Ajanta Biswas : সিপিএমের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ অনিল-কন্যার? দলের সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করালেন না অজন্তা
Ajanta Biswas : তৃণমূলের মুখপত্রে উত্তর সম্পাদকীয় ঘিরে ঘটনাপ্রবাহের পর সিপিএমের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে অনিল-কন্যার। অনেকে বলেন, অনিল বিশ্বাসের মেয়ে তৃণমূলের মুখপত্রে কলম ধরছেন, এটা মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি সিপিএম নেতাদের পক্ষে। সেই ঘটনাপ্রবাহের যেন শেষ হল অজন্তার সদস্যপদ রিনিউ না করার মধ্যে।
কলকাতা : তাঁর বাবা ছিলেন রাজ্য সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। রাজনীতির অ-আ-ক-খ শিখেছেন বাবার কাছেই। একসময় তাঁর বাবাকে রাজনীতির চাণক্য বলা হত। প্রয়াত সেই দুঁদে রাজনীতিক অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাস কি এবার সিপিএমের (CPIM) সঙ্গে সব সম্পর্ক শেষ করলেন? প্রশ্নটা আরও গাঢ় হচ্ছে, কারণ অজন্তা এবছর সিপিএমের প্রাথমিক সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করাননি। তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় কলম ধরায় যে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই কি সিপিএমের সঙ্গে অজন্তার সম্পর্কচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়াল? প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
গত বছরের ২৮-৩১ জুলাই তৃণমূলের মুখপত্রে চার কিস্তিতে ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীমুক্তি’ শীর্ষক উত্তর সম্পাদকীয় লেখেন অজন্তা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপিকা তাঁর লেখায় বাংলার রাজনীতিতে নারীশক্তির ভূমিকার কথা লিখেছিলেন। সেখানে প্রশংসা করা হয় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে বঙ্গ রাজনীতিতে। একে ‘জাগো বাংলা’, তার উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশস্তি, যা মেনে নিতে পারেননি রাজ্য সিপিএমের শীর্ষ নেতারা। প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে। অজন্তা যে হেতু দলের সদস্য এবং সিপিএমের অধ্যাপকদের সংগঠনে যুক্ত, তাই কলকাতা জেলা কমিটিকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়। অজন্তাকে শোকজও করা হয়। জবাব দেন অনিল-কন্যা। কিন্তু, তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি দল। সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলী তাঁকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করে। সেইসময় দলের একাংশ তাঁকে ছয় মাসের জন্য সাসপেন্ডের কথা বলে।
ওই উত্তর সম্পাদকীয় ঘিরে ঘটনাপ্রবাহের পর সিপিএমের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে অনিল-কন্যার। অনেকে বলেন, অনিল বিশ্বাসের মেয়ে তৃণমূলের মুখপত্রে কলম ধরছেন, এটা মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি সিপিএম নেতাদের পক্ষে। সেই ঘটনাপ্রবাহের যেন শেষ হল অজন্তার সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ না করার মধ্যে। মার্চে দলের প্রাথমিক সদস্যসদ পুনর্নবীকরণের আবেদন জমা শেষ হয়েছে। পার্টি সম্মেলন ও পার্টি কংগ্রেসের জন্য স্ক্রটিনি পর্ব কয়েকদিন আগে শুরু হয়েছে। তাতেই জানা গিয়েছে, সদস্যপদ পুনর্নবীকরণের আবেদন জমা করেননি।
যদি অজন্তার সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ না করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি কলকাতা জেলা সিপিআইএমের সম্পাদক কলোল্ল মজুমদার। তিনি বলেন, “১৩২০টি শাখা থেকে সব মেম্বারশিপ জমা পড়েছে। ওর নাম আলাদা করে কিছু দেখিনি। ফলে এটা নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।” অজন্তা বিশ্বাসের সঙ্গে এই নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিল বিশ্বাসের প্রয়াণের পর থেকে তাঁদের তেমন খোঁজ রাখেনি সিপিএম নেতৃত্ব। এমনকী, তাঁর মা অসুস্থ হওয়ার সময়ও রাজ্য সিপিএম এগিয়ে আসেনি। সেইসময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে সিপিএমের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব অনেকদিন থেকেই বেড়েছিল।
অজন্তার সিপিএমের সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ না করা নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “বিষয়টি অজন্তা বিশ্বাস এবং সিপিএমের বিষয়। শুধু এটুকু বলতে পারি, তিনি খুব ভাল লিখেছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলার নামে তাঁকে অপমান করেছে সিপিএম।”
অনিল বিশ্বাস ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৬ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত আমৃত্যু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন পলিটব্যুরো সদস্যও। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজফফর আহমেদ ভবনে বসে গোটা রাজ্য সিপিএম-কে পরিচালনা করতেন তিনি। তাঁর আমলে লাল পতাকায় ছেয়ে গিয়েছিল বাংলা। আর আজ তাঁর মেয়ের ঘর থেকেই ‘অদৃশ্য’ হয়ে গেল কাস্তে-হাতুড়ি-তারা চিহ্ন!
আরও পড়ুন : Prashant Kishor-Congress : প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, কংগ্রেসের হাত ধরলেন না ভোটকুশলী প্রশান্ত