Baishakhi Banerjee: ‘বড়দিনের দিন শোভন যেন আরও দিলদার থাকে’, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়
Christmas 2022: আমাদের বাড়িতে প্রতি বছর খ্রিস্টমাসের দিন ছোট্ট একটা পার্টির আয়োজন করি। সেদিন পার্টিতে সবচেয়ে বেশি যে সকলকে মাতিয়ে রাখে, সে হল শোভন।
রেশমী প্রামাণিক
আমাদের সবার জীবনেই সান্তা সাজার সুযোগ থাকে। থাকে সান্তা হয়ে ওঠার সুযোগও। তাঁর বাড়িতে সবার জন্য সান্তা শোভন চট্টোপাধ্যায়। কোনও দিনই শোভনকে আলাদা করে সাজানোর কথা ভাবতে হয়নি। শুধুমাত্র ২৫ ডিসেম্বর নয়। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রতিটি দিনই বড়দিন। তাঁর এবং মেয়ে মহুলের যাবতীয় আবদার পূরণ করেন শোভন, আলাদা করে কিছু চাইতে হয় না। এবারের ক্রিসমাসে ‘প্রিয় সান্তা’র সঙ্গে কী ভাবে হচ্ছে উদযাপন? আড্ডার ঝাঁপি খুললেন বৈশাখী…
কোনও কিছুই অপূর্ণ রাখেন না…
সান্তা হল আবদার অথবা ইচ্ছেপূরণের প্রতীক। সান্তার মধ্যে একটা পজ়িটিভ ভাইব থাকে। শোভন হল সেই সান্তারই প্রতিমূর্তি। মুখ ফুটে না-বললেও ও বুঝে যায় যে, আমি আর মেয়ে কী চাইছি। আমাদের কোনও চাহিদা অপূর্ণ থাকে না। বাড়ির সকলের খেয়াল রাখে শোভন। কে সান্তা সাজবে, কে সেদিন সান্তা সেজে সকলকে চমকে দেবে… সেই প্ল্যান থাকে আমার মেয়ের। আমাদের বাড়িতে প্রতি বছর খ্রিস্টমাসের দিন ছোট্ট একটা পার্টির আয়োজন করি। সেদিন পার্টিতে সবচেয়ে বেশি যে সকলকে মাতিয়ে রাখে, সে হল শোভন।
আমার ক্রিসমাস
ক্রিসমাস আমার কাছে ভীষণ আনন্দের একটা মুহূর্ত। ছোটবেলা থেকেই ২৪ তারিখ রাতে মোজা দিয়ে রাখতাম। বাবা-মায়ের মাধ্যমেই বোধহয় সান্তা ইচ্ছেপূরণ করত। একটা ক্রিসমাসের কথা এখনও মনে আছে: সে বছর ওয়াকম্যানের দারুণ একটা ক্রেজ় ছিল। মনে-মনে একটা ওয়াকম্যান চাইছিলাম। সে বছর বাবা বিদেশ থেকে ক্রিসমাসে একটা ওয়াকম্যান নিয়ে এসেছিলেন। বিয়ের আগে পর্যন্তও মা আমায় ২৪ তারিখ রাতে কিছু না-কিছু দিতেন। উপহার পেতে কার না ভাল লাগে? তবে মহুল আসার পর আমার ক্রিসমাস বদলে গিয়েছে। ক্রিসমাসের আগে নিউ মার্কেট থেকে মহুলের জন্য আমি আর শোভন কেনাকাটা করি। শুধু শোভন নয়, বড় যাঁরা আছেন, যাঁরা আমার সব সময়ের সঙ্গী… তাঁদের সবার জন্য ছোট-ছোট উপহার কিনে আনি। এমনকী ওঁদের বাড়ির খুদে সদস্যের জন্য উপহার পাঠাই মহুলের হাত ধরে। আসলে কাউকে কিছু দিতে পারার যে আনন্দ, তার মতো খুশি আর কিছুতে নেই। আমি চেষ্টা করি মহুলের মধ্যে সেই বোধ গড়ে তোলার। উৎসব সবার। তার আনন্দ যাতে সকলে পায়, সেটাই আমাদের দেখতে হবে। আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে আমরা চেষ্টা করি সকলকে কিছু না-কিছু উপহার দিতে। ২৫ তারিখ আমরাই যেন হয়ে উঠতে পারি ওদের জীবনের সিক্রেট সান্তা।
আমার আর শোভনের জন্যেও সারপ্রাইজ় গিফট রাখে মহুল। বড়দিনের অন্যতম আকর্ষণ হল কেক। এবারেও মেয়ের আবদারে সান্তাক্লজের মতো দেখতে কেক আর্ডার দেওয়া হয়েছে। ক্রিসমাসের পার্টিতে এবার মহুল ঠিক করেছে সবাইকে নিয়ে নাটক করবে। স্ক্রিপট জানি না। এছাড়াও নাচ, গান হয়। সবাইকে নিয়ে দারুণ মজা করে শোভন। বাড়ির গৃহকর্তার প্রতি সবার একটা ভয় থাকে। আর তা-ই সেদিন ও যেন আরও দিলদার থাকে।
ভালবাসা, শ্রম এবং মূল্যবোধ আজ ক্ষয়প্রাপ্ত…
আজকের দিনে আমাদের সমাজে ভালবাসা, মূল্যবোধ এগুলোর গুরুত্ব কমে আসছে। ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত। শোভন যেভাবে আমাদের সবাইকে ভালবাসায় মুড়ে রাখে সান্তার মতো, সেটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা। বালিশের তলায় ঠিক এখনও আমার পছন্দের গিফট রেখে যায়। শোভনকে কী দেওয়া হবে, সেটা আমি আর মেয়ে ঠিক করি। আর আমারটা শোভন। এবছর বড়দিন আমার একটু আগেই শুরু হয়েছে হস্তশিল্প মেলায়। হঠাৎই এক সান্তা এসে আমার হাতে একটা গয়না উপহার দেয়। তারই হাতে তৈরি। জীবনের প্রতিটা দিন এভাবেই এক সান্তার আচমকা উপস্থিতি আমাদের বুঝিয়ে দেয় ভালবাসা এখনও হারিয়ে যায়নি পৃথিবী থেকে। সব কিছুই বিবর্ণ হয়ে যায়নি। আমি চাই সবার জীবনে বড়দিন এমনই খুশি নিয়ে আসুক। সবার জন্য আমার, মহুল এবং শোভনের তরফ থেকে অনেক শুভেচ্ছা।