Durga Puja 2021: মাটির তালে মনের মতো করে দশপ্রহরণধারিণী গড়েন আরামবাগের পদ্মাবতী
Hoogli: এখনও অবধি প্রায় ৪০টির বেশি দুর্গা প্রতিমাই তৈরি করেছেন পদ্মাবতী। এ বছর অবশ্য বাজারটা খারাপ।
হুগলি: এ এক অন্য মাতৃবন্দনার (Durga Puja 2021) কাহিনী। সংসারের হেঁশেলও ঠেলেন, আবার বছরকার দিনে পুজো এলে হাতে তুলে নেন মাটির তাল, রং তুলি। মনের রঙে রূপ দেন দশপ্রহরণধারিণীর। আরামবাগের বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা পদ্মাবতী দাস। ইনি সেই পদ্মাবতী, যিনি জীবনযুদ্ধে ‘নায়কে’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
পদ্মাবতীর স্বামী শ্রীকান্ত দাস কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাই কোনও কাজই করতে পারেন না। ফলে স্ত্রী-ই সংসারের পুরোপুরি জোয়াল কাঁধে তুলে নিয়েছেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে নিজেই রং তুলি কাদা মাটি হাতে তুলে নিয়েছেন স্বামীর কাজকে চালিয়ে নিয়ে যেতে। এখন পদ্মাবতীও মৃৎশিল্পী। মাটির তাল থেকে মাতৃমূর্তি গড়েন। তাঁর হাতে গড়া মৃন্ময়ীই হয়ে ওঠেন চিন্ময়ী।
বিয়ের পর থেকে প্রায় ৪০ বছর হতে চলল স্বামীর সঙ্গে মূর্তি তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছেন। তখন অবশ্য পুরো দায়িত্ব তাঁর কাঁধে ছিল না। স্বামী মূর্তি গড়তেন। পদ্মাবতী সাহায্য করতেন। এ ভাবেই একদিন তিনিও পটু শিল্পী হয়ে ওঠেন। তবে তখনও জানতে পারেননি তাঁর ভিতরেও এমন শক্তি রয়েছে।
হঠাৎই স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এরপর আর মূর্তি বানাতে পারতেন না। এদিকে স্বামীর চিকিৎসার খরচ, সংসারের খরচ, সন্তানদের পড়াশোনা — ঘরে বসে থাকলে চলবে না, বুঝে গিয়েছিলেন পদ্মাবতী। এরপরই নেমে পড়েন ময়দানে। অসুস্থ স্বামীর, ছেলেদের মুখে দু’বেলার অন্ন জোগাতে পেশা হিসাবে বেছে নেন এই মৃৎশিল্পকেই।
তখন থেকেই একইভাবে কাজ করে আসছেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাঁর পসার। প্রতিমা তৈরির দক্ষ কারিগর হিসেবে পরিচিতি তৈরি করেন নিজের। সারা বছরই প্রায় বিভিন্ন দেব দেবীর মূর্তি তৈরি করেন। অর্ডার আসে জেলার বিভিন্ন এলাকা। সঙ্গে বর্ধমান, হাওড়া ,পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া থেকেও বরাত আসে মূর্তি তৈরির।
এখনও অবধি প্রায় ৪০টির বেশি দুর্গা প্রতিমাই তৈরি করেছেন পদ্মাবতী। এ বছর অবশ্য বাজারটা খারাপ। মায়ের কাছে কাজ শিখেছেন দুই ছেলেও। পড়াশোনাও করেছেন। এখন দুই ছেলের বউকেও পদ্মাবতী নিজের হাতে কাজ শিখিয়ে নিয়ে প্রতিমা তৈরি করার কারিগর বানিয়ে নিয়েছেন।
ছেলে, বউমারাও শাশুড়ির সঙ্গী। পাশে থাকেন শক্তিরূপা এই মায়ের। তবে এবার পদ্মাবতীর মুখে হাসি নেই। কপালে পড়েছে একরাশ চিন্তার ভাঁজ। কারণ, এই মহামারী করোনা! মৃৎশিল্পকে প্রভাবিত করেছে সে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পদ্মাবতী মহাজনের কাছ থেকে বহু টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসার কাজে লাগিয়েছেন। প্রতিমা তৈরির জন্য যে সমস্ত সরঞ্জাম লাগে অর্থাৎ কাঠ, খড়, দড়ি, রং, কাপড়, ঠাকুরের সাজ সহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি।
কিন্তু যে ভাবে আগের বছর ঠাকুরের অর্ডার পড়েছিল, এ বছর সে তুলনায় অনেকটাই কম হয়েছে। ভিন জেলার ঠাকুরের অর্ডার এই বছর খুবই কম। ফলে মহাজনের ঋণ কী ভাবে শোধ হবে সে চিন্তায় দিন কাটছে। অভিযোগ সরকারি সাহায্য তিনি কখনও পাননি। তাই সরকার যদি এই মৃৎশিল্পীদের পাশে দাঁড়ান তাহলে তাঁরা এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ভুরশুভার মানিক রাজার বাড়িতে খেলতে আসতেন ছোট্ট গদাই