Jhalda Municipality: থমকে নাগরিক পরিষেবা, এই ‘অচলাবস্থার’ মুক্তি কোথায়? ‘চাপা ক্ষোভ’ ঝালদার পুরবাসীদের মনে
Jhalda: হাইকোর্টের নির্দেশ আসার আগে পর্যন্ত বেজায় সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন তাঁরা। ঝালদার দুই 'প্রশাসকে'র মধ্যে কার কাছে যাবেন? কোনও দরকার পড়লে কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন? সেই সব নিয়ে এক দ্বিধার মধ্যে পড়েছিলেন এলাকাবাসীরা।
অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
না, ওনারা কেউ রাজনীতির কচকচানি বুঝতে চান না। কে কোন পার্টি, তাও বুঝতে চান না। তাঁরা শুধু চান সুষ্ঠু পরিষেবা। কিন্তু সেটাও এখন আইনি মারপ্যাঁচে থমকে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলছে জটিলতা। প্রথমে পুরভোটে ত্রিশঙ্কু হয়েছিল ঝালদায় (Jhalda Municipality)। ১২ আসনের পুরসভায় পাঁচটি করে আসন পায় তৃণমূল ও কংগ্রেস। ওই সময় দুই নির্দল প্রার্থীর সমর্থন ছিল তৃণমূলের দিকে। পরে এক নির্দল ও কংগ্রেসের পাঁচ কাউন্সিলর অনাস্থা এনেছিলেন। আস্থা ভোটে নির্দলের সমর্থন পেয়ে সেই সময় কংগ্রেসের দিকে পাল্লা ভারী থাকলেও বোর্ড গঠন ঘিরে জটিলতা আর কাটেনি।
এদিকে চলতে থাকা এই টানাপোড়েনের মধ্যে রাজ্যের তরফে অস্থায়ী ‘চেয়ারম্যান’ হিসেবে জবা মাছুয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপালের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছিল। সূত্রের খবর, এই জবা মাছুয়ার অপসারিত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ। এরই মধ্যে আবার পাল্টা কংগ্রেসের তরফে ঝালদা পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে ঘোষণা করা হয় শিলা চট্টোপাধ্যায়ের নাম। ঝালদার যে দুইজন নির্দল কাউন্সিলর রয়েছেন, তাঁদের মধ্য়ে একজন শিলা। এদিকে গতকাল হাইকোর্ট ঝালদার পুরবোর্ডের প্রশাসক বসানোর নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, আপাতত পুরসভার দ্বায়িত্ব সামলাবেন জেলাশাসক।
আর এই আইনি মার-প্যাঁচের মধ্যে পড়ে জাঁতাকলের মতো পিষছেন পুরবাসীরা। গতকাল হাইকোর্টের নির্দেশ আসার আগে পর্যন্ত বেজায় সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন তাঁরা। ঝালদার দুই ‘প্রশাসকে’র মধ্যে কার কাছে যাবেন? কোনও দরকার পড়লে কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন? সেই সব নিয়ে এক দ্বিধার মধ্যে পড়েছিলেন এলাকাবাসীরা। ঝালদার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জগদীশ চন্দ্রের ক্ষোভ, বিভিন্ন কাজও থমকে রয়েছে। নিকাশির কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না, বাড়ির কাজ হচ্ছে না। তিনি চাইছেন, এই জটের দ্রুত একটি স্থায়ী মীমাংসা হোক, যাতে ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবাটুকু স্বাভাবিক হয়।
আবার কেউ কেউ যেন এই ‘অচলাবস্থার’ সঙ্গেই নিজেদের ধাতস্থ করে নিতে শুরু করেছেন। এই যেমন পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেবু স্বর্ণকার। তাঁকেও প্রতিনিয়ত যুঝতে হচ্ছে এই সমস্যার সঙ্গে। বলছেন, “আমাদের ঝালদাতে তো বার বার এমন হতেই থাকে। দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান বদল হতে থাকছে। আর অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় আমাদের মতো আমজনতাকে। শাসক দল চাইলে শাসক দল চালাক, কংগ্রেস চাইলে কংগ্রেস চালাক। কিন্তু ঝালদার মানুষের জন্য যেন কাজ হয়।”
পুরসভায় বার বার এই বোর্ড গঠন ঘিরে জটিলতা নিয়ে খানিক বিরক্তির সুর পুরবাসীদের গলায়। পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে থাকেন ফাল্গুনী চন্দ্র। তিনি শুধু চাইছেন, এই পরিস্থিতির ইতি পড়ুক এবার। পরিবেশটা যেন একটু ভাল হয়। যিনিই চেয়ারম্যান হবেন, তিনি যেন নিজের মেয়াদ পূরণ করেন, যাতে পরিষেবা ঠিকঠাক থাকে। তার উপর দুই ‘চেয়ারম্যান’-এর তত্ত্ব নিয়েও বেশ বিভ্রান্ত তাঁরা। বুঝে উঠতে পারছেন না, কার থেকে পরিষেবা পাবেন, কোথায় – কার কাছে যাবেন।
যদিও হাইকোর্টের নির্দেশ আসার আগে পর্যন্ত জবা মাছুয়ার ও শিলা চট্টোপাধ্য়ায়, উভয়ই দাবি করে আসছিলেন তাঁরা নাগরিক পরিষেবা ঠিকঠাক দেবেন। তবে এই জটিলতার কারণে, পুর পরিষেবা যে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে সেকথা স্বীকার করে নিচ্ছেন ঝালদা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি চিরঞ্জীব