কাউকে মারতে নয়, স্রেফ এই কারণেই শ্বশুরবাড়িতে পরপর গুলি… স্বামীর কাণ্ডে হতভম্ব বরানগরের মেয়ের

Baranagar Shootout: পরিবারের সদস্যদের কথায়, পামেলাকে সামনে পেয়ে প্রথমে বাড়়ি যাওয়ার কথা বলেন। তাতে রাজি হন না পামেলা।

কাউকে মারতে নয়, স্রেফ এই কারণেই শ্বশুরবাড়িতে পরপর গুলি... স্বামীর কাণ্ডে হতভম্ব বরানগরের মেয়ের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 27, 2021 | 11:12 AM

উত্তর ২৪ পরগনা: ঝামেলা অশান্তি রোজই নিত, সেদিনও হয়েছে। কিন্তু এমনটা যে হবে, তা আঁচ করতে পারেননি কেউই। ঝামেলায় ক্লান্ত স্ত্রী চলে এসেছিলেন বাপের বাড়িতে। কিন্তু সেখানেও মিলল না রেহাই। পিছু ধাওয়া করে স্বামী চলে আসেন সেখানেও। চিত্কার-চেঁচামেচি-অশান্তি-গালিগালাজ-সবই হয়। তবে স্ত্রীয়ের গায়ে হাত তোলেননি স্বামী। নিজেই ভাঙেন মোবাইল, মোটরবাইক। তারপর চলে যান। সকলে ভেবেছিলেন, হয়তো চলে গিয়েছেন। ঘরের দরজা বন্ধ করে ভিতরে তখন তাঁর স্ত্রী। আচমকাই ভাঙচুরের আওয়াজ শুনে বাইরে আসেন। দেখেন, স্বামী পরপর দু রাউন্ড গুলি চালায়। আরেকটু হলেই গুলি লেগে যেত শ্যালিকার গায়ে! বরানগরের প্রতিবেশীরা তখন দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত!

জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে পেশায় গাড়িচালক বাপি মিস্ত্রির সঙ্গে বিয়ে হয় বরানগরের মেয়ে পামেলার। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে তাঁদের মধ্যে অশান্তি হত। ঝামেলা চরমে উঠত কখনও কখনও। স্ত্রীও অনেক সময়ে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠতেন। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন, কিন্তু রগচটা বাপি কখনই ঝামেলার হাত থেকে রেহাই দিত না তাঁকে।

বুধবারও তাঁদের মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠে। বিরক্ত হয়ে বাপেরবাড়িতে চলে আসেন স্ত্রী পামেলা। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে আচমকাই বাপি তাঁদের বাড়িতে চড়়াও হয়। সেখানেও স্ত্রীয়ের সঙ্গে অশান্তি শুরু করেন তিনি।

পরিবারের সদস্যদের কথায়, পামেলাকে সামনে পেয়ে প্রথমে বাড়়ি যাওয়ার কথা বলেন। তাতে রাজি হন না পামেলা। এরপর শুরু হয় গালিগালাজ। আবারও এ-দু’কথায় অশান্তি শুরু করেন বাপি। জল গড়াতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে আরও মেজাজ চড়তে থাকে বাপির। পামেলার পরিবারের সদস্যদেরও গালি দিতে থাকেন। প্রতিবেশীরা তখন অনেকেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তবে যেহেতু বাপি পামেলার গায়ে হাত তোলেননি, সে অর্থে কেউ পারিবারিক বিবাদে জড়াননি নিজেকে।

কিছুক্ষণ চিত্কার চেঁচামেচির পর এলাকা থেকে চলে যান বাপি! পামেলার কথায়, “আমি ভাবলাম মাথা গরম করে যা করেছে। এবার চলে গেছে। আর কিছু করবে না। নিজে থেকে মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে।” কিন্তু পামেলার ভাবনা ভুল ছিল। কিছুক্ষণ পর ফের ফেরত আসেন বাপি। প্রথমে একটা বাইকে ভাঙচুর চালান। সেই শব্দ শুনতে পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন পামেলা। পিছন পিছন আসেন কাঁর বোনও। পামেলাকে দেখে পকেট থেকে মোবাইল বার করে ছুড়ে ফেলে দেন বাপি। তারপর পকেট থেকে বন্দুক বার করে গুলি চালান।

গুলি শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে আসেন পামেলার বাড়িমালিক, প্রতিবেশীরা। বাড়িওয়ালার কথায়, “আমরা ওপরে ছিলাম। শুনলাম দুটো গুলির আওয়াজ হল। আমরা ওকে ধরার চেষ্টা করলাম। বাইক ফেলেই দৌড়ে পালিয়ে যায়। আরেকজনও ওকে ধরার চেষ্টা করেছিল। তাকেও লক্ষ্য করে গুলি চালানোর চেষ্টা করে। একটা সাধারণ বাড়িতে যদি গুলি চলে, তাহলে ভয় লাগবে না বলুন!”

পামেলা বলছেন, “রাগ করত, অশান্তি হত, আগেও হয়েছে, এদিনও হল! তবে এমনটা তো আগে কখনও করেনি ও। কেন এমনটা করল জানি না। থানায় জানিয়ে এসেছি।” তবে পামেলার দাবি অনুযায়ী, বাপি একটাই গুলি চালিয়েছেন।

পামেলার বোনের কথায়, “আতঙ্কে তো রয়েছি। ঘরে চারটে ছোটো বাচ্চা রয়েছে। তবে পাড়ার মধ্যে এমন ঘটনায় লজ্জিত। ঝগড়া করে, করেছিল, কিন্তু এটা করবে ভাবিনি আমরা। পাড়ার লোকেরাও বাড়ির মালিককে বলছেন। ” এই ঘটনায় বরানগর থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন পামেলা মিস্ত্রি। যদিও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘটনা তদন্তে বরানগর থানার পুলিশ। আরও পড়ুন: ‘পিছন থেকে দৌঁড়ে এসেছিল ও, ছেলের মাথার বাঁ দিকটা খুবলে নিল…’ স্বামীর কাজে ভয়ে কাঁপছেন স্ত্রীও