Durga Puja 2021: কারাগারের অন্ধকারেও উৎসবের আলো, নাইট ল্যাম্প দিয়েই ঝাড়বাতি বানাচ্ছেন বন্দিরা
Krishna Nagar jail: অনেকক্ষেত্রে পুনরায় ব্যবহার করে মণ্ডপ সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছেন বন্দিদের অনেকে। চায়ের কাপ, চাটাই ও নাইট ল্যাম্প ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে বিশাল ঝাড়বাতি।
প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: স্বাভাবিক জীবন চর্চা বিঘ্ন করেছে করোনা। কিন্তু তা থেকে তো আর বাদ পড়তে পারে না বাংলার প্রধান উৎসব! পাঁচিল ঘেরা জীবন হলেও উৎসবে সামিল হলে হয়তো কিছুটা আনন্দে থাকা যায়। আর তাই উমা আবাহনে ব্যস্ততার অন্ত নেই সংশোধনাগারের (Jail) বাসিন্দাদের। শারদ উৎসবের আস্বাদ চেটেপুটে উপভোগ করতে তাই সেইসব বাসিন্দারাই হাত লাগিয়েছেন সংশোধনাগারকে সাজিয়ে-গুছিয়ে তুলতে। ঘটনাচক্রে, সংশোধনাগারটি কারামন্ত্রী এলাকার।
করোনা আবহে বহির্জগতের বিধিনিষেধকে সঙ্গী করেই পুজোর আয়োজন হয়েছে। তার ব্যতিক্রম নয় কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধনাগার। আয়োজনের সবটাই করছেন সেখানে দিনরাত গুজরান করা মানুষেরা। আর প্রয়োজন অনুযায়ী সামগ্রী সরবরাহ করছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। আর সেইসব মূলত বেশিরভাগ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অংশ। অনেকক্ষেত্রে পুনরায় ব্যবহার করে মণ্ডপ সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছেন বন্দিদের অনেকে। চায়ের কাপ, চাটাই ও নাইট ল্যাম্প ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে বিশাল ঝাড়বাতি। থার্মোকলকে নানাভাবে টুকরো করে তার সঙ্গে আঠা দিয়ে নানা কাগজ জুড়ছেন শিল্পী ও সহকারী শিল্পী বন্দিরা। তাতে থাকছে করোনা, পরিবেশ ও জনজীবনের সঙ্গে থাকা নানা বিষয় কেন্দ্রিক সচেতনতার বার্তা। যা পুজো প্রাঙ্গণকে শোভিত করার সঙ্গে বন্দি থেকে কর্মী বা আধিকারিক-সকলকেই সচেতন করবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। নানা ফুলের তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে ফেলে দেওয়া আলুর বস্তা।
উৎসবের দিনগুলিতে সাড়ে ১৩০০ বন্দির পাতে পড়বে নানা স্বাদের খাবার। তা সে সকালের টিফিন বা দুপুর কিংবা রাত হোক- সবসময়েই ভিন্ন খাবারের স্বাদ উপভোগ করবেন বন্দিরা। কাকভোরের আগেই রান্নার আয়োজনে শুরু করবেন তাঁরাই। সপ্তমী থেকে দশমী-চারদিনের তালিকায় রয়েছে দই কাতলা, আলু পটলের রসা, ছেচড়ার তরকারি। থাকবে চিকেনও, রুই মাছের কালিয়া। অষ্টমীতে খিচুড়ি, পায়েসের স্বাদ উপভোগ করবেন বন্দিরা। খাদ্য তালিকায় থাকবে কেক, ঘুগনি, পাউরুটি, লাড্ডু, মিষ্টি আর সঙ্গে বিভিন্ন রকমের সবজি, ডাল, চিপস, চাটনিও থাকবে।
কোথা থেকে আসবে এত কিছু? পুজোর দিনগুলিতে নানান স্বাদের খাবারের বন্দোবস্তের জন্য মাস দেড়-দুয়েক ধরে বরাদ্দ খাবার থেকে কেটে রাখার জন্য বন্দিরাই আবেদন করেন কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই আবেদনে সাড়াও দেন কর্তৃপক্ষ। সেইসব খাবার জমিয়েই পুজোর সময় পাত ভরানোর সুযোগ হয় বন্দিদের। প্রতিটি বন্দিদের জন্য কারা দফতরের নির্দিষ্ট খাবারের হিসাব থাকে। সে গুলি অল্প অল্প করে পুজোর আগে থেকে জমান বন্দিরা।
কৃষ্ণনগর দক্ষিণ থেকে বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনিই কারামন্ত্রী। আর কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধনাগারটি তাঁর পাড়ার বা এলাকার বলেই পরিচিত। যদিও সেখানের পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যাওয়া নিয়ে এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি কারামন্ত্রী। তবে পুজোর দিনগুলির মধ্যে একদিন যাওয়ার কথা রয়েছে উজ্জ্বলবাবুর। তবে কৃষ্ণনগর ‘কারামন্ত্রীর সংশোধনাগার’ বলা নিয়ে আপত্তি রয়েছে দফতরের অনেকের। তাঁদের মতে, রাজ্যের সব সংশোধনাগারই তো মন্ত্রীর। আলাদা করে কোনওটাই তাঁর নয়। আর মন্ত্রী তো কোনও না কোনও এলাকা থেকেই নির্বাচিত হবেন। আর সেই এলাকা বা জেলায় সংশোধনাগার থাকতে পারে। তাই মন্ত্রীর সংশোধনগার বলে আলাদা করে তকমা দেওয়া ঠিক নয়।
তবে সেসব যাই হোক না কেন পুজোর দিনগুলিতে আনন্দে আর খুশি থাকতে চেষ্টার কসুর করছেন না ‘মন্ত্রীর সংশোধনগার’। তাই সপ্তমী থেকে দশমীর মধ্যে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে সংশোধনাগারের অন্দরে।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ভোট-উৎসবে দ্বিতীয় ঢেউ! শারদোৎসবে করোনা দরজায় কড়া নাড়লে ‘খুনে’র দায় নেবে কে?