Shubho Paul: সালকিয়া থেকে বায়ার্ন মিউনিখ, স্বপ্নের উড়ান শুভর
Bayern Munich: গতকালও শুভ নামের কেউ ভারতীয় ফুটবলে সেলিব্রিটির তাকমা পাননি। বুধবার বায়ার্ন তাদের অনূর্ধ্ব ১৯ টিম ঘোষণা করতেই হইচই পড়ে যায়। ভারতের ফুটবল দুনিয়া থেকে সুনীল ছেত্রী, গুরপ্রীত সিং সান্ধু, সুব্রত পালদের মতো কেউ কেউ ইউরোপের ক্লাবে খেলেছেন। কিন্তু ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাবে খেলার স্বপ্নও দেখেননি। সদ্য সতেরোতে পা দেওয়া শুভর হাত ধরে যেন সেই আশ্চর্য স্বপ্নের শুভমহরত্ হল।
কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
বুট কী জিনিস, জানাই ছিল না তাঁর। কিন্তু গোল কাকে বলে, ভালোই বুঝতেন। বাবা গেঞ্জি কারখানার সামান্য কর্মী। অভাবের সংসারে তবু থাকে স্বপ্নের ঝিকিমিকি। থাকে বলেই কেউ কেউ হঠাত্ চমকে দেন। শুভ পালের (Shubho Paul) মতো। যদি রোডম্যাপ বানানো হয়, সালকিয়া, দেশপ্রিয় পার্ক, দিল্লি আর মিউনিখ শহরকে বাছতে হবে। সীতারাম বোস লেন থেকে হাঁটতে হাঁটতে হাওড়া থেকেই একেবারে বায়ার্ন মিউনিখের (Bayern Munich) অনূর্ধ্ব ১৯ (Under-19) টিমে ঢুকে পড়েছেন তিনি!
View this post on Instagram
গতকালও শুভ নামের কেউ ভারতীয় ফুটবলে সেলিব্রিটির তাকমা পাননি। বুধবার বায়ার্ন তাদের অনূর্ধ্ব ১৯ টিম ঘোষণা করতেই হইচই পড়ে যায়। ভারতের ফুটবল দুনিয়া থেকে সুনীল ছেত্রী, গুরপ্রীত সিং সান্ধু, সুব্রত পালদের মতো কেউ কেউ ইউরোপের ক্লাবে খেলেছেন। কিন্তু ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাবে খেলার স্বপ্নও দেখেননি। সদ্য সতেরোতে পা দেওয়া শুভর হাত ধরে যেন সেই আশ্চর্য স্বপ্নের শুভমহরত্ হল।
কী ভাবে বায়ার্ন মিউনিখ টিমে সুযোগ পেয়েছেন শুভ? ৬৪টা দেশ থেকে ৬৫৪ জন ফুটবলারের ট্রায়াল নেয় বায়ার্ন মিউনিখ। পুরো ট্রায়ালটাই হয়েছিল অনলাইনে। ১২০০-র উপর ভিডিয়ো পোস্ট হয়েছিল। যেখানে বিশ্বের অসংখ্য যুব ফুটবলার তাঁদের স্কিল তুলে ধরেছিলেন। সমস্ত ভিডিয়ো খুঁটিয়ে দেখে বায়ার্নের টেকনিক্যাল টিম ৩০ জনকে শর্টলিস্ট করেছিল। অ্যাকাডেমির কোচেরা, ডেভেলপমেন্ট টিমের সাপোর্টস্টাফরা এরপর আরও খুঁটিনাটি স্কিল, স্ট্রেন্থ, স্ট্যামিনা দেখে শেষ পর্যন্ত বাছেন ১৫ জনের টিম। যাতে সুযোগ পেয়েছেন শুভ। তারাই আগামী ৫-৬ মাস অনুশীলন করবে একসঙ্গে। মেক্সিকোতে ২৮ জুন বায়ার্নের আবাসিক শিবিরে যোগ দেবে শুভ। ১৫ জনের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে বেছে নিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সই করাবে বায়ার্ন মিউনিখ। সেখানেও ঢুকে পড়ার সুযোগ রয়েছে বাঙালি স্ট্রাইকারের।
