Kali Puja 2023: ‘এবার বাজি না ফাটানোর আবেদন কেউ কি শুনবে?’, আতঙ্কের প্রহর গোনা শুরু

Sound Pollution: কারও বাড়িতে রয়েছে দুধের সন্তান, কারও বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। কেউ আবার হার্টের রোগী বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্য়ায় ভুগছেন। বাড়ির পাশে দুম-দাম চকোলেট বোমা ফাটলে কী করবেন তাঁরা! সেই ভেবেই রাতের ঘুম উড়তে শুরু করেছে অনেকের।

Kali Puja 2023: 'এবার বাজি না ফাটানোর আবেদন কেউ কি শুনবে?', আতঙ্কের প্রহর গোনা শুরু
প্রতীকী ছবিImage Credit source: Facebook
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 08, 2023 | 9:39 PM

কালীপুজোয় কি বাংলায় আরও বাড়বে শব্দ-দৈত্যের তাণ্ডব? এবার আর ৯০ ডেসিবেল নয়, ১২৫ ডেসিবেল পর্যন্ত কান ফাটাতে পারবে শব্দবাজি। বাজি-পটকায় শব্দ-তাণ্ডবের ঊর্ধ্বসীমা এবার আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কালীপুজোর মুখে তাই আবার উদ্বেগ বাড়ছে আম জনতার মনে। কারও বাড়িতে রয়েছে দুধের সন্তান, কারও বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। কেউ আবার হার্টের রোগী বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্য়ায় ভুগছেন। বাড়ির পাশে দুম-দাম চকোলেট বোমা ফাটলে কী করবেন তাঁরা! সেই ভেবেই রাতের ঘুম উড়তে শুরু করেছে অনেকের। অনেকের বাড়িতে আবার পোষ্যও রয়েছে। ওই ‘অবলা’দেরই বা কী হবে!

সুতপা দাস, প্রধান শিক্ষিকা, জলপাইগুড়ি সুনীতি বালা সদর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়

আমার বাড়িতে বয়স্ক মা আছেন। পোষ্য আছে। আমি নিজে নার্ভের রোগী। যখন ৯০ ডেসিবেল ঊর্ধ্বসীমা ছিল, তখনই শারীরিকভাবে আমি খুব অসুবিধা বোধ করতাম। আমার পোষ্যরাও অসুবিধার মধ্যে পড়ত। আমার নিজেরই বুক ধড়ফড় করত। বাচ্চা দু’টিকে (পোষ্যদের) ওষুধ খাইয়ে রাখতে হত। কী ভেবে এই শব্দের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন করা তো আমার সাজে না। তবে যাঁরা বাজি ফাটাবেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ রইল… তাঁরা যেন আমাদের মতো মানুষের কথা ভেবে আগের ঊর্ধ্বসীমার মধ্যে থেকেই বাজি ফাটান। কিংবা যদি আরও কমিয়ে আনা হয় সম্ভব হয়, সেটাই করুন। দিল্লিতে দূষণের কী অবস্থা, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। শুধু শব্দদূষণ নয়, পরিবেশ দূষণও হচ্ছে এভাবে বাজি ফাটানোর ফলে। সব দিক মাথায় রেখে আমাদের একটু সংবেদনশীল হওয়া ভীষণভাবে দরকার।

শান্তনু বসু, ব্যবসায়ী

বাড়িতে আমার বয়স্ক বাবা আছেন। ওনার বয়স ৮৪ বছর। হার্টের রোগী। বিভিন্ন জায়গায় শুনছি, শব্দের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতদিন যে ৯০ ডেসিবেল ছিল, তাতেই বাবার খুব অসুবিধা হত। মহালয়ার রাতে হোক, কিংবা আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠানেও শব্দবাজি ফাটানোর চল হয়ে গিয়েছে, এসবে বাবার খুবই সমস্যা হয়। এই ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করে দেওয়ার কোনও মানে খুঁজে পাচ্ছি না। এতে তো শব্দবাজির প্রকোপ আরও বেড়ে যাবে। শুধু আমার বাবাই নন, আশপাশে আরও অনেক বয়স্ক মানুষ আছেন… যাঁদের বুকে পেসমেকার বসেছে, যাঁরা গুরুতর অসুস্থ, তাঁরা তো আরও সমস্য়ায় পড়ে যাবেন। এটা কেমন করে বেড়ে গেল, সেটা ভেবে খুব অবাক লাগছে। আমরা চাই, শব্দবাজি একেবারে নিষিদ্ধ হয়ে যাক। আতসবাজি, তুবড়ি বা যেগুলি আকাশে গিয়ে হালকা শব্দে ফাটে, আনন্দ করার জন্য সেগুলি ফাটানো হোক।

শুভব্রত ভৌমিক

আমার বাড়িতে তিন মাসের ছোট্ট সন্তান রয়েছে। শব্দবাজি এমন একটা জিনিস, যা সব সময় অন্যের অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে ভয়ঙ্কর আওয়াজ হয়, তাতে একজন ফাটালে, আশপাশের পাঁচজনকেও তা সহ্য করতে হয়। কারও বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে, কারও বাড়িতে বয়স্ক লোকজন রয়েছে। শুধু ভারতে নয়, দেশের বাইরেও পরিবেশ রক্ষার জন্যই এটিকে একটি নির্দিষ্ট ডেসিবেলের মধ্যে রাখা আছে। সেই ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দিলে, অসুবিধা তো হবেই। আগের ঊর্ধ্বসীমা নিশ্চয়ই একটি চিন্তাভাবনা করেই রাখা হয়েছিল। এটা সেই জায়গায় থাকলেই ভাল হত। এখন যদি আমি কাউকে বলতে যাই, আমার বাড়িতে বাচ্চা আছে… সে তখন বলবে এটা তো সরকার অনুমোদিত। আমি তো তখন তার সঙ্গে বিরোধিতা করতে পারব না। মহালয়ার সময়েও বাজি ফাটানোর চোটে আমার সন্তানকে নিয়ে সারারাত ঘুমোইনি। বাজি ফাটলেই জেগে উঠছিল। বার বার গিয়ে বারণ করছিলাম, বাড়ির কাছে বাজি না ফাটানোর জন্য। কিন্তু এভাবে কতজনকে বলব! দশ জনের মধ্যে হয়ত দু’জন শুনল। কিন্তু বাকি আট জন?