কাট কালচার চলছে বাংলায়, পদ্মই আনবে আসল পরিবর্তন : মোদী
এদিন তাঁর বক্তৃতার সিংহভাগই জুড়ে ছিল সিন্ডিকেট রাজ, তোলাবাজি ও দুর্নীতি প্রসঙ্গ। পুরনো অস্ত্রেই আরও একবার নতুন আঙ্গিকে শাসকশিবিরকে বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী।
হুগলি: নির্বাচনের আগে বারবার বাংলায় আসবেন বলে অসমের সভা থেকেই হুঙ্কার ছেড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বাংলা যে তাঁর কাছে এখন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তারও আগে আঁচ মিলেছিল সকালে বাংলা লেখা টুইটেও। হুগলির মাটিতে পা রেখে বাংলা ভাষাতেই বলা শুরু করলেন মোদী। ডানলপ গ্রাউন্ডের জনসভায় দাঁড়িয়ে মোদী ((PM Narendra Modi in Dunlop) বললেন, “তারকনাথ, জগন্নাথ দেবকে আমার প্রণাম। হুগলির পুণ্যভূমিতে এসে আমি ধন্য।” প্রত্যয়ী নমোর গলায় আরও একবার শোনা গেল ‘বাংলায় আসল পরিবর্তনের’ ডাক। বাঙালির মন জয়ের চেষ্টায় কোনও খামতিই রাখতে চাইলেন না তিনি। তবে এ দিন তাঁর বক্তৃতার সিংহভাগই জুড়ে ছিল সিন্ডিকেট রাজ, তোলাবাজি ও দুর্নীতি প্রসঙ্গ। শাসক শিবিরকে বিঁধতে পুরনো অস্ত্রেই শান দিলেন নরেন্দ্র মোদী।
দক্ষিণেশ্বর-নোয়াপাড়া মেট্রো প্রকল্পের পরিবর্ধিত অংশের উদ্বোধন করতেই সোমবার বাংলায় আসেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে ছিল আরও একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন কর্মসূচি। তবে তার আগে ডানলপ ময়দানে জনসভা করেন নরেন্দ্র মোদী। সেখান থেকেই তোলাবাজি প্রসঙ্গে একের পর এক বাণ ছোড়েন তিনি।
নরেন্দ্র মোদীর অভিযোগ, “তৃণমূল সরকারের আমলে ঋষি অরবিন্দ, রাসবিহারী বসুর পবিত্র ভূমি সিন্ডিকেটের আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে। সিন্ডিকেটের হাতে বাংলাকে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন একটা ঘর ভাড়া পেতে গেলেও কাটমানি দিতে হয়। সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া ঘর ভাড়াও পাওয়া যায় না।” এই প্রসঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “অনেকেই বাংলায় বিনিয়োগ করতে চান। বিদেশে যখন প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে দেখা হয়, তখন ওঁরা সকলেই দেশের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে যোগদানের কথা বলেন। যত দিন সিন্ডিকেট থাকবে, বাংলার উন্নতি হবে না।” মোদী স্লোগান তোলেন, ‘এখন বাংলায় কাট কাট কাট কা কালচার চলছে।’
দুর্নীতি প্রসঙ্গেও শাসকশিবিরের নেতা কর্মীদের আক্রমণ শানিয়ে মোদী বলেন, “বাংলার উন্নতির সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। কৃষক ও গরিবের পয়সা তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে। যে কারণে তৃণমূলের নেতাদের প্রতিপত্তি বেড়ে চলেছে, আর সাধারণ মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বাংলার মানুষের অধিকার এখানকার সরকার ছিনিয়ে নিয়েছে। দরিদ্র পরিবার আয়ুষ্মান ভারতের আওতায় ৫ লক্ষ টাকার সুবিধা আজও পাননি।”
উল্লেখ্য, তোলাবাজি প্রসঙ্গে মোদীর মতো বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বও সরব। ‘ভাইপো’ সম্বোধন করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রাও। যদিও পাল্টা দিয়েছেন অভিষেকও। তিনিও চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, “যদি তোলাবাজির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমি গলায় দড়ি দিয়ে দেব।” ঘটনাচক্রে রবিবার অভিষেকের বাড়িতে সিবিআই আধিকারিকদের যাওয়া ও তাঁর স্ত্রী ও শ্যালিকাকে নোটিস দেওয়াকে ঘিরে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। যদিও এদিন সে প্রসঙ্গে লক্ষ্যণীয়ভাবে একটি শব্দও ব্যয় করতে দেখা গেল না মোদীকে।
মোদী গলায় এ দিন শোনা যায় বাংলার জুট শিল্পীদের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “হুগলি নদীর দুই তীরে শিল্প ছিল। এখন বাংলার শিল্পের কী অবস্থা, তা সবাই জানে। বাংলার জুটমিল দেশের অধিকতর চাহিদা মেটাত। এখন জুটমিলগুলোর কী অবস্থা। কেন্দ্র জুট শ্রমিকদের জন্য বিশেষভাবে চিন্তা করছে। পাটশিল্পকে বাঁচাতে কেন্দ্র বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে। আলু চাষিদেরও কী অবস্থা, তা কারোর অজানা নয়।”
মোদীর কটাক্ষ, “আগে পূর্ব ভারতের লোকগীতিতে বলা হত, বাড়ির ছেলেরা কাজের জন্য কলকাতায় গিয়েছে। ফেরার সময় উপহার নিয়ে আসবে।” কথাপ্রসঙ্গেই মোদী বলেন, “এখন সব উল্টে গেছে। এখন কাজের জন্য মানুষকে ভিন রাজ্যে যেতে হচ্ছে।” অর্থাৎ বাংলায় কর্মসংস্থানের বেহাল চিত্রটাই তুলে ধরলেন তিনি।
বাংলায় তোষণের রাজনীতি চলছে বলে সুর চড়ান মোদী। তিনি বলেন, “বাংলা বহু মনীষীর জন্ম দিয়েছে। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম ভবনের রক্ষণাবক্ষণে নজর দেয়নি কেউ। বাংলার গৌরবের ক্ষেত্রে অন্যায় হয়েছে। দেশভক্তির বদলে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি হয়েছে। ভোটব্যাঙ্কের জন্য তোষণের রাজনীতি হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: ‘ভাঙড় আমি ছাড়ব না’, সেই পুরনো মেজাজে আরও বেশি ‘আত্মপ্রত্যয়ী’ আব্বাস
মোদী সুর চড়ান এতদিনে কোনও রাজনৈতিক দলই বাংলার উন্নয়নে মন দেয়নি। তিনি বলেন, “বাংলার উন্নয়নই কেন্দ্রের লক্ষ্য।” বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আগাম অভিনন্দন জানান তিনি, সঙ্গে দেন ‘আসল পরিবর্তন’এর ডাক।