Landslide: ‘রাক্ষুসে’ গঙ্গা! জলস্তর কমতেই বাড়ছে ভাঙন, নদীবাঁধেও ধরেছে ফাটল, ডুবতে পারে গোটা একটা গ্রাম

Samserganj: এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার কথা ব্লক উন্নয়ন আধিকারিককে বলা হয়েছে। এছাড়া বিধায়ককেও লিখিত দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধ করা যাবে না।

Landslide: 'রাক্ষুসে' গঙ্গা! জলস্তর কমতেই বাড়ছে ভাঙন, নদীবাঁধেও ধরেছে ফাটল, ডুবতে পারে গোটা একটা গ্রাম
গঙ্গায় ডুবেছে জমি-বাড়ি, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 09, 2021 | 2:59 PM

মুর্শিদাবাদ: জলস্তর কমলেও অব্যাহত গঙ্গার ভাঙন (Landslide)। সোমবার রাত থেকে ফের গঙ্গা গিলছে জমির পর জমি। ভাঙনের জেরে সামশেরগঞ্জের (Samserganj)  উত্তর চাচণ্ড গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নদী ভাঙনের জেরে বেশ কিছুদিন ধরেই সমস্যায় পড়েছেন গঙ্গা তীরবর্তী এলাকার মানুষ। শুষ্ক আবহাওয়ায় নতুন করে গঙ্গার ভাঙন শুরু হওয়ায় ফের বিপদের মুখে গ্রামবাসী।

চাচণ্ড গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গঙ্গার তীরে দীর্ঘদিন ধরে থাকা বন্যাপ্রতিরোধক মাটির তৈরি বাঁধে গভীর ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের কিছু অংশ তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গা গর্ভে। আর এতেই বিপদ দেখছেন সাধারণ মানুষ। কারণ, ওই ফাটল ক্রমে বাড়তে থাকলে ভাঙনের গ্রাসে বাড়িঘর হারাতে হতে পারে এলাকাবাসীর।

নদীবাঁধে ওই ফাটলের জেরে ইতিমধ্যেই গঙ্গা তীরবর্তী দুটি স্কুল জলে ডোবা কেবল সময়ের অপেক্ষা। ভাঙনের জেরে ফাটল বৃদ্ধি হলেই আর দুই একদিনের মধ্য়েই আস্ত দুটো স্কুল চলে যাবে জলের তলায়। শুধু তাই নয়, শেষ কয়েকদিনে গ্রামের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে গঙ্গা। এরকম চলতে থাকলে ডুবে যেতে পারে গোটা গ্রাম। যদিও, নদীবাঁধে ফাটলের জেরে  বাঁধের উপর দিয়ে যাতায়াত আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ফাটলে বালির বস্তা পুরে দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ করা হোক।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমাদের বাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। জমি তলিয়ে যাচ্ছে। বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ বানিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্ত তাও কতটা চলবে জানিনা। সরকারের কাছে আর্জি দ্রুত বাঁধ তৈরি হোক। যাতে সন্তান নিয়ে আমরা নিরাপদে থাকতে পারি।” এক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে প্রায় আটটি বাড়ি। তলিয়ে গিয়েছে রাস্তা। প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অন্য এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার কথা ব্লক উন্নয়ন আধিকারিককে বলা হয়েছে। এছাড়া বিধায়ককেও লিখিত দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধ করা যাবে না। কোনওরকমে ঠেকনা দেওয়াই কেবল  সম্ভব। এইভাবে বেশিদিন টানা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের আবেদন, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার দ্রুত এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন।

কিছুদিন আগেই সামশেরগঞ্জের ধানঘড়া গ্রামে প্রায় প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ মিটার এলাকা গঙ্গা ভাঙনে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। ডুবে গিয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। বেশ কিছু এলাকার জমি গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে ভাঙন রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক প্রশাসন।

গত মাসেও ভয়াবহ অবস্থা হয় সামশেরগঞ্জে। একের পর এক বাড়ি গিলতে শুরু করে গঙ্গা। একাধিক গ্রামের চাষের জমি চলে যায় নদী বক্ষে। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন বহু মানুষ। এরপরও রক্ষে মেলেনি। সামশেরগঞ্জে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভাঙন শুরু হয়। প্রচণ্ড ভাঙন হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দানা বাঁধে। বারবার তারা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন যেন কোনও পদক্ষেপ করা হয়। কারণ এই ভাঙন ঠিকমতো প্রতিরোধ করা না হলে ঘর-বাড়ি জমি সব গঙ্গায় তলিয়ে যেতে শুরু করবে। নিঃস্ব হয়ে যাবেন তাঁরা।

এর আগে সামশেরগঞ্জে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। ৫০০-র বেশি পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছিলেন প্রায় ৭০ মতো পরিবার। কিছুদিন আগে সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন গোপালপুরের ভাঙন পরিস্থিতি দেখে যান। কিন্তু গৃহহারাদের পুনর্বাসন বা ত্রাণের কোনও ব্যবস্থাও করা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।

কিছুদিন আগে শবদাহের ঘাটও ভাঙনের কবলে পড়ে। প্রতাপগঞ্জ মহেশতলার শবদাহ ঘাট ভেঙে পড়ে। প্রায় ১৫টি গ্রামের শবদাহ এই ঘাটের উপর নির্ভরশীল। শবদাহ চুল্লিটিকে ভাঙনের কবল থেকে বাঁচাতে বালির বস্তা ফেলা হয়। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা করা যায়নি।

আবারও  নতুন করে গঙ্গার গ্রাসে সামশেরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা। আলোর উৎসবে যখন গোটা বাংলা মেতে উঠেছিল, তখন প্রমাদ গুনেছেন ধানঘড়া, দুর্গাপুর, শিবপুরের মানুষেরা। মাথার উপর থেকে ছাদটুকুও হারানোর আশঙ্কায় নিষ্পলক রাত কাটছে মানুষগুলোর। প্রশাসন তৎপর হয়ে এগিয়ে না গেলে কোনও ভাবেই বছরকার এই ভাঙন রোখা সম্ভব নয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

আরও পড়ুন: BJP: ভগবানপুরে দলীয় কর্মী খুনে সিবিআই তদন্তের দাবি, ১০ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক বিজেপির