“অমিত শাহের চাকর হয়ে থাকবেন না”, চিঠিতে স্বরাষ্ট্রসচিবকে কড়া বার্তা কল্যাণের
মুখ্যসচিব কেন্দ্রের সঙ্গে সবিনয়ে কথা বললেও সুর চড়িয়েছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লাকে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে লেখেন,"জেড ক্যাটেগরির সুরক্ষাপ্রাপ্ত একজনের উপর হামলার ঘটনায় আপনার দফতর যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জানতে চেয়ে মুখ্যসচিব ও ডিজিপিকে চিঠি পাঠিয়ে তলব করেছে, তাতে আমরা অবাক।"
কলকাতা: আইন শৃঙ্খলা রাজ্যের অধীনে। কোন এক্তিয়ারে রাজ্যের আমলাদের তলব করা হয়েছে প্রশ্নে তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লাকে চিঠি লিখলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার গাড়িতে হামলার ঘটনায় এর আগে রাজ্যের আমলাদের তলব করে চিঠি পাঠায় কেন্দ্র। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই আজ তিন পাতার পাল্টা চিঠি দেন কল্যাণ। তৃণমূল সাংসদের এই চিঠি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, রাজ্য সরকারের তরফে কিন্তু ডেকে পাঠানোর এক্তিয়ার নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা হয়নি। উল্টে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বৈঠকে না থাকার অব্যাহতি চেয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে বলেন,”প্রথমেই আপনাকে জানাতে চাই, ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম পরিচ্ছেদ অনুযায়ী আইন ও শৃঙ্খলা রাজ্যের অধীনে। সেই প্রেক্ষিতে কীভাবে আপনারা দুজন অফিসারকে আলোচনার জন্য ডাকতে পারেন? সংবিধান অনুযায়ী বা অন্য কোন আইনে আপনারা রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন, তা জানাবেন? চিঠি দেখে মনে হচ্ছে আপনারা কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এবং আপনাদের মন্ত্রীর নির্দেশেই, যিনি ভারতীয় জনতা পার্টির একজন রাজনৈতিক নেতা, তার কথাতেই চিঠি পাঠিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করছেন আপনারা।”
জে পি নাড্ডার রাজ্য সফর নিয়ে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,”বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার নিজে জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান। তাকে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও পাইলট কার দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও সঙ্গে রাজ্য প্রসাসনের গাড়ি, সিআরপিএফ বাহিনীর সুরক্ষাও দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় পুলিসকে না জানিয়েই বিনা অনুমতিতে তিনি প্রায় ৩০টি গাড়ি, যাতে বিজেপির পতাকা লাগানো ছিল, তা নিয়ে যাচ্ছিলেন। গাড়িগুলি থেকে ক্রমাগত উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। প্রশ্ন উঠছে, জেড ক্যাটেগরির সুরক্ষাপ্রাপ্ত একজন কী স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়েই অন্যান্য গাড়ি ও মোটরবাইক এবং কয়েকশো সমর্থক নিয়ে আসতে পারেন।”
চলতি মাসের ১০ তারিখ বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার দুদিনের রাজ্য সফরে দ্বিতীয়দিন ডায়মন্ড হারবার যান। বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার পথেই শিরাকোলে তাঁর কনভয়ের উপর হামলা চালায় কিছু দুষ্কৃতী। এই হামলার ঘটনা ও রাজ্যের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আগামী ১৪ ডিসেম্বর দিল্লিতে বৈঠকের যোগ দেওয়ার জন্য মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য পুলিসের ডিজি বীরেন্দ্রকে ডেকে পাঠায় কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: মমতার ভরসা উন্নয়নের মডেলেই, বঙ্গধ্বনি যাত্রা শুরু তৃণমূলের
কেন্দ্রের এই নির্দেশের পর পাল্টা চিঠিতে বৈঠকে না থাকার অব্যাহতি চেয়েছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য। বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতির জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও পাইলট কারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেই কথাও জানান তিনি। সবশেষে তিনি বলেছিলেন,”১৪ তারিখের বৈঠক থেকে রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের অব্যাহতি দেওয়া হোক।”
মুখ্যসচিব কেন্দ্রের সঙ্গে সবিনয়ে কথা বললেও সুর চড়িয়েছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লাকে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে লেখেন,”জেড ক্যাটেগরির সুরক্ষাপ্রাপ্ত একজনের উপর হামলার ঘটনায় আপনার দফতর যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জানতে চেয়ে মুখ্যসচিব ও ডিজিপিকে চিঠি পাঠিয়ে তলব করেছে, তাতে আমরা অবাক।”
কনভয়ে উপস্থিত রাকেশ সিংয়ের প্রসঙ্গে টেনে তিনি চিঠিতে লেখেন,”রাজেশ সিং, যিনি রাজ্যে অপরাধী হিসাবেই পরিচিত। তাঁকে একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে ৫৯টি মামলা এখনও অমীমাংসীত অবস্থায় রয়েছে, তিনি জে পি নাড্ডার কনভয়ে কী করছিলেন? ২০১৯ সালে উত্তর কলকাতায় যখন নির্বাচনী প্রচারে অমিত শাহ এসেছিলেন, এই রাকেশ সিং-ই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। পুলিস প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কেন বিজেপি নেতা ও কর্মীদের কনভয়ের মধ্যে থাকতে দেওয়া হয়েছিল? তারা যাত্রা শুরুর প্রথম থেকেই কেন ভিডিয়ো করছিল? সমস্যা সৃষ্টির জন্য এটা কি বিজেপির পূর্বপরিকল্পিত প্রচেষ্টা ছিল যাতে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের আলোয় বিষয়টিকে তুলে ধরা যায়?”
১১ ডিসেম্বরে কেন্দ্রের পাঠানো চিঠির উল্লেখ করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,” এই চিঠিতে আপনারা তিনজন আইপিএস অফিসারকে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১০ তারিখে তারা সকলেও ঘটনাস্থানের আশেপাশে উপস্থিত ছিলেন। আপনাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট যে, ওই তিনঅফিসারকে ডেকে আপনারা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চান।”
“এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ও ভয়ঙ্কর যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহের নির্দেশে আপনারা সমস্ত আইনকে জলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। আপনারা পরোক্ষে রাজ্যে এমার্জেন্সি জারি করার চেষ্টা করছেন। রাজ্যের সমস্ত আইপিএস ও আইএএস কর্তাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। আইনের উর্দ্ধে কেউ নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বা আপনি, কেউই আইনের উর্দ্ধে নয়।”-বলেও মন্তব্য করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
চিঠির শেষ তিনি বলেন,”সংসদ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে বলে আমি দলের তরফে আপনাদের এই পদক্ষেপের সমালোচনা ও বিরোধিতা করছি। আপনাদের সুবুদ্ধি হোক। অমিত শাহের চাকরের মতো কাজ না করে একজন কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মীর মতোই আচরণ করুন। আমরা আইএএস ও আইপিএস অফিসার সহ সকল সরকারি কর্তাদেরই সম্মান করি , তাই আপনার পদের সম্মান রেখেই অনুরোধ করছি, কোনও রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব নিন।”
আরও পড়ুন: গ্রামপঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্যসাথী থেকে ‘বঞ্চিত’