TOKYO OLYMPICS 2020 : হকি সাফল্য, নেপথ্যে চ্যাপেলের দেশওয়ালি কোচ

Tokyo Olympics 2020: মনপ্রীত, সিমরনজিৎ, হার্দিকদের দ্রোণাচার্য রিড না থাকলে হয়তো রূপকথাই রচনা হত না।

TOKYO OLYMPICS 2020 : হকি সাফল্য, নেপথ্যে চ্যাপেলের দেশওয়ালি কোচ
দ্রোণাচার্য গ্রাহাম রিডই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা (সৌজন্যে-গ্রাহাম রিড টুইটার)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 05, 2021 | 3:08 PM

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়

এক অজি কোচের হাত ধরে ডুবতে বসেছিল ভারতীয় ক্রিকেট। গ্রেগ চ্যাপেলের জমানায় দমবন্ধ পরিস্থিতি হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটে। আর সেই অস্ট্রেলিয়ারই এক কোচের হাত ধরে ৪১ বছর পর ভারত পেল অলিম্পিক পদক। তিনি গ্রাহাম রিড। যিনি  টোকিওতে পা দেওয়ার আগেই ঘোষণা করেছিলেন, ‘পদক নিয়ে ফিরব।’

২ বছর আগে ভারতীয় হকি দলের দায়িত্ব নেন। খেলোয়াড় জীবনে ১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রুপো জেতেন। দেশের হয়ে ১৩০ ম্যাচ খেলার রেকর্ড রয়েছে। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার কোচের দায়িত্ব নেন। নেদারল্যান্ডসের সহকারী কোচও ছিলেন। এরপরই তাঁর গন্তব্য ভারতে। একটা ধুঁকতে থাকা, সমালোচনায় বিদ্ধ হওয়া দলের দায়িত্ব নেন রিড। প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন। আর তাতেই আমূল বদলে গেল ভারতীয় হকি দল। কোনও মতে জয় বা ড্রয়ের অভ্যাসে পরিণত হওয়া ভারতীয় দলের মধ্যে সাহস ঢুকিয়ে দেন রিড। বুক চিতিয়ে লড়ার রসদ জোগান। টোকিওয় হরমনপ্রীতদের খেলায় তারই প্রতিফলন দেখা গেল।

হকিতে বিদেশি কোচেরা কখনও সে রকম সাফল্য এনে দিতে পারেনি ভারতকে। হোসে ব্রাসা থেকে মাইকেল নবস, টেরি ওয়ালস হয়ে রোলান্ট অল্টমান্স। বিদেশি কোচেরা কখনই স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারতেন না। হকি ফেডারেশন বরাবরই নাক গলাত। ফেডারেশনের সঙ্গে ঝামেলায় চাকরি গেছিল ডাচ কোচ অল্টমান্সের। গ্রাহম রিডকে নিযুক্ত করার সময় তাই দুর্নাম ঘোচানোর চ্যালেঞ্জ ছিল ফেডারেশনের কাছে। তাই ভারতীয় দলের অন্দরে নাক গলানোর অভ্যাস ছাড়ে হকি ফেডারেশন।

২০১৯ সালে মনপ্রীতদের দায়িত্ব নেন গ্রাহাম রিড। জোর্ড মারিনকে ছেলেদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রানিদের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়। বেঙ্গালুরুর সাইয়ে একই শিবিরে থাকত ভারতীয় হকি দলের ছেলে আর মেয়েরা। কোচিং স্টাফদের সবার উপরে গ্রাহাম রিড। তার নীচে মারিন। এরপর ছেলে ও মেয়েদের বাকি সাপোর্ট স্টাফরা। ভারতীয় হকির সামগ্রিক ছবিটা পাল্টাতে কোচিং স্টাফদের নিয়ে একটা পিরামিড তৈরি করেন রিড। টোকিও অলিম্পিকে পদক জেতার স্বপ্ন দেখার শুরু হয় ঠিক ২ বছর আগে থেকে। যেই লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন রিড, আজকের পর সেই বৃত্তটা অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে। আগামিকাল রানিরা জিতলে হয়তো বৃত্তটা সম্পূর্ণ হবে।

মনপ্রীত, সিমরনজিৎ, হার্দিকদের দ্রোণাচার্য রিড না থাকলে হয়তো রূপকথাই রচনা হত না। তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে তৈরি এই ভারতীয় হকি দল। দীর্ঘ ৪১ বছর পদক না পাওয়ার যন্ত্রণা। ১৯৮০ মস্কো অলিম্পিকের পর কখনও সেমিফাইনালেই ওঠেনি ভারত। সেই ভারতকেই পাল্টে দেন গ্রাহাম রিড। কঠিন মুহূর্তেও কি ভাবে ম্যাচ জিততে হয়, তা আজ মাঠে দেখালেন সিমরনজিৎরা। কিন্তু এই জয়ের পিছনে রয়েছে অনেক অধ্যাবসায়, অনেক পরিশ্রম।

জার্মানিকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পাওয়ার দিনে খেলোয়াড়দেরই কৃতিত্ব দিলেন রিড। তিনি বলেন, ‘দারুণ অনুভূতি। অনেক ত্যাগের পর এই পদক এসেছে। এই দলের খেলোয়াড়রা সেটা করে দেখিয়েছে। কোভিডের সঙ্গে সারা বিশ্ব যখন লড়াই চালাচ্ছিল, তখনও পরিবারের থেকে দূরে ছিল মনপ্রীতরা। সাফল্য এক দিনে মেলে না। অনেক কষ্টের ফসল এটা। সেই কষ্টগুলো সাফল্যের তলায় ঢাকা পড়ে গেছে। এই দলের খেলোয়াড়রা পদক জেতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ভারতে হকির গুরুত্ব কতটা তা আমি জানি। সেই দেশকে পদক জেতাতে সাহায্য করায় নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।’

১৯৯২ বার্সিলোনা অলিম্পিকে জার্মানির বিরুদ্ধে ফাইনালে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। জিতেছিল রুপো। সেই অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন গ্রাহাম রিড। কাকতালীয়ভাবে,  আর এবার সেই জার্মানিকে হারিয়েই রিডের কোচিংয়ে ব্রোঞ্জ জেতে ভারত। একেই বোোধ হয় বলে মধুরেণ সমাপয়েৎ।

অলিম্পিকের আরও খবর পড়তে ক্লিক করুনঃ টোকিও অলিম্পিক ২০২০