Kolkata Tram: ট্রামযাত্রার ১৫০ বছর উপলক্ষে শহরে ঘুরবে ‘গীতাঞ্জলি’, ‘বনলতা’রা… আপনি দেখতে যাবেন না?
Tramyatra in Kolkata: ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর রুটে প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম পরিষেবা চালু হয়। এই রুটে গড়ের মাঠ ছুঁয়ে যায় ট্রাম। কলকাতার হেরিটেজ ট্রাম রুট।
১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত প্রথম ট্রামের চাকা গড়িয়েছিল কলকাতা শহরে। শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ছিল সেই ট্রামের ১৫০তম জন্মদিন। ‘কলকাতা-মেলবোর্ন ট্রামযাত্রা’-র তরফে আয়োজন করা হয়েছে চলমান ট্রামের উৎসব ‘ট্রামযাত্রা’। ২৪-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন রুটে সুসজ্জিম ট্রাম ঘোরানো হবে। এটাই হয়তো শেষ। শহর থেকে একপ্রকার বিদায় নিতে চলেছে এই ‘শ্লথ গতির যান’। এক দশক আগেও যেখানে শহরের প্রায় ২৫টি রুটে ট্রাম চলত, আগামী দিনে মাত্র চার-পাঁচটি রুটে চলবে এশিয়ার প্রথম পরিবেশবান্ধব যান। মূল আকর্ষণ ধর্মতলা থেকে ময়দান, স্টেশন ভিক্টোরিয়া।
কলকাতা হল এশিয়ার সেই শহর যেখানে প্রথম ট্রাম পরিষেবা শুরু হয়। সালটা ১৯৩০। তখন নাম ছিল জলের গাড়ি। ট্র্যাফিক পুলিশদের পানীয় জল পৌঁছে দিত। ১৮৭৩ সাল। ঘোড়ায় টানা ট্রাম। বেশিদিন চলেনি। ১৯০২ সাল—বিদ্যুৎচালিত ট্রাম। ২০১৯ সাল—এসি ট্রাম। ট্রামের যেমন বিবর্তন হয়েছে, তেমনই কমেছে রুটের সংখ্যাও। এমনকী কমেছে জনপ্রিয়তাও। তবু ট্রাম কলকাতার ঐতিহ্য। দেড়শো বছর পরেও ‘হেরিটেজ’-এর তকমা না পেলেও, ট্রামের এমন রুট রয়েছে, যেখানে ‘শ্লথ গতির যান’ চলতে বাধ্য। সেটাই কলকাতার হেরিটেজ রুট।
এ বছর ট্রামযাত্রার থিম ছিল ‘ঐতিহ্য এবং পরিবেশ বান্ধব পরিবহণ’। ট্রামের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় ‘ট্রামযাত্রা’। শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার এবং শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত একটি ট্রাম চালানো হয়। এখন শহরের ধর্মতলা-গড়িয়াহাট এবং বালিগঞ্জ-টালিগঞ্জ এবং শ্যামবাজার-এসপ্ল্যানেড রুটে ট্রাম চলে। আগামী দিনেও মাত্র চার থেকে পাঁচটি রুটে ট্রাম চলবে। তবে, পর্যটকদের জন্য মূল আকর্ষণ হবে ধর্মতলা থেকে ভিক্টোরিয়া রুট। বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ কাড়তে ধর্মতলা থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত ট্রাম চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে পরিবহণ দফতর। এমনকী ভিক্টোরিয়ার সামনে ট্রামের জন্য ট্যুরিস্ট প্ল্যাটফর্মও তৈরি হচ্ছে।
১৯০২ সালে যখন নবরূপে ট্রাম ফিরে আসে, ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর রুটে প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম পরিষেবা চালু হয়। এই রুটে গড়ের মাঠ ছুঁয়ে যায় ট্রাম। কলকাতার হেরিটেজ ট্রাম রুট। এই ট্রাম রুট যেমন কলকাতাবাসীর কাছে রোম্যান্সের, তেমনই নস্ট্যালজিয়ারও। তাই তো ধর্মতলা থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত ট্রাম চলবে। দেড়শো বছরের ট্রামের বিবর্তন শহরবাসীকে দেখানো হবে সাত-আটটি ট্রামের মাধ্যমে। গড়িয়াহাট থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত এই ট্রাম প্যারেড চলবে ২৪-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রামযাত্রা’। এটিও পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে পারে।
এই ‘ট্রামযাত্রা’য় ট্রামের দেড়শো বছর উপলক্ষে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উপস্থিত রয়েছেন মেলবোর্নের অবসরপ্রাপ্ত ট্রাম কনডাক্টর রবার্তো দি’আন্দ্রেয়া। এই চলমান ট্রাম উৎসবে দেখা প্রায় ১০০ বছরের পুরনো ট্রামও। রবিবার শহরের রাস্তায় বেরোবে সেই ট্রাম। নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোয় পড়ে থাকা সেই ট্রাম এ দিন ঘুরবে শহরের রাস্তায়-রাস্তায়। পাঁচদিন ব্যাপী এই উৎসবে সামিল হতে পারেন আপনিও।
কেমন হবে রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারির ট্রাম প্যারেড? ১৯২০ সালের সময় থেকে যে এক কামরার ট্রাম দিয়ে ধুয়ে দেওয়া হত ট্র্যাক, সেই ট্রামকে সাজানো হবে। সেই সঙ্গে প্যারেডে থাকবে চল্লিশ, ষাট এবং আশির দশকে তৈরি বিভিন্ন ট্রামও। থাকবে রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির শতবর্ষে ‘গীতাঞ্জলি’ নামের বিশেষ ট্রাম। ২০০৫ সালের এক কামরার ট্রাম ‘বলাকা’। জীবনানন্দ দাশের স্মরণে ‘বনলতা’ ছাড়াও গত কয়েক দশকে আর্ট গ্যালারি এবং দেশ ভাগ মিউজ়িয়াম হিসেবে পরিচিত ট্রামগুলিও। এ দিকে, ট্রাম কার্নিভালের মধ্যেই বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে এসপ্ল্যানেড-শ্যামবাজার রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে ট্রাম। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল এই রুট। উৎসবের মধ্যেই ওই রুট চালু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।