Alcoholism: ৪ গ্লাস ওয়াইন খেত স্কুলের শিশুরা! টিফিন পিরিয়ডে এই দেশে ছিল আজব নিয়ম

Alcoholic Drink: জানলে অবাক হতে হয় একসময় স্কুলের ক্যাফেটেরিয়ায় ওয়াইন, বিয়ার এবং সাইডার সাজানো থাকত বিক্রির উদ্দেশ্যে!

Alcoholism: ৪ গ্লাস ওয়াইন খেত স্কুলের শিশুরা! টিফিন পিরিয়ডে  এই দেশে ছিল আজব নিয়ম
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 10, 2022 | 7:00 AM

১৯৪৯ সালে ভারতের সংবিধানে অ্যালকোহলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পক্ষে জোর সওয়াল চলছিল। অন্যদিকে ফ্রান্সে ওয়াইন সংস্কৃতি এতটাই তীব্র ছিল যে শিশুদেরও ছিল স্কুলের মধ্যেই ওয়াইন চাখার স্বাধীনতা! বস্তুতঃ, ১৯৫৬ সাল অবধি টিফিন পিরিয়ডের একটি সময়ই নির্দিষ্ট থাকত ওয়াইন পানের জন্য! ওই সময়ের পরেই চিকিৎকরা অনুধাবন করেন, অ্যালকোহল আসলে শিশুদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাচ্ছে। তাই তারপর থেকে বয়স ১৪ বছর হলে তবেই মিলত ওয়াইন পানের অনুমতি। তবে ১৯৮১ সালে ওই নিয়ম বদলে ওয়াইন পানের বয়সের নিম্নসীমা ধার্য হয় ১৬ বছর। তবে ওই বয়সের বাচ্চা একমাত্র বাবা-মায়ের উপস্থিতেই ওয়াইন পান করতে পারতো। একইসঙ্গে ওয়াইন পানের আইনসম্মত বয়স ধার্য হয় ১৮ বছর আর বিয়ার পানের বয়স ২১।

উৎকৃষ্ট শ্রেণীর এবং বৃহৎ ওয়াইন উৎপাদক দেশ হিসেবে ফ্রান্সের সুখ্যাতি রয়েছে। আর ফরাসিরাও কখনওই ওয়াইন প্রীতি নিয়ে লুকোছাপা করেনি। ওয়াইন নিয়ে এই আবেগ এতটাই সমাজের গভীরে প্রোথিত ছিল যে একসময় বাচ্চাদেরও স্কুলে ওয়াইন পান করতে দেওয়া হত!

আধুনিক বিশ্বে অ্যালকোহলের সামান্য বিজ্ঞাপনও একজন ব্যক্তিকে জেলের ঘানি টানাতে পারে। অথচ একসময় স্যুপের মতো ওয়াইন পান করতে দেওয়া হতো বাচ্চাদের! তবে একসময় টনক নড়ে ওদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা বুঝতে পারেন, একদিকে যেমন শিশুদের স্বাস্থ্যের বিপুল ক্ষতি করছে ওয়াইন, তেমনই বড় হওয়ার পর অনেকেই হয়ে উঠছেন অ্যালকোহলে ভয়ঙ্কর আসক্ত!

জানলে অবাক হতে হয় একসময় স্কুলের ক্যাফেটেরিয়ায় ওয়াইন, বিয়ার এবং সাইডার সাজানো থাকত বিক্রির উদ্দেশ্যে! অবশ্য স্কুলের অনুমোদন না পেলে ক্যাফেটেরিয়ায় আলকোহল বিক্রি করা যেত না। বহু অভিভাবকই বাচ্চার জন্য ক্যাফেটেরিয়া থেকে ওয়াইন, বিয়ার বা সিডার কিনতেন ও তাদের পান করতে উৎসাহ জোগাতেন। যে সমস্ত স্কুলে অ্যালকোহল বিক্রি করা হতো না, সেই সব স্কুলের পড়ুয়াদের বাবা-মায়েরা বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানোর আগে ব্রেকফাস্টে ওয়াইন দিতেন।

ওয়াইনে সেইসময় থাকত ৯ থেকে ১০ শাতংশ অ্যালকোহল এবং পাতন প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে অ্যালকোহলের মাত্রা আরও হ্রাস পেত। অর্থাৎ আজকাল যে ওয়াইন লোকে পান করে, তার থেকে বিস্তর তফাত ছিল সেই যুগের ওয়াইনের। আসলে বাবা মায়েদেরও দোষ দেওয়া যায় না। কারণ ওই যুগে জীবাণুমুক্ত পানীয়জলের ছিল বড্ড অভাব। ফলে সকলেই পাতিত ওয়াইন বা সাইডার পান করতেন সাধারণ জলের পরিবর্তে।

১৯৫০ সাল অবধি সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল, অ্যালকোহলের জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে। বাচ্চার ফ্লু হলে তাদের বুক উষ্ণ রাখতে অ্যালকোহল পান করানো হতো। এমনকী স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী ধরে নিয়ে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ওয়াইনের জোরদার প্রচারও চালানো হতো দেশজুড়ে।

একসময় ভুল ধারণা ভাঙল এবং অ্যালকোহল পানের উপর বয়সজনিত নিষেধাজ্ঞা জারি হল।

১৯৫৬ সালে কেন নেওয়া হল এমন সিদ্ধান্ত?

১৯৫৬ সালের এক রিপোর্ট অনুসারে, একটি বোর্ডিং স্কুলে চালানো সমীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ অ্যালকোহন পানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেটা ছিল ১৯৫৬-এর আগস্ট মাস। স্কুলে ১৪ বছর বয়সের নীচের বাচ্চাকে অ্যালকোহল দেওয়ার ব্যাপারেও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। এই বয়সের উপরের বাচ্চারা বাবা-মায়ের উপস্থিতিতে নির্দিষ্ট ও সামান্য মাত্রায় অ্যালকোহল পান করতে পারত।

সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা

১৯৮১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন ফ্রাঁসোয়া মিতেরঁ। এরপরেই বিদ্যালয়ে অ্যালকোহল বিক্রির উপর জারি হয় পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা। বেশিরভাগ শিক্ষকই এহেন সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন। কারণ মদ্যপ ছাত্ররা ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়ত। এছাড়া মদ্যপানের কারণে অনুপস্থিতির হারও ছিল যথেষ্ট বেশি। আবার মাতাল বাচ্চারা অতিসক্রিয় হয়ে ঝামেলাও পাকাতো।

বাচ্চাদের মধ্যে মদ্যপানে আসক্তি কমাতে তাদের দুগ্ধপানে আগ্রহ গড়ে তোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই জন্য নানাবিধ কর্মশালারও আয়োজন করা হয়।

বর্তমানে ফ্রান্সে অ্যালকোহল কেনা ও পানের আইনসম্মত বয়স হল ১৮। ফ্রান্সে যত ধরনের অ্যালকোহল পান করা হয় তার মধ্যে ৫৮ শতাংশই হল ওয়াইন। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের বয়সের বাচ্চারা গড়ে বছরে ১১.৭ লিটার ওয়াইন পান করে! প্রতিবছর অ্যালকোহলের সেবনের কারণে হাজার হাজার প্রাণহানির ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে দেশের সরকারের!