপত্রের অফিসে হামলাও পূর্ব পরিকল্পিত ছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। ত্রিপুরা সরকার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলেও ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, উদয়পুরে সিপিএমের সাব ডিভিশনাল অফিস, গোমতী জেলা কমিটির কার্যালয়, সেপাহিজালা জেলা কমিটির কার্যালয়, বিশালগঢ় সাব ডিভিশনাল কমিটি ও সাঁতার বাজার সাব ডিভিশনাল কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা কমিটি ও সদর কমিটির দফতরেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
ইয়েচুরির অভিযোগ, সবথেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আগরতলা স্টেট কমিটি অফিসে। সেখানে দলীয় কার্যালয়ের এক তলাটি ভাঙচুর করে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং দশরথ দেবের মূর্তিও ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও ডেইলি দেশের কথা নামক সংবাদপত্রের অফিসেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ইয়েচুরি চিঠিতে বলেন, “একাধিক ঘটনাস্থলেই পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। রাজ্য কমিটির অফিসে সিআরপিএফ জওয়ান মোতায়েন থাকলেও তাদের হামলার এক ঘণ্টা আগে সরিয়ে নেওয়া হয়।”
ঘটনার সূত্রপাত হয় চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকে। সিপিএম নেতা তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার যখন ধনপুর এলাকায় ঢুকতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় তাঁর কনভয়ে হামলা চালানো হয়। অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। এরপরই আগ্রাসী মেজাজ ধারণ করে এলাকার সিপিএম কর্মীরা। রাজ্যজুড়ে ধিক্কার মিছিল বের করা হয়। সেই ধিক্কার মিছিল চলাকালীনই ত্রিপুরার বেশ কিছু এলাকায় একাধিক সিপিএম কার্যালয় এবং সংবাদ মাধ্যমের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এরপর বুধবার বিশালগঢ়-উদয়পুর এলাকা সিপিএমের একাধিক দফতর ও কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। পাশাপাশি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। দলীয় কার্যালয়ের বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক গাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাম কর্মী-সমর্থকদের দাবি, আগরতলা মেলার মাঠ এলাকায় থাকা সিপিএম কার্যালয়েও আগুন লাগিয়ে দেয় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছে বাম শিবির।
তাদের দাবি, পুলিশের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। যদিও এই নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব পালটা দাবি করেন, এটা আসলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও হামলার সমালোচনা করে টুইটে লেখেন, “হিংসা এবং গুণ্ডামি এমন ভাবে বিজেপির মজ্জাগত যে তারা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকেও নৃশংসভাবে আক্রমণ করতে ছাড়ছে না”। টুইটে সিপিএমের নাম উল্লেখ না করলেও সংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণের নিন্দা করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘গণতান্ত্রিক পটভূমিতে প্রাধান্য পাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই’, বিশেষ পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের