Anubrata Mondal: সেদিন শিবঠাকুরও পারেননি, কেন কেষ্টকে তিহাড় যেতে হয়েছিল

Anubrata Mondal: ২০২২ সালের শুরু থেকেই অনুব্রতকে একাধিকবার তলব করেছিল সিবিআই। ১০ বার ডাকা হলেও ৯ বারই সাড়া দেননি বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। বারবার বলেছিলেন অসুস্থতার কথা। তবে তাঁর আইনজীবীরা কথা বলেছিলেন সিবিআইয়ের সঙ্গে।

Anubrata Mondal: সেদিন শিবঠাকুরও পারেননি, কেন কেষ্টকে তিহাড় যেতে হয়েছিল
অনুব্রত মণ্ডল Image Credit source: Facebook
Follow Us:
| Updated on: Sep 20, 2024 | 7:59 PM

কলকাতা: শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তো প্রতিটি জেলায় একটি করে জেলা সভাপতি রয়েছেন। কিন্তু ক’জনের নাম সাধারণ মানুষ জানেন বা চেনেন তাঁদের? কিন্তু, এক জনের নাম সকলেরই জানা। তিনি বীরভূমের একদা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, ওরফে কেষ্ট। তাঁর অনন্যতা কেবল এখানেই নয়। তিনি নানা কারণে ‘আলাদা’। একদিকে যেমন, মুখ নিসৃত বাণী তাঁকে রাজ্যব্যাপী পরিচয় দিয়েছে, অন্যদিকে তাঁর ‘পারফরমেন্স’ও  অনস্বীকার্য। তিনি এতটাই ‘কাজের ছেলে’ যে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোর ভরসার হাত বরাবরই মাথার উপরে অনুভব করেছেন অনুব্রত। এহেন অক্সিজেনের ঘাটতিতে ভোগা অনুব্রত মণ্ডলের নাম জড়ায় গরু পাচার দুর্নীতির সঙ্গে। অসুস্থতা থেকে শিবঠাকুরের ‘বাধা’, সব এড়িয়ে কোন রাস্তায় অনুব্রতকে তিহাড়ে নিয়ে গিয়েছিল ED-CBI. তবে যাত্রা কিন্তু খুব একটা সুগম ছিল না। একনজরে দেখে নেওয়া যাক জেল যাত্রার প্রেক্ষাপট। 

কেষ্ট নামেই কাঁপন

আসলে খেলছিলেন অনেকদিন থেকেই। ২০১১ সালের পালাবদলের পর থেকেই একেবারে একটানা স্ট্রাইকে। তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে কুপোকাত বিরোধীরা। কখনও নকুল-দানা, আবার কখনও গুড়-বাতাসা দিয়ে চলেছিল ‘স্পেশ্যাল ট্রিটমেন্ট’। কখনও পুলিশকে বোমা মারতে বলা, কখনও বিরোধীদের মেরে পা-হাত পা ভেঙে দেওয়ার নিদান, ‘কেষ্ট নামে’ শুধু বীরভূম কেন, একসময় কাঁপতো গোটা বাংলাই। বিরোধীরা তো আজও তেমনটাই বলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও নির্বাচন কমিশন তাঁকে গৃহবন্দি করেছিল। কিন্তু, শেষে পর্যন্ত গরু পাচার মামলাই ফেলেছিল চূড়ান্ত বিপাকে। বাড়িতে কড়া নেড়েছিল সিবিআই। ২০২২ সালের অগস্ট মাসে বাড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। শেষে মাঠে নামে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটও। সিবিআইয়ের কেসে গত জুলাই মাসে জামিন পেলেও, ইডির কেসে সদ্য জামিন পেয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। পুজোর আগেই ফিরছেন বাড়ি। ২ বছর ৯ দিন পর জেল থেকে মুক্ত তৃণমূলের ‘কেষ্টদা’। তাতেই খুশির জোয়ার বীরভূমের ঘাসফুল শিবিরে। 

এই খবরটিও পড়ুন

ঠিক কোন অভিযোগে গ্রেফতার? 

