Nadigram BJP Agitation: সরকারি অফিসারের কলার ধরে ‘মারধর’, গ্রেফতার ৬ বিজেপি নেতা

Nadigram BJP Agitation: ওই আধিকারিককে সামনে পেয়েই রীতিমতো চড়াও হন তাঁরা। রীতিমতো কিল, চড়, ঘুষি মারা হয় তাঁকে। ক্যামেরায় ধরা পড়ে লাল শাড়ি পরিহিত এক মহিলা রীতিমতো আধিকারিকের জামা ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসছেন।

Nadigram BJP Agitation: সরকারি অফিসারের কলার ধরে 'মারধর', গ্রেফতার ৬ বিজেপি নেতা
নন্দীগ্রামে সরকারি আধিকারিককে 'হেনস্থা' (নিজস্ব চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 26, 2021 | 11:36 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: নন্দীগ্রাম কৃষি দফতরে বিজেপির বিক্ষোভে ধুন্ধুমার। কর্তব্যরত সরকারি অফিসারকে মারধরের অভিযোগ। আক্রান্ত কৃষি দফতরের কর্মী। সেই ঘটনায় অবশেষে ৬ জন বিজেপি কর্মীসমর্থককে গ্রেফতার করল পুলিশ। গ্রেফতারির প্রতিবাদে, শুক্রবার সন্ধে থেকেই নন্দীগ্রামে পথ অবরোধ ও অবস্থান শুরু হল। পাশাপাশি, গেরুয়া শিবিরের তরফে শনিবারেও ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।

পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলেন, “কৃষি আধিকারিককে মারধরের ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের সকলকে ধরার জন্য তল্লাশি শুরু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত ৩ জন মহিলা-সহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

পূর্ব হলদিয়ার মহকুমাশাসক লক্ষ্মণ পেরুমল বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আক্রান্ত অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্তে নেমেছে।”

কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে হেনস্থার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল। নন্দীগ্রামের ১ নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি স্বদেশ দাস বলেন, “অত্যন্ত লজ্জার  ঘটনা! রাজ্য সরকারের দ্বারা গোটা রাজ্যের কৃষক উপকৃত হচ্ছেন। সেখানে বঞ্চনা বা স্বজনপোষণের অভিযোগ ঠিক নয়। আসলে বিজেপি এ সব করে নন্দীগ্রামকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে।”

সূত্রের খবর, ধৃত চৈতালি মন্ডল, মমতা ভুঁইয়া, মাধুরী জানা, সুনীল মাইতি, আশিস ভুঁইয়া এবং মেঘনাথ পাল প্রত্যেকেই দলবদলু নেতা। সুনীল মাইতি আর আশিস ভুঁইয়া আবার হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং উপপ্রধান। নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা মেঘনাথ পাল এবং হরিপুর পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানের নেতৃত্বে এদিন সংগঠিত হয় গণ-ডেপুটেশন কর্মসূচি।

শুক্রবার সকালে কৃষিক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে কৃষি দফতরে ডেপুটেশন দিতে যায় বিজেপি। অভিযোগ, বিজেপির মিছিল চলাকালীন কৃষি দফতরের কর্মীকে হেনস্থা, মারধর করেন বিজেপির মহিলা কর্মীরা। সরকারি আধিকারিকে মারধরের ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য এলাকায়। TV9 বাংলার ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই ছবি।

নন্দীগ্রামের হরিপুর অঞ্চলে কিষান মাণ্ডিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে স্মারকলিপি জমা দিতে আসেন বিজেপি কর্মীরা। কৃষি দফতরের বাইরে যখন মিছিল এসে পৌঁছয়, সে সময় বিশেষ কাজে বাইরে যাচ্ছিলেন বরুণ মণ্ডল নামে এক জন আধিকারিক। প্রথম থেকেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিজেপি কর্মীরা। কিন্তু ওই আধিকারিককে সামনে পেয়েই রীতিমতো চড়াও হন তাঁরা। রীতিমতো কিল, চড়, ঘুষি মারা হয় তাঁকে। ক্যামেরায় ধরা পড়ে লাল শাড়ি পরিহিত এক মহিলা রীতিমতো আধিকারিকের জামা ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসছেন। এমনটাই অভিযোগ উঠছে। নন্দীগ্রামের কৃষি দফতরের সামনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

বিজেপির অভিযোগ, কৃষি দফতরের তরফে যে সব সুযোগ সুবিধা সাধারণ মানুষ পেয়ে থাকেন, তা প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের পরিচিতদের দিচ্ছেন কর্মীরা। নন্দীগ্রামের মানুষ সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকারি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক রঙ দেখা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে মহিলা কর্মীদের নিয়ে কৃষি দফতরে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেয় বিজেপি।

বিশাল মিছিল করে তাঁরা কৃষি দফতরের সামনে উপস্থিত হন। কিন্তু আচমকাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। দফতরের বাইরে একটি বিশেষ কাজে বেরচ্ছিলেন এক আধিকারিক। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মহিলা কর্মীরা। তাঁকে রীতিমতো হিঁচড়ে টেনে আনা হয়। অভিযোগ, ওই আধিকারিকই বিশেষভাবে স্বজনপোষণ করে থাকেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। তবে দফতরের বাকি আরও কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় নন্দীগ্রাম থানার বাহিনী। বিজেপি নেতা মেঘনাথ পাল বলেছেন, “বার বার বলা সত্ত্বেও কৃষি দফতরের আধিকারিকরা রাজনৈতিক রঙ দেখে পরিষেবা দিচ্ছেন। শাসকদলের কর্মীদেরই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।” পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।

যদিও হামলার খবর পাওয়ার পরেই দুপুর পর্যন্ত মহকুমা শাসক কিংবা বিডিও ঘটনাস্থলে যাননি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ‘অন ডিউটি’ থাকাকালীন কীভাবে একজন সরকারি কর্মী আক্রান্ত হন?  এ প্রসঙ্গে একজন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলামের বক্তব্য, “সরকারি কর্মীর গায়ে হাত তোলা কখনই কাম্য নয়। কিন্তু এটাও দেখতে হবে, সরকারি কর্মচারীরাও যেন রাজনৈতিক রঙ না দেখে সরকারি পরিষেবা সাধারণ মানুষকে দিয়ে থাকেন। এইভাবে সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠলে, গ্রামবাসীদের মনে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। আজকের ঘটনা তারই ফল।”

বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, “কোনও প্ররোচনা ছাড়া এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। ওই মিছিলে নিশ্চয়ই প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। আমার পুরো বিষয়টা জানা নেই। স্পটে কী ঘটেছে, সেটা সম্পূর্ণ না জেনে আসল সত্য সামনে আসবে না।”

আরও পড়ুন: Shankar Adhya: ‘আমি বালুর নামে কিছু বলিনি’, সাংবাদিক বৈঠকে ক্ষমা চাইলেন শঙ্কর