COVID19: করোনা রোধক মাদুলি বাবার আত্মসমর্পণ, কোর্টের নির্দেশে জেল হেফাজত

Purba Medinipur: মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। একটা মাদুলি কিনলেই ঘেঁষতে পারবে না করোনা। সঙ্গে অবশ্য আর কিছু উপাচার পালন করতে হবে

COVID19: করোনা রোধক মাদুলি বাবার আত্মসমর্পণ, কোর্টের নির্দেশে জেল হেফাজত
মাদুলি বাবা গ্রেফতার, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 25, 2022 | 2:54 PM

পূর্ব মেদিনীপুর:  স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে না, দরকার নেই শারীরিক দূরত্ববিধির। এমনকী মাস্ক খুলে গলায় মাদুলি হলেও চাপ নেই। একটা মাদুলিই মুশকিল আসান। কাছে ঘেঁষবে না করোনাভাইরাস (Coronavirus)! এভাবেই পনেরো হাজারি মাদুলি বেচে ভাল ব্যবসা জমিয়েছিলেন মাদুলিবাবা। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের পার্শ্ববর্তী সুতাহাটার রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুল কাদের (৭৭)। ‘মাদুলিবাবা’ পরিচয়ে যিনি রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন কলকাতা-সহ শহরতলী ও গ্রামগঞ্জ এলাকায়। গত ১৭ জানুয়ারি TV9 বাংলায় মাদুলিবাবার খবর সম্প্রচারিত হয় । রীতিমতো চিরুনি তল্লাশি করছিল সুতাহাটা থানার পুলিশ। শেষে নিজেই আত্মসমর্পণ করলেন মাদুলিবাবা।

হলদিয়া কোর্টের বিচারপতি এসিজেএম গিরিজা নন্দ জানা আগামী ২৭ জানুয়াি পর্যন্ত ধৃতকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। রামচন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিজের বাড়িতে, ‘গলায় মাদুলি ঝোলান, আর করোনা থেকে সেরে উঠুন’ -এমন বিজ্ঞাপনী প্রচারে বুজরুকি কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মাদুলি কেনার হিড়িকও পড়ে গিয়েছিল। ১৫ হাজার থেকেও অধিক টাকায় বিক্রি হচ্ছিল এই মাদুলি।

সরকারি আইন জীবী ভি কে রাম জানান, সৈয়দ আব্দুল(ওরফে মাদুলি বাবা) তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন। একইসঙ্গে জামিনের আবেদনও করেন। সরকার পক্ষ থেকে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করলে বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আগামী ২৭ তারিখ পর্যন্ত জেল হেফাজতে র নির্দেশ দেন এবং ভারতীয় দন্ড বিধির ৭ নম্বর ধারা, ৪২০ নম্বর ধারা-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।

মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। একটা মাদুলি কিনলেই ঘেঁষতে পারবে না করোনা। সঙ্গে অবশ্য আর কিছু উপাচার পালন করতে হবে। এমনই দাবি নিয়ে রীতিমতো ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের পার্শ্ববর্তী সুতাহাটার রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুল কাদের। যদিও মাদুলিবাবা প্রথমে দাবি করেছিলেন, “আমি হলফ করে বলতে পারি, করোনা কোনও ভাইরাস ঘটিত রোগ নয়, এটা আল্লাহ্-র গজব। আমার মাদুলিতেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব। ইতিমধ্যে কলকাতা, বাটানগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের বহু মানুষ এই মাদুলি নিয়েছেন। তাঁরা সকলেই সুস্থ আছেন”।

ব্যবসা ফাঁদতে মাদুলিবাবার বিজ্ঞাপনী চমক ছিল, “ছোট্ট ছেলে থেকে পরিবারের সদস্যের জীবন আগে নাকি ১৫ হাজার টাকার মূল্য বেশি? আমি হলফ করে বলছি, এই মাদুলি নেওয়ার পর জলপড়া, তেলপড়া এবং করোনা বিতাড়নের কিছু মন্ত্র লেখা কাগজ দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখলেই করোনা ভ্যানিশ হয়ে যাবে”।

এই ব্যবসার কথা ছড়িয়ে পড়তেই সোচ্চার হন জেলার চিকিৎসক মহল থেকে বিজ্ঞান মঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক নকুল চন্দ্র ঘাঁটি বলেন, “মাস্ক পরা, একটানা চিকিৎসা, ভ্যাকসিন নেওয়ার মতো গাইডলাইন মেনে চললে করোনা নিরাময় সম্ভব। মাদুলি বা তুকতাক দিয়ে এই মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই অসম্ভব। মানুষের অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি এমন কারবার চালাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত এখনই এই কারবার বন্ধ করা। অন্যথায় বহু মানুষ এই প্রতারণার শিকার হয়ে যাবেন”।

মাদুলিবাবার এহেন কারবারের খবর ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি। তবে দেরিতে হলেও টনক নড়েছে প্রশাসনের। তারপরেই মাদুলিবাবার সন্ধানে ময়দানে নামে সুতাহাটা থানার পুলিশ। অবশেষে মঙ্গলবার আত্মসমর্পণ করেন ‘মাদুলিবাবা’।

আরও পড়ুন: Agnimitra Paul on State Government: ‘বাংলার পুলিশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে গোয়া নিয়ে ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী’