Nadia: ‘শুধু বলেন চেম্বারে আনুন’, সন্তানকে হারিয়ে সরকারি হাসপাতালের ‘ঘৃণ্য দিক’ তুলে ধরলেন বাবা-মা

Nadia: "ডাক্তাররা কেউ হাসপাতালের ব্যাপারে খোঁজ নেন না বাবু। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাঁরাই বলে আমাদের চেম্বারে নিয়ে আসুন।"

Nadia: 'শুধু বলেন চেম্বারে আনুন', সন্তানকে হারিয়ে সরকারি হাসপাতালের 'ঘৃণ্য দিক' তুলে ধরলেন বাবা-মা
কৃষ্ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে গেটের বাইরে ধর্নায় পরিবার (নিজস্ব চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 08, 2021 | 12:07 PM

নদিয়া: দুই শিশু, আরেক প্রসূতি। তাঁদের উপসর্গ ছিল একই। জ্বর-সর্দি-কাশি, সঙ্গে প্রবল শ্বাসকষ্ট। তিন জনেরই মৃত্যু হয় একই দিনে। এরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নদিয়ার (Nadia) কৃষ্ণগঞ্জ সদর হাসপাতাল। চিকিত্সার গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। মৃতদেহ রেখে ধর্নায় বসেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা। চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালের গেটের সামনেই প্রসূতি মহিলা ও সদ্যোজাতর দেহ রেখে চলে বিক্ষোভ। পুলিশ গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগে কৃষ্ণগঞ্জ এলাকারই দুই শিশুর জ্বর-সর্দি কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তারপর তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ওই হাসপাতালে একই উপসর্গ নিয়ে একাধিক শিশু ভর্তি রয়েছে। বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই শিশুর মৃত্যু হয়।

এরপর সন্ধ্যায় দিকে হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরও এক প্রসূতির। তাঁরও একই উপসর্গ। তাঁর মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সন্তানহারা এক বাবা-মা। বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন এক মৃত শিশুর বাবা। তাঁর কথায় উঠে হাসপাতালের বিপন্ন পরিষেবার চিত্রটা। তিনি বলেন, “ডাক্তাররা কেউ হাসপাতালের ব্যাপারে খোঁজ নেন না বাবু। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাঁরাই বলে আমাদের চেম্বারে নিয়ে আসুন। এখানে ভাল পরিষেবা পাওয়া যাবে না। আমরা গরিব মানুষ কী করব বলুন। রোগীদের বিভ্রান্ত করা হয়। যাতে রোগীরা নার্সিংহোমে চলে যান। স্যাররা একটা কথাও বলেন না ভালো করে। এক জনের নামও বলতে চান না। কোন ডাক্তারবাবু দেখছেন, সেই নামটা পর্যন্ত জানতে পারি না। নার্সদিদিদেরও মুখের ভাষা অকথ্য। ”

হাসপাতালের গেটের সামনে বসে তাঁরাই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। পুলিশকর্তারা তাঁদের রাস্তা থেকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কর্তব্যরত পুলিশ কর্তা মৃত শিশুর বাবাকে বলেন, “আপনার সন্তান মারা গিয়েছে, আপনি অভিযোগ করুন। ধরনায় বসবেন না।” মৃত শিশুর বাবা বলেন,. “সব করে নিয়েছি স্যার। কিচ্ছু হয়নি।”

১৫ দিনের শিশু হারিয়েছেন এক মা। সেই সদ্যোজাতর পরিবারের এক সদস্যের কথায়, “মেয়েটা বাচ্চাটাকে নিয়ে ঘরে বসে রয়েছে। কত্তবার ডাক্তারবাবুদের ডাকলাম। নার্সদিদিদের ডাকলাম। কেউ বারের জন্য উঁকি পর্যন্ত দিলেন না। সন্তানটা চোখের সামনে চলে গেল। ওই ভাবেই ওকে নিয়ে ঘরে বসে রয়েছে মেয়েটা।”

রোগীর পরিবারের অভিযোগে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের বিপন্ন চিত্রটা প্রকাশ্যে এসেছে। রোগীর পরিবারকে আশ্বস্ত করতে শোনা গিয়েছে কৃষ্ণগঞ্জ থানার আইসি। তিনি নিজের মুখে স্বীকার করেছেন, “এখানকার পরিষেবা ভাল নয় আমরা জানি। প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই শিশুর মৃত্যু হয়। তাতে হাসপাতালে অভিযোগ জানাতে হবে।”

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে শিশু মৃত্যু কিংবা প্রসূতি মৃত্যু নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যায়নি। তবে ধর্নায় বসার খবর পেয়ে এসেছিলেন হাসপাতাল সুপার। হাসপাতালের ভিতর ঢুকে দেখা গেল আরও এক ভয়ঙ্কর ছবি। একই বেডে চিকিত্সা চলছে তিন-চার জন শিশুর। সঙ্গে রয়েছেন তাদের মায়েরাও। একেবারে ঘিঞ্জি অবস্থা। বেশিরভাগেরই মুখে নেই মাস্ক।

আরও পড়ুন: Maldah: ‘আপনার হার্ট দুর্বল থাকলে দোষ কী বাকিদের?’ মালদায় ভ্যাকসিন লাইনে সিভিক ভলেন্টিয়ারের ‘মারে’ বৃদ্ধের মৃত্যুতে পাল্টা পুলিশকর্তা