Explained: পুর-পাঁকে নামলেই বেরচ্ছে দুর্নীতির দুর্গন্ধ! দেখুন তো আপনার নাকে আসছে কি না!

Municipality Recruitment Explained: অভিযোগ, এজেন্সিগুলি শুধুমাত্র আইওয়াশের জন্য একটা পরীক্ষা নিত। সেই পরীক্ষায় যোগ্য প্রার্থীদের থেকে অযোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগের মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে যেত। কারণ, সেইসব প্রার্থীদের কাছ থেকে সংস্থাগুলি ৪ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিত।

Explained: পুর-পাঁকে নামলেই বেরচ্ছে দুর্নীতির দুর্গন্ধ! দেখুন তো আপনার নাকে আসছে কি না!
পুরসভাগুলিতে কীভাবে হত নিয়োগ?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 26, 2024 | 3:47 PM

কলকাতা: শুধু শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নয়। পুরসভা এবং পুরনিগমগুলিতেও নিয়োগে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। তদন্তে নেমে একের পর এক তথ্য সামনে আনছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত অয়ন শীল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে দুর্নীতির একের পর এক পর্দা সরতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে দেখে নেওয়া যাক, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের আগে পুরসভা ও পুরনিগমগুলিতে কীভাবে নিয়োগ হত? কোন পদ্ধতিতে দুর্নীতির জাল বিস্তার করেছিল?

পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে সাতটি পুরনিগম। আসানসোল, বিধাননগর, চন্দননগর, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি, হাওড়া এবং কলকাতা। এই সাতটি পুরনিগম ছাড়াও রয়েছে ১২৩টি পুরসভা। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের আগে কলকাতা পুরনিগম ছাড়া রাজ্যের কোনও পুরনিগম বা পুরসভা মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের অন্তর্গত ছিল না। সেই সময় কলকাতা ছাড়া বাকি পুরসভাগুলিতে কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব নিজ নিজ পুরসভার চেয়ারম্যান বা সেই প্রতিষ্ঠান গঠিত কমিটি স্থির করত।

২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে রাজ্যে সবকটি পুরনিগম এবং মিউনিসিপ্যালিটির কর্মী নিয়োগের বিষয়টি মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের অন্তর্গত করা হয়। তখন থেকে নাম হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন। কলকাতা পুরনিগমের গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ ছাড়া বাকি সব নিয়োগ (অস্থায়ী কর্মী ব্যতীত) ২০০৮-০৯ অর্থবর্ষ পর্যন্ত মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের অধীনে হত। সংশ্লিষ্ট অর্থবর্ষের পর থেকে গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগও মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের অধীনে চলে আসে।

২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের আগে কীভাবে পুরসভাগুলিতে হত নিয়োগ?

মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের অধীনে না থাকায় রাজ্যের সবকটি পুরসভায় স্থায়ী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হত। এজেন্সিগুলি বরাত পেত টেন্ডারের ভিত্তিতে। সেই টেন্ডার প্রক্রিয়াতেও গলদ থাকত বলে অভিযোগ। আইন রয়েছে, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম তিনজন বা তিনটি সংস্থাকে অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু সেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রভাব খাটিয়ে একজনই অংশগ্রহণ করত এবং সে কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব পেয়ে যেত।

সেই সংস্থার উপরই দায়িত্ব থাকত স্থায়ী কর্মী পুরসভায় নিয়োগের জন্য পাঠানোর। পৃথক পৃথক পুরসভার আলাদা করে কোটেশন থাকত। অর্থাৎ যদি উত্তরবঙ্গের একটি পুরসভায় সেই এজেন্সি কর্মী পাঠানোর জন্য জন পিছু ৫০ টাকা পেত, সেটি দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে অনেকটাই বেড়ে যেত। কলকাতা লাগোয়া পুরসভাগুলির ক্ষেত্রে সেই কোটেশন রেট দাঁড়াত ৭৫-৮০ টাকা।

নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে কীভাবে?

অভিযোগ, কর্মী পাঠানোর জন্য কোটেশন রেট ছিল শুধুমাত্রই খাতায়-কলমে। বাস্তবে লক্ষ লক্ষ টাকা আর্থিক লেনদেন হত ওই পুরসভায় ক্ষমতাসীন দলগুলির নেতাদের সঙ্গে। অভিযোগ, এজেন্সিগুলি শুধুমাত্র আইওয়াশের জন্য একটা পরীক্ষা নিত। সেই পরীক্ষায় যোগ্য প্রার্থীদের থেকে অযোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগের মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে যেত। কারণ সংস্থাগুলি ৪ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা নির্দিষ্ট পদে নিয়োগ ভিত্তিক নিত। সেই টাকা অবশ্য পুরোটাই এজেন্সি হজম করত তা নয়। ক্ষমতাসীন শাসকদলের নেতাদের পকেটে ৩০-৩৫ শতাংশ যেত।

নেতাদের আত্মীয় কিংবা ঘনিষ্ঠজনদের কি ঘুরপথে চাকরি দেওয়া হয়েছে পুরসভায়?

তদন্তকারীরা বলছেন, যেখানে টেন্ডার প্রাপ্ত সংস্থা ঘুষ নিয়ে চাকরি দিচ্ছে। সেখানে নেতাদের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজনদের চাকরি পাওয়া স্বাভাবিক। তবে নেতাদের আত্মীয়রা বা কাছের লোকরা চাকরি পেয়েছেন সুকৌশলে। সরাসরি পুরসভায় ওই আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠর নিয়োগ হতে পারত না। সেই প্রভাবশালী নেতারা তখন এজেন্সিকে বলে দিত যারা পরীক্ষা দিতে বসবে, তাদের সঙ্গে যেন ওই ঘনিষ্ঠদের নাম নথিভুক্ত করে নেওয়া হয়। পরীক্ষাতে বসে সাদা খাতা জমা দিলেও শুধুমাত্র প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সুকৌশলে নিয়োগের মেধা তালিকায় নাম উঠেছে। এই ঘনিষ্ঠদের অবশ্যই কোনও আর্থিক লেনদেনের মধ্যে থাকতে হয়নি।

একই সংস্থা কি বারবার নিয়োগের দায়িত্ব পেত? কীভাবে?

এখানেও রয়েছে চমক। বছরের পর বছর আর্থিক লেনদেনের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য একটি এজেন্সি কোনও পুরসভায় পাঁচ বছর, কোথাও আবার সাত বছর কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব পেয়ে এসেছে। কিন্ত, কীভাবে? একই এজেন্সি বারবার দায়িত্ব পেলে যে প্রশ্ন উঠবে, এটা জানত সংস্থাগুলিও। অডিট এই ধরনের নিয়োগে প্রশ্ন তুলবে সেই বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ওই এজেন্সিগুলি এফিডেভিট করে নিজেদের সংস্থার নামও বদলে পুরসভার সঙ্গে কাজ করে এসেছে। তদন্তকারীরা বলছেন, দুর্নীতিকে ঢাকা দিতে রীতিমতো প্রস্তুত হয়েই কাজ করেছে এজেন্সিগুলি।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। ধরা পড়েছেন মন্ত্রী থেকে বিধায়ক। আর পুরনিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্তে নেমে চার্জশিটে একাধিক পুরসভার উল্লেখ করেছে সিবিআই। যেখানে বেআইনিভাবে কতজনকে নিয়োগ করা হয়েছে, সেই সংখ্যা রয়েছে। এখন দেখার, পুরনিয়োগ দুর্নীতির জাল কত গভীরে ছড়িয়েছে?