Shankar Adhya: ‘আমি বালুর নামে কিছু বলিনি’, সাংবাদিক বৈঠকে ক্ষমা চাইলেন শঙ্কর
Bangaon: শঙ্করের এই মন্তব্যে কার্যত বিতর্কের ঝড় ওঠে। কারণ, শঙ্কর সরাসরি মুখে নাম না করলেও বিতর্কের তির যে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দিকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
উত্তর ২৪ পরগনা: কিছুদিন আগেই তাঁর মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল, সেই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এ বার সাংবাদিক বৈঠকে সরাসরি ক্ষমা চাইলেন বনগাঁ পুরসভার (Bangaon Municipal) প্রাক্তন পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য। পাশাপাশি, তিনি এদিন বলেন, “আমি বালুর বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করিনি। আমি যা বলেছি তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।” স্পষ্টই জানিয়ে দেন, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
ঠিক কী বলেছিলেন শঙ্কর? বনগাঁর একটি দলীয় সভায় এসে শঙ্কর বলেছিলেন, “২০১৫ সালের বনগাঁ পুরসভা নির্বাচনে ব্যাপক রিগিং হয়েছিল। দলের নির্দেশেই ভোট করেছিলাম। দলের শীর্ষ নের্তৃত্বের নির্দেশে জোর করে ভোট করানো হয়েছিল। তার জন্য বনগাঁর মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। সেই সময় ভুল করেছিলাম।” একইসঙ্গে তৃণমূল পরিচালিত বনগাঁ পুরসভায় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও করেন তিনি।
শঙ্করের এই মন্তব্যে কার্যত বিতর্কের ঝড় ওঠে। কারণ, শঙ্কর সরাসরি মুখে নাম না করলেও বিতর্কের তির যে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দিকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, ২০১৫ সালে জ্যোতিপ্রিয় ছিলেন তত্কালীন জেলা সভাপতি ও খাদ্যমন্ত্রী। যদিও, শঙ্করের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করেননি জ্যোতিপ্রিয়।
যদিও উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছে প্রাক্তন পুরপ্রশাসকের এই মন্তব্যের সঙ্গে দল সহমত নয়। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোরানি সরকার বলেন, “ক্ষমা চাওয়া অপরাধ নয়। ক্ষমা চেয়েছেন ভালোই করেছেন। তবে তিনি যেভাবে কারও নির্দেশে একাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন, তা ঠিক নয়। অন্য কাউকে দোষারোপ করে তিনি গর্হিত কাজ করেছেন।”
আলোরানি সরকার বলেন, “আমি তিনমাস জেলার দায়িত্ব নিয়েছি। ২০১৫ সালে কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে সারা রাজ্যের মানুষ ভোট দেন। বনগাঁতেও তার ব্যতিক্রম হয় না। তৃণমূলের জেতার জন্য রিগিংয়ের দরকার হয় না। বাংলার মানুষ দুহাত তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশীর্বাদ করেছেন।” এরপরেই, শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে প্রকাশ্যে তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রশাসক।
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসেই বনগাঁ পুরসভায় বড়সড় রদবদল হয়েছিল। বনগাঁ পুরসভার প্রশাসক শঙ্কর আঢ্যকে সরিয়ে সেই জায়গায় নিয়ে আসা হয় বিধায়ক গোপাল শেঠকে। বনগাঁ পুরসভার প্রসাশক পদ থেকে শঙ্করকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে অনেক দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। বিধানসভা নির্বাচনের দেড়মাস পরেই এই সিদ্ধান্ত নেয় দল।
২০১৫-র পুরনির্বাচনে বনগাঁর ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে তৃণমূল জয়লাভ করে৷ ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে তখন চেয়ারম্যান হয়েছিলেন শঙ্কর। এর পর ২০১৯-এর মে মাসে ১৩ জন কাউন্সিলর শঙ্করের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার ও স্বজনপোষণের অভিযোগ করে অনাস্থা আনেন। তাঁরা চেয়ারম্যান পদ থেকে শঙ্করকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন জেলা নেতৃত্বের কাছে। তারপর যদিও কয়েকজন কাউন্সিলর শঙ্করের পক্ষে সুর তোলেন। বাকিরা যোগ দেন বিজেপিতে। সেসময়, শঙ্কর জানিয়েছিলেন, তাঁকে না জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
পৌরসভা নির্বাচনে শঙ্কর ও গোপালের নিজ নিজ অনুগামীরা ভোটের ময়দানে একে অপরের পাশে দাঁড়াবে না বলেই অনুমান সংশ্লিষ্ট মহলের। সেখানে প্রাক্তন পুর প্রশাসক দলের টিকিট না পেলে নিজের উদ্যোগে দাঁড়িয়ে পড়তে পারেন ভোটে। তেমন পরিস্থিতি যাতে না হয়, সেকথা জানিয়েই আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূলে নেত্রী আলোরানি সরকার।
আরও পড়ুন: ‘নিখোঁজ’ পদ্ম বিধায়ককে খুঁজতে পুলিশের দ্বারস্থ যুব তৃণমূল!