Bappi Lahiri: সোনার গয়না, রত্নখচিত জ্যাকেট ও সানগ্লাসে নিজস্ব ফ্যাশন সংজ্ঞা তৈরি করেন ডিস্কো কিং! ফিরে দেখা ‘দি বাপ্পি স্টাইল’
মঞ্চে বাপ্পি দা মানেই বাহারি কলার দেওয়া এমব্রয়ডারি পাঞ্জাবি, রত্নখচিত জ্যাকেট, চোখে সানগ্লাস, গলায় ম্যাচিং ওড়না আর অবশ্যই সোনার গয়না...
বাপ্পি লাহিড়ি (Bappi Lahiri) নাম শোনা ইস্তক চোখে ভাসে একটাই ছবি, আপাদমস্তক সোনায় মোড়া এক মানুষ। আর তাঁর দিকে অবাক নয়নে শুধু মেয়েরাই তাকিয়ে নেই, তাকিয়ে পুরো দেশবাসী। সাধারণত সোনার গয়না পরা এবং কেনার পিছনে বিশেষ বদনাম রয়েছে মেয়েদের। কিন্তু সেই ট্রেন্ডকে পুরোপুরি ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন বলিউডের গোল্ড ম্যান (Music Composer and Singer), বঙ্গতনয় বাপ্পি লাহিড়ি। ছেলেরাও যে এভাবে সোনায় নিজেকে সাজাতে পারেন, ছেলেদের জন্যও যে বরাদ্দ থাকে সোনার হরেক গয়না- সেই পথ কিন্তু প্রথম দেখান বাপ্পি। তাঁকে দেখেই সোনার গয়না পরা শুরু করেন অনেক তারকাই। গলায় একাধিক সোনার হার, বাহারি লকেট, হাতের দশ আঙুলেই আংটি, ব্রেসলেট সবই সোনার। এছাড়াও তাঁর সিগনেচার অরান্টে জ্যাকেট ( Ornate jackets) বা রত্নখচিত জ্যাকেটেও থাকত সোনার ছোঁয়া। সোনা তাঁর বড়ই কাছের, বড়ই আদরের। বাপ্পি মনে করেন সোনা তাঁর সৌভাগ্যের প্রতীক। সোনা কেনার পর থেকেই কিন্তু তাঁর একের পর এক গান হিট করে।
কয়েক দশক ধরে বর্ণাঢ্য তাঁর কর্মজীবন। প্রচুর কাজ করেছেন সঙ্গীতশিল্পী এবং সুরকার বাপ্পি লাহিড়ি। সঙ্গীতের মত কিন্তু ফ্যাশনেও ছিল আলাদা স্বতন্ত্রতা। যা আজকের দিনে খুব একটা কিন্তু দেখা যায় না। মঞ্চে বাপ্পি দা মানেই বাহারি কলার দেওয়া এমব্রয়ডারি পাঞ্জাবি, রত্নখচিত জ্যাকেট, চোখে সানগ্লাস, গলায় ম্যাচিং ওড়না আর অবশ্যই সোনার গয়না। ভিড়ের মধ্যে এক্কেবারে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়ে দিতেন তিনি। আর দূর থেকে অনুরাগীরা আদর-আবদার মাখা ভঙ্গীতে বলত,’ওই দেখ বাপ্পী দা আসছে’। গানের মতই তাঁর ফ্যাশনেও মুগ্ধ ছিল আপামর দেশবাসী। বরং ধনতেরাসে বাপ্পি- দা এবার কী কিনলেন তা নিয়েও কিন্তু আগ্রহ নিতান্ত কম ছিল না।
তাঁর গানের মতই ছিল জীবন ছন্দ। সবসময় রঙিন, সতেজ। গান তাঁর ‘জিন্দেগি’। ইন্সটাগ্রামের একাধিক ছবিতে নিজেই ক্যাপশনে জানান দিয়েছেন সে কথা। এথনিক কুর্তা সেট আর রত্নখচিত এই জ্যাকেট ছাড়া কিন্তু কখনই তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। হাতে সব সময় বড় ডায়ালের ঘড়ি।
View this post on Instagram
প্রায় একমাসেরও বেশি সময় ধরে মুম্বইয়ের CritiCare হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ফুসফুসে সংক্রমণ জনিত সমস্যা ছিল। এছাড়াও ছিল একাধিক শারীরিক সমস্যা। গত সোমবার হাসপাতাল থেকে ছুটি হয়েছিল তাঁর। কিন্তু তারপরেই ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার লাহিড়ি পরিবারের তরফে তাঁদের বাড়িতেই ডেকে পাঠানো হয় চিকিৎসককে। এরপর ফের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বাপ্পি লাহিড়িকে। তবে মঙ্গলবার মধ্যরাতে OSA (obstructive sleep apnea)- এর কারণেই মৃত্যু হয় তাঁর। গত এপ্রিলেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তখন মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয় তাঁকে। কিন্তু সেখান থেকে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে শরীর সেই সময়ের পর থেকেই একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেপ্টেম্বর মাসেও তাঁর কন্ঠস্বর হারানোর খবরে তোলপাড় হয়ে যায় গণমাধ্যম। কিন্তু সেই ভুয়ো খবরে তিনি বিরক্তই হয়েছিলেন।
ইয়ার বিনা চাইন কাহান রে-সুরকার এবার অস্তাচলে। কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকতে তাঁর গান, ততদিনই টিকে যাবে দি বাপ্পি স্টাইল।