Cyber Crime: আধার লক করেও নেই রেহাই, প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে কীভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জালিয়াতরা?

Cyber Crime: ফিঙ্গার প্রিন্ট। জমি-বাড়ির রেজিস্ট্রেশন, মোবাইল ফোনের সিমকার্ড কিনতে গেলে বাধ্যতামূলক। আর সেই ফিঙ্গার প্রিন্ট চুরি করে আধার-যোগে অ্যাকাউন্ট সাফ হয়ে যাচ্ছে। এবার প্রতারণার শিকার পূর্ব মেদিনীপুরের দলিল লেখক সমিতির সম্পাদক। রীতিমতো আতঙ্কে জেলার দলিল লেখক থেকে আম-আদমিরা।

Cyber Crime: আধার লক করেও নেই রেহাই, প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে কীভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জালিয়াতরা?
প্রতীকী ছবিImage Credit source: Facebook
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 13, 2023 | 9:47 PM

কলকাতা: মাস-ভর হাড়ভাঙা খাটনির পর আপনার বেতন ব্যাঙ্কে জমা পড়ছে। যদি দেখেন, সেই বেতন আচমকা উধাও। ভাবতে পারছেন কী অবস্থা হবে। কিন্তু এমনই তো হচ্ছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট (Bank Account) থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে টাকা। কারণ, সাইবার দুনিয়ায় ওঁৎ পেতে আছে জালিয়াতরা। নিত্য নতুন কায়দায় আমার-আপনার অ্যাঙ্কাউন্ট ফাঁকা করার ফন্দি আঁটছে। সম্প্রতি টিভি৯ বাংলার এক সাংবাদিক আধার-যোগে জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছিলেন, কী ভাবে আধারের বায়োমেট্রিক তথ্য লক করে, অ্যাকাউন্টের টাকা সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। কিন্তু, সাইবার বিশেষজ্ঞেরা ডালে-ডালে চললে প্রতারকেরা চলছে পাতায় পাতায়! সোজা কথায় প্রযুক্তির আশীর্বাদই এখন প্রতারকদের হাতিয়ার। আধার নির্ভর লেনদেন প্রথাকে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে টাকা! নেপথ্যে বায়োমেট্রিক তথ্য চুরি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হোক কিংবা জমি-বাড়ির রেজিস্ট্রেশন। সব ক্ষেত্রেই আধার লিঙ্ক করা বাধ্যতামূলক। আবার আধারের সঙ্গেই গ্রাহকের বায়োমেট্রিক তথ্য যুক্ত থাকে। আর সেই তথ্য চুরি করেই পকেট ভারী করছে প্রতারকরা। গত কয়েকদিন ধরে টিভি নাইন বাংলায় আধার-ভিত্তিক প্রতারণার শোরগোল পড়ে যায়। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, আধারের ওয়েবসাইটে গিয়ে বায়োমেট্রিক আধার লক করলে জালিয়াতদের হাত থেকে আপনি বাঁচতে পারেন। কিন্তু দু’দিন যেতে না যেতেই দেখা যাচ্ছে, তাতেও স্বস্তি নেই।

AEPS আনলক থাকায় উধাও হচ্ছিল টাকা। টিভি নাইন বাংলার খবর দেখে আধার এনেবেল পেমেন্ট সিস্টেম লক করে দেন প্রতিমা রক্ষিত। তিনি অসমে রেলের হাসপাতালে কর্মরত। তাঁর স্বামী সুতনু রক্ষিত স্কুল শিক্ষক। বাড়ি মুর্শিদাবাদের কান্দিতে। প্রতিমার অ্যাকাউন্ট কানাডা ব্যাঙ্কে। অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার টাকা ছিল। হঠাৎই প্রতিমার অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। ব্যাঙ্কে গিয়ে জানা যায়, টাকা তোলা হয়েছে মালদহ থেকে। AEPS ব্যবহার করে টাকা তোলা হয়েছে। মালদহের বাসিন্দা জিন্নাত আলি নামে এক ব্যক্তি আধার বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে ওই টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ।

প্রতিমা রক্ষিত বলছেন, গত রবিবার ১০ তারিখ সন্ধ্যায় আমার কাছে টাকা তোলার মেসেজটা আসে। আমার আধার কার্ড লক করা আছে। তারপরেও আমার বায়োমেট্রিক কী করে হ্যাক হল বুঝতে পারছি না। কী বলছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞ  সাম্যজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, “ফিঙ্গার প্রিন্টের অ্যাকসেস সব সময় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না। যদি ফিজিকালি ফিঙ্গার প্রিন্ট দিই তাহলে তা কাজ করবে। আমার মনে হয় সেই অ্য়াকসেসই কোনওভাবে পেয়ে যাচ্ছে হ্যাকাররা।” অতএব আধারের পাসওয়ার্ড, ফিঙ্গার প্রিন্ট কোনও ভাবে জালিয়াতিদের হাতে পড়লেই সর্বনাশ। নিমেষেই ফাঁকা হয়ে যাবে আপনার অ্যাকাউন্ট। এমনই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। 

একই ছবি কাঁথিতেও

খানিক একই ছবি দেখা গিয়েছে কাঁথিতেও। ফিঙ্গারপ্রিন্ট জালিয়াতিতে অ্যাকাউন্ট সাফ! জমি-বাড়ির রেজিস্ট্রেশন-সহ বিভিন্ন কাজে ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রয়োজন পড়ে। যার সুযোগ নিচ্ছে সাইবার জালিয়াতরা। প্রতারণার শিকার কাঁথির দলিল লেখক তপন সামন্ত। তাঁর ফিঙ্গার প্রিন্ট চুরি করে হয়েছে অ্যাকাউন্ট সাফ। কোনও ফোন কল কিংবা লিঙ্ক না পাঠিয়েই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা তুলে নেয় জালিয়াতরা। 

কীভাবে হচ্ছে চুরি? 

সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্ভার হ্যাক করে সরকারি নথিপত্রে থাকা ফিঙ্গার প্রিন্ট চুরি করা হচ্ছে। এরপর আধার কার্ডের সহযোগিতায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সাফ করে দিচ্ছে জালিয়াতরা। চক্রের নজরে দলিল লেখকদের অ্যাকাউন্টও। জমি রেজিস্টির সময় সাক্ষী হিসাবে টিপ-সাক্ষর দেন দলিল লেখক। হাতিয়ার করা হচ্ছে সেগুলিও। এদিকে ক্রেতা, বিক্রেতা এবং দলিল লেখকদের সুরক্ষা সুনিশ্চিতে একগুচ্ছ দাবি ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে। দাবি না মানলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন কাঁথির দলিল লেখক সমিতি সম্পাদক তপন কুমার সামন্ত। কিন্তু, প্রশ্ন সাধারণ মানুষের টাকা সুরক্ষিত তাহলে কোথায়? ব্যাঙ্কে-লকারে টাকার সুরক্ষা থাকবে না কেন? মানুষের টাকার সুরক্ষার দায় কার?