IPL 2022: ‘ভিন্টেজ’ ধোনির মঞ্চে জয়ের ফুল ফোটাল শ্রেয়স-রাহানেরা
যে কোনও টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে জয়টা টনিকের মতো কাজ করে। পুরো টিম একটা ছন্দ খুঁজে পায়। গত বারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইকে হারানো আরও বেশি করে তাতিয়ে দেবে শ্রেয়সকে। যতই ক্যাপ্টেন বদল হোক সিএসকের, টিমটা তো এখনও ধোনির।
চেন্নাই সুপার কিংস ১৩১-৫ (২০ ওভারে)
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৩৩-৪ (১৮.৩ ওভারে)
অভিষেক সেনগুপ্ত
আয়াম হেয়ার ফর এমএস ধোনি…!
আপার টিয়ারে এক তরুণী যেন অপেক্ষা করছিলেন। টিভি ক্যামেরা যদি তাঁর বার্তা পৌঁছে দেয় আইপিএল (IPL) দুনিয়ায়। শুধু ওই তরুণী কেন, আনাচেকানাচে ঘোরাফেরা করছিল আর্তি। হলুদ পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল ওয়াংখেড়ে। শিবম দুবে আউট হয়ে ফিরতেই পঁচিশ শতাংশের গ্যালারিতেই বিস্ফোরণ হল। কমলা, নীল, সবুজ, বেগুনি— যে রংয়েই মোহ থাকুক, সবাই যেন হলুদ হয়ে গিয়েছেন শনি-সন্ধেয়। তাজহীন ধোনিকে আরও একবার বলবেন বলে, ‘তোমাকে হৃদয়েই রাখব…!’
নেতা তৈরি হয় না, জন্ম নেয়। ক্রিকেটে অতি ক্লিশে এক শব্দ বন্ধনী। সময় সময় এই সব মর্চে পড়া শব্দেই আস্থা রাখতে ইচ্ছে করে। ধোনির মতো কেউ বোধহয় বিশ্বাস ফিরিয়ে দেন। গত দুটো আইপিএলে রান পাননি। কিন্তু টিমের বিপদ দেখলে ধোনির ভিতরের ‘নেতা’ আজও জেগে ওঠে। গর্জে ওঠে ব্যাট। যেখানে বিশ্বকাপ জিতেছেন, সেই ওয়াংখেড়েতে ১১ বছর পর ৪১-র ধোনি বুঝিয়ে গেলেন, বয়স নয় গুনতে হয় রান। ৩৮ বলে নট আউট ৫০-এ ফেরালেন হেলিকাপ্টার শট। শেষ ১৩ বলে ৩৬ রান দিয়ে করলেন। বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, কেন ক্রিকেট সভ্যতা বলে তাঁকে!
A ZORDAAR performance to get off the mark in #IPL2022! ?#KKR #KKRHaiTaiyaar #CSKvKKR #GalaxyOfKnights #কেকেআর pic.twitter.com/aSdAhtqszW
— KolkataKnightRiders (@KKRiders) March 26, 2022
ধোনি যদি মূল্যবান হাফসেঞ্চুরিটা না করতেন, হয়তো ৮০-ই পার করত না চেন্নাই। কলকাতা নাইট রাইডার্সও হাসতে হাসতে জিতে নিত ম্যাচটা। অবশ্য ১৩২ রান অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলা টিমই তুলে দেবে। কেকেআর ৯ বল বাকি থাকতেই তুলে দিল। চেন্নাইয়ের ১৩১-৫ জবাবে শুরুটা ভালো করেছিল কলকাতা। টেস্ট টিম থেকে বাদ পড়া অজিঙ্ক রাহানে ওপেন করতে নেমে ৪৪ করে গেলেন। ওখানেই ম্যাচটা জিতে গিয়েছিল শ্রেয়স আইয়ারের টিম। ডয়েন ব্র্যাভোর ৩ উইকেট কাজে লাগল না। আইপিএলের প্রথম ম্যাচেই নতুন ক্যাপ্টেনের হাত ধরে নাইটদের জয় এক নতুন যুগের সূচনা হয়ে গেল। তবে, পরীক্ষার মুখে পড়তে হল, বলা যাবে না।