টিভি নাইন বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে শুভ বললেন, ‘আমি ধাপে ধাপে এগোতে চাই। আগে টিমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চাই। ধীরে ধীরে নিজের উন্নতি করব। তারপর বাকি বিষয় নিয়ে ভাবব।’
শুভর অবিস্মরণীয় উত্থানের গল্প এখন তুমুল চর্চার বিষয় ভারতীয় ফুটবলে। বাংলা গর্বিত হলেও ইস্টবেঙ্গল কিংবা মোহনবাগান থেকে তাঁর উঠে আসা নয়। শুভর উত্থানের পিছনে এক নাইজিরিয়ান কোচ। ময়দান যাঁকে চিমা ওকেরি (Chima Okorie) নামে চেনে। বছর কয়েক আগে সালকিয়াতে বাচ্চাদের কোচিং করাতেন প্রাক্তন ফুটবলার। সঙ্গী তপন কর্মকার। তখনই তাঁদের চোখে পড়ে যান শুভ। পরে সালকিয়া থেকে দেশ্রপ্রিয় পার্কে কোচিং করানো শুরু করলেও শুভকে সঙ্গে রেখেছিলেন চিমা।
সেই দিনের কথা আজ যেন আরও বেশি করে মনে পড়ছে শুভর। বলছিলেন, ‘চিমা স্যার আর তপন স্যার না থাকলে হয়তো ফুটবলার হওয়াপ স্বপ্নপূরণই হত না। বাবা সামান্য কাজ করতেন। তাই বুট ছিল না আমার। সালকিয়ার কোচিং ক্যাম্পে খালি পায়েই খেলতাম। তবে, বড় দাদাদের বিরুদ্ধে গোলও করতাম। চিমা স্যার মোহনবাগানের জার্সি আর বুট দিয়েছিলেন।’
২০১৬ সালে বেঙ্গালুরু এফসিতে ডাক পায়। কিন্তু সেখানে আবাসিক শিবির না থাকায় সুদেবা এফসিতে যোগ দেন শুভ। সেখান থেকেই সুযোগ পান ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ এবং অনূর্ধ্ব-১৬ দলে। দেশের হয়ে দুটো সাফ কাপ, এএফসি কাপ খেলে ফেলেছেন বাংলার স্ট্রাইকার। অনূর্ধ্ব-১৩ আই লিগে ১৩ ম্যাচে ৫৮ গোলও করেছিলেন শুভ। ওই রেকর্ড খানিকটা হলেও বদলে দিয়েছিল শুভর যাত্রাপথ। অনূর্ধ্ব ১৩ লিগে শুভর পারফরম্যান্স দেখে টুইট করেছিলেন জার্মান কিংবদন্তী গার্ড মুলার। সেই বায়ার্নই যে তাঁর ঠিকানা হয়ে উঠবে, সে দিন হয়তো ভাবেননি সালকিয়ার ছেলে। শুধু ভারত নন, পুরো দক্ষিণ এশিয়া থেকে বায়ার্ন টিমে সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
শুভর এই উত্থানের পিছনে দাদা রাজু পালের অবদানও কম নয়। ফুটবলার করার জন্য ভাইকে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন রাজুও। সুদেবা এসির হয়ে গত মরসুমে আই লিগে খেলেছেন। শুধু তাই নয়, ভারতীয় ফুটবলে কনিষ্ঠতম ক্যাপ্টেনও ছিলেন তিনি। সেই শুভই এখন স্বপ্ন দেখছেন বায়ার্ন মিউনিখের সিনিয়র টিমে খেলার।
বাঙালি স্ট্রাইকার বলেন, ‘ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর রবার্ট লেওনডস্কির ভক্ত আমি। বায়ার্ন মিউনিখে গিয়ে লেওনডস্কির সই করা জার্সি নিতে চাই। আর ভারতীয় ফুটবলে প্রিয় সুনীল ছেত্রী। ওর সঙ্গেও কথা বলতে চাই। নিজেকে তৈরি করতে গেলে আরও বেশি ফোকাসড হতে হবে।’
স্বপ্নের খোঁজ কাউকে কাউকে সাফল্যের আকাশ চিনিয়ে দেয়। বায়ার্ন মিউনিখে পা দেওয়া শুভ নিজের দুনিয়াটাই পাল্টে ফেলতে চান!
আরও পড়ুন: কনুইয়ের চোটে নেই উইলিয়ামসন, WTC ফাইনালের জন্য বোলারদের বিশ্রামের ভাবনা