বেজেছে বিদায় ঘণ্টা। দশমী থেকেই বিষাদের সুর কৃষ্ণনগরে (Krishnanagar)। তবে এখনও যেন উৎসবের রেশ কাটেনি। একাদশীতেও দেখা গেল সেই ছবি। সারা শহর জুড়ে প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫০ টি পুজো হয়। তারমধ্যে চাষাপাড়ার বুড়িমার (Jagaddhatri Puja in Krishnanagar) পুজো সবচেয়ে প্রাচীন।
লোকমুখে প্রচলিত বুড়িমা বড়ই জাগ্রত, তাঁর কিছু চাইলে তিনি ফেরান না। দূর দুরান্ত থেকে বহু মানুষ মানত করে পুজো দেন বুড়িমাকে। দশমীতে বহু প্রতিমার নিরঞ্জন হলেও একাদশীতেও চলছে নিরঞ্জন পর্ব। মনে বিষাদের মেঘ নিয়ে সকাল থেকেই বুড়িমার নিরঞ্জনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল কৃষ্ণনগরবাসী।
এবছর বুড়িমার পুজো ২৫০ বছরে পা দিল। কথিত রয়েছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কোনও একসময় এই পুজোর খরচ ও ব্যয়ভার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি বুঝে পাচ্ছিলেন না কীভাবে এই পুজোর বিপুল খরচ বহন করবেন। তারপর চাষাপাড়ার লেঠেলরাই মায়ের পুজো শুরু করেন। সেই থেকে আজও প্রথা মেনে চলে আসছে পুজো।
দুর্গাপুজোর বিজয়া দশমীর পর সারা বাংলার মানুষের যখন মন খারাপ, ঠিক তখনই ফের উৎসবে মাততে কোমর বেঁধে তৈরি হয় কৃষ্ণনগরবাসী। জগদ্ধাত্রী পুজোই রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শহরের প্রধান শারদোৎসব। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্নে পাওয়া দেবী জগদ্বাত্রী। তাঁর হাত ধরেই পুজোর প্রচলন। থিম নয় কৃষ্ণনগরের পুজোর প্রধান চাবিকাঠি ঐতিহ্য এবং সাবেকিয়ানা৷
তবে কৃষ্ণনগরের পুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ভাসান৷ সারারাত লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে শহরের রাজপথে। বিশাল শোভাযাত্রা নিয়ে কাঁধে করে ঠাকুর ভাসানের এই প্রথা কৃষ্ণনগরের অন্যতম প্রধান ঐতিহ্য৷ গত দু'বছর করোনার কারণে এই সাঙ বন্ধ করেছিল প্রশাসন। তার বিরুদ্ধে গোটা শহর নেমেছিল আন্দোলনে। এবছর পরিস্থিতি খানিক স্বাভাবিক হতেই ফের পুরোনো ছন্দে শহরের ঐতিহ্যবাহী ভাসান কার্নিভাল।
দুদিন ধরে চলে ভাসান। প্রথম দিনের সাঙের ভাসান এই পুজোর ঐতিহ্য সংস্কৃতি৷ বেয়ারাদের কাঁধে চেপে ঘাটে যায় প্রতিমা। প্রথম দিন শহরের প্রধান পুজোগুলির সাঙে বিসর্জন হয়। দ্বিতীয় দিন অন্যান্য বারোয়ারী ক্লাবের ভাসান হয় গাড়িতে৷ সর্বশেষ বিসর্জন হয় বুড়িমার৷ রাজবাড়ি ঘুরে সব ঠাকুর পৌঁছয় ঘাটে৷
প্রথমদিনের বিসর্জনে সমস্ত প্রতিমা নিরঞ্জনের পর সবশেষে বেয়ারাদের কাঁধে চেপে, সর্বাঙ্গে সোনা, রুপো, হিরের গয়না পরেই নিরঞ্জনের পথে এগিয়ে যান বুড়িমা। এবারে প্রায় ৭ কেজি সোনা দিয়ে সাজানো হয়েছিল বুড়িমাকে।
বুড়িমার বোন ছোট মা রাজবাড়ি প্রদক্ষিণ করে ঘাটে যাওয়ার সময় চাষা পাড়ার বুড়িমা যান রাজবাড়ির পথে। তারপর বিরাট শোভাযাত্রা মিছিল নিয়ে বুড়িমা যান ঘাটে। সেই ঘাটেই নিরঞ্জনের আগে খোলা হয় মায়ের সমস্ত গয়না।