পরীক্ষা শুধু নিলেন ভিন্টেজ ধোনি। দেশের হয়ে অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময় একই ভালোবাসা পেয়েছেন ধোনি। খেলা ছাড়ার পরও। চেন্নাইয়ের হয়ে যখন তাঁকে মাঠে আর দেখা যাবে না, যখন শুধু ডাগআউটে হবে তাঁর জায়গা, তখনও এমএসডি থেকে যাবেন ক্রিকেট জনতার বুকে। কিন্তু যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন সিএসকে-কে, যে সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলেন আইপিএল দুনিয়ায়, সেখানেই থাকবে তো? রবীন্দ্র জাডেজা জমানা শুরুর দিন কিন্তু এই প্রশ্ন উঠে গেল। চোট সারিয়ে টিমে ফিরেছেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়। নতুন বলের মুখে পায়ের নড়াচড়া দেখে বোঝা গেল, ম্য়াচ ফিট হতে কিছুটা সময় লাগবে তাঁর। খাতা খোলার আগেই ডাগআউটে ফিরলেন। ডেভন কনওয়েও (৩) ছন্দে নেই। তিন নম্বরে নেমে রবিন উত্থাপ্পা কিছুটা চেষ্টা করলেন। ২১ বলে ২৮ না করলে সিএসকের স্কোরবোর্ডের হাফসেঞ্চুরি করতে সময় লাগত অনেকটা। অম্বাতি রায়াডুও (১৫) তেমন নজর কাড়তে পারলেন না। শুধু নতুন ক্যাপ্টেন জাডেজা খেললেন সামান্য। কিন্তু ফর্মে থাকা জাডেজা আর চেন্নাইয়ের নতুন নেতা জাডেজার মধ্যে অনেক ফারাক।
যেমন ফারাক গত বারের কেকেআরের সঙ্গে এ বারের কেকেআরের। শ্রেয়সের টিমে অ্যারন ফিঞ্চ, প্যাট কামিন্সরা ছিলেন না। তাঁদের বিকল্প হিসেবে কিন্তু চমৎকার বোলিং করে গেল বেগুনি জার্সির বোলাররা। বিশেষ করে উমেশ যাদব। তিন বছর আগে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। কামিন্স, টিম সাউদিরা থাকলে হয়তো খেলার সুযোগও পেতেন না। কিন্তু প্রথম স্পেলে দুরন্ত পারফর্ম করলেন। মোট ৪ ওভার বল করে ২০ রান দিয়ে নিলেন ২ উইকেট। তার মধ্যে প্রথম ওভারেই ঋতুরাজের উইকেট। বরুণ চক্রবর্তী ও সুনীল নারিনও আঁটোসাঁটো বোলিং করলেন।
কেকেআরের সবচেয়ে পজিটিভ দিক হল তারুণ্য। ক্যাপ্টেন শ্রেয়সের বয়স যতই কম হোক না কেন, তিনি একটা ম্যাচের গতি বুঝতে পারেন। পিচ পড়তে পারেন। আর টসটাও জিততে পারেন। যে কারণে ওয়াংখেড়ের পিচে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত কাজে লেগে গেল।
যে কোনও টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে জয়টা টনিকের মতো কাজ করে। পুরো টিম একটা ছন্দ খুঁজে পায়। গত বারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইকে হারানো আরও বেশি করে তাতিয়ে দেবে শ্রেয়সকে। যতই ক্যাপ্টেন বদল হোক সিএসকের, টিমটা তো এখনও ধোনির।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: চেন্নাই (ধোনি নট আউট ৫০, উত্থাপ্পা ২৮, জাডেজা নট আউট ২৬, উমেশ ২-২০, বরুণ ১-২৩, রাসেল ১-৩৮)। কলকাতা (রাহানে ৪৪, বিলিংস ২৫, রানা ২১, শ্রেয়স নট আউট ২০, ব্র্যাভো ৩-২০, স্ট্যান্টনার ১-৩১)।