Calcutta High Court: কলকাতা হাইকোর্টে ‘হামলার’ ফুটেজ দিল বিজেপি, বিচারপতির মন্তব্য ‘এ তো দেখছি আপনাদেরই বাঁচানোর চেষ্টা করছে পুলিশ’
Calcutta High Court: এদিনই আবার বারুইপুরে আদালতের বেঁঁধে দেওয়া সময়সীমা মেনে বারুইপুরে প্রতিবাদী সভা করে ফেলেছে বিজেপি। এই সভার অনুমতি নিতেও জল গড়িয়েছিল হাইকোর্টে। শেষ পর্যন্ত অনুমতি মেলে।

কলকাতা: দিনটা ছিল ১৯ মার্চ। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির ছবি দেখা গিয়েছিল বারুইপুরে। ১০০ মিটারের মধ্যে একই সময় একই জায়গায় মিছিল দেখা যায় তৃণমূলেরও। তৃণমূল কর্মীদের ‘জয় বাংলা’ ও পাল্টা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। বিরোধী দলনেতার গাড়ি আটকে কালো পতাকা দেখানো হয় বলেও অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু, একই জায়গায় একই সময়ে দুই দল মিছিলের অনুমতি মিলল কী করে সেই প্রশ্নেই বাড়তে থাকে চাপানউতোর। এদিন এবার সেই প্রশ্ন উঠল কলকাতা হাইকোর্টেও।
‘কারা কলো পতাকা দেখিয়েছিল শুভেন্দুকে?’
“কারা কলো পতাকা দেখিয়েছিল শুভেন্দুকে?” এদিন রাজ্যকে এই প্রশ্নও করতে দেখা যায় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষকে। পাল্টা রাজ্যের তরফে বলা হয়, “বেশ কয়েকজন ছিল।” কিন্তু, “তাঁরা কী অনুমতি নিয়েছিল?” বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের তরফে বলা হয় ওখানে তৃণমূলেরও একটি কর্মসূচি ছিল। আর এখানেই বাড়তে থাকে চাপানউতোর। কোর্টের মধ্যে একেবারে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজ্যের যুক্তি শুনে কার্যত বিস্ময়ের সঙ্গেই বিচারপতি বলেন, “আপনারা সব কিছু জেনে কি করে দুটি দলকে অনুমতি দিলেন?” যদিও রাজ্য আবার অকপটেই বলে, “কেউ অনুমতি চাইলে তো দিতেই হবে।” একইসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবী এও বলেন, “কোনও নেতা যদি কোথাও যান এবং বিরোধীরা যদি কালো পতাকা দেখান তাহলে সম্ভবত এটা বলা যায় না যে কোনও অপরাধ করেছেন তাঁরা।” সঙ্গে সঙ্গেই বিচারপতি বলে ওঠেন, “সেটা অন্য কথা! কিন্তু এখানে আইনি অনুমতি দেওয়ার কারণে তো এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।” পাল্টা রাজ্যের আইনজীবী বলেন, “অনুমতি দিলেও দোষ, না দিলেও দোষ!”
‘এখনই বলতে পারব না’
এ নিয়ে যখন চাপানউতোর চলছে তখন ফের কৌতূহলী হয়ে নতুন প্রশ্ন করেন বিচারপতি। কারা প্রথম অনুমতি চেয়েছিল তা রাজ্যের কাছে জানতে চান বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। যদিও রাজ্যের উত্তর, “এখনই বলতে পারব না।” তা শুনেই বিচারপতি বলে ওঠেন, “যেই আগে অনুমতি চেয়ে থাকুক না কেন দুটি দলকে একত্রে অনুমতি দেওয়া ঠিক হয়নি।” যদিও রাজ্যের এ ক্ষেত্রে আবার পাল্টা মতও রয়েছে। রাজ্যের আইনজীবী নিজের পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরেন কোর্টে। স্পষ্ট বলেন, “এটা একটা পুরানো রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিছিল করার পরে একটা অস্পষ্ট অভিযোগ করা। এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয়।” যদিও সওয়াল জবাবের মধ্যে থেমে থাকেননি বিজেপির হয়ে মামলা লড়া আইনজীবীরা। পাল্টা রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, অ্যাডভোকেট জেনারেল কী রাজ্যের হয়ে সওয়াল করছেন নাকি অভিযুক্তদের হয়ে? এখানেই না থেমে মামলার গতিপ্রকৃতির প্রসঙ্গ টেনে আরও বলেন, “পুলিশ জানিয়েছিল যে প্রাথমিক তদন্ত চলছে। কিন্তু, এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্তের কোনও প্রয়োজন হয়না।” তাঁদের স্পষ্ট কথা, “আমরা তো বিশেষ সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত চাইনি। আমরা মনে করেছিলাম যে পুলিশ তদন্ত করবে। তারা করেনি বলে আমাদের আদালতে আসতে হয়েছে।” এ নিয়ে যখন চাপানউতোর চলছে তখন আচমকা বিজেপির দেওয়া ফুটেজ দেখতে চান বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। কিন্তু, তা দেখে বিশেষ কিছুই খুঁজে পেলেন না। ভরা এজলাসে বলে দিলেন, “এই ফুটেজে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।”
‘কিছুই বুঝতে পারছি না’
বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এ কথা শুনে ততক্ষণে শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে এজলাসের মধ্যে। বাড়ছে চাপানউতোর। যদিও বিচারপতির স্পষ্ট কথা, তিনি তিনবার দেখেছেন। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারা যায়নি। সাফ বলেন, “ভাল কোনও ফুটেজ থাকলে দেখান।” একইসঙ্গে বিজেপির আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ঠযেগুলোকে আপনারা বাঁশের লাঠি বলছেন আমার সেগুলোকে দেখে ফাইবার স্টিক বলে মনে হচ্ছে। ফাইবার স্টিক পুলিশ ব্যবহার করে। এই ফুটেজে দেখে মনে হচ্ছে পুলিশ আপনাদের বাঁচাবার চেষ্টা করছে।” ফের একবার বলেন, “পরিষ্কার ফুটেজ থাকলে নিয়ে আসুন যেটাতে হামলার ছবি স্পষ্ট হয়।” বিচারপতির এ কথা নিয়ে যখন চাপানউতোর বাড়ছে, তখন পাল্টা রাজ্যের কোর্টে বল ঠেলে দেয় বিজেপি। পুলিশ কি এতটাই ক্ষমতাহীন যে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পেশ করতে পারছে না? সওয়াল করেন বিজেপির আইনজীবীরা। সঙ্গে সঙ্গেই বিচারপতি বলেন, কেন্দ্রের কাছে যদি কোনও ভিডিয়ো থাকে তাহলে আমি দেখতে প্রস্তুত। একইসঙ্গে চিনার পার্কের প্রসঙ্গ টেনে খানিক পরামর্শ দেওয়ার সুরেই বলেন, কালকে চিনার পার্কে কি হয়েছে দেখেছেন তো ? আমাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আইনজীবীদের উদ্দেশে মন্তব্য বিচারপতির। আদালত সূত্রে জানা যাচ্ছে মামলার পরবর্তী শুনানি হতে পারে আগামী এপ্রিল মাসে। প্রসঙ্গত, এদিনই আবার বারুইপুরে আদালতের বেঁঁধে দেওয়া সময়সীমা মেনে বারুইপুরে প্রতিবাদী সভা করে ফেলেছে বিজেপি। এই সভার অনুমতি নিতেও জল গড়িয়েছিল হাইকোর্টে। শেষ পর্যন্ত অনুমতি মেলে।