অনুব্রতর পাশাপাশি অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মণ্ডল, অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন ও তাঁর হিসেবরক্ষক  মণীশ কোঠারিকেও গ্রেফতার করা হয়। সিবিআইয়ের দাবি ছিল, ব্যক্তিগত সায়গল হোসেনের হাত ধরেই পুরো কারবার চালতেন অনুব্রত। সিবিআই তো চার্জশিটে স্পষ্টই উল্লেখ করেছেন, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ বার ফোনে কথা হয়েছে সায়গলের সঙ্গে এনামুল-আব্দুল লতিফদের। এই এনামুল-আব্দুল লতিফ আবার গরু পাচার মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। 

কে এই সায়গল? 

ইডি সূত্রে খবর, মাসে কম করে ৫ কোটি টাকা প্রোটেকশন মানি দিতে হত সায়গল হোসেনকে। অনুব্রতর কথাতেই চলত কাজ। একটি হাট থেকেই সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার গরু পাচার হত। সেই হিসাবেই ঠিক হত ‘প্রোটেকশন মানির’ অঙ্ক। গরু পাচারের তদন্তে নেমে শুরুতেই সায়গলের ১ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তির সন্ধান পায় ইডি। সায়গলের মোট ১ কোটি ৫৮ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৯০ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তও হয়। সিবিআই আবার যে চার্জশিট দেয় তাতে অনুব্রতকে গরু পাচার মামলার মূল পৃষ্ঠপোষক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অনুব্রতর নামে থাকা ১৮ কোটি টাকারও উল্লেখ হয়। উল্লেখ করা হয়েছিল ৫৩ কোটির সম্পত্তির কথাও। কীভাবে তিনি ওই বিপুল সম্পত্তি করেছিলেন তা নিয়ে বাড়ে চাপানউতোর। উত্তর খুঁজতে থাকেন তদন্তকারীরা। 

লাগাতার তলবেও ‘নো রেসপন্স’

২০২২ সালের শুরু থেকেই অনুব্রতকে একাধিকবার তলব করেছিল সিবিআই। ১০ বার ডাকা হলেও ৯ বারই সাড়া দেননি বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। বারবার বলেছিলেন অসুস্থতার কথা। তবে তাঁর আইনজীবীরা কথা বলেছিলেন সিবিআইয়ের সঙ্গে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ১১ অগস্ট অনুব্রতর বাড়ি ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আগের রাতেই বীরভূমে চলে গিয়েছিলেন ৩০ জন সিবিআই আধিকারিক। ১১ অগস্ট সকাল পৌনে দশটা নাগাদ হানা দেয় সিবিআই। তারপরই গ্রেফতার। সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই মাঠে নামে ইডি। আর্থিক দুর্নীতির কেসে তদন্তে সহযোগিতা না করার অভিযোগে আসানসোলে জেলের ভিতরেই গ্রেফতার করা হয়। এরইমধ্যে তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড়ও প্রায় শেষের পথে। তখনই এসেছিল আর একটা খবর। অভিযোগ, বাইশ সালের একদম শেষে কেন্দ্রীয় এজেন্সির যাত্রাভঙ্গ করতে মাঠে নেমেছিল জেলা পুলিশ। খুনের কেসে দায়ের এফআইআর। মাঠে খোদ ‘শিবঠাকুর’।

ময়দানে তখন শিবঠাকুর 

FIR-এর ভিত্তিতে পরদিন সকালেই অনুব্রতকে গ্রেফতার করে বীরভূম পুলিশ। পুলিশের অভিযোগ, অনুব্রত মণ্ডল নাকি মাস কয়েক আগে দলীয় কার্যালয়ে শিবঠাকুর মণ্ডলকে গলা টিপে খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। শিবঠাকুর আবার এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা থমকে যায়। যদিও শেষ দিল্লির তিহাড়েই ঠাঁই হয় অনুব্রতর। গ্রেফতার হন তাঁর কন্যা সুকন্যা মণ্ডলও। বাবার সঙ্গেই তিহাড়ে ঠাঁই হয়েছিল মেয়ের। তিনিও জামিনে মুক্ত হয়েছেন কয়েকদিন আগেই। 

চলতি বছরের ৩০ জুলাই সিবিআইয়ের কেসে অনুব্রতর জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করার শর্তে জামিন মঞ্জুর করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর ডিভিশন বেঞ্চ। তবে ইডি-র করা কেস চলতে থাকায় জেলমুক্তি হয়নি। অবশেষে সেই মামলাতেও জামিন পেলেন অনুব্রত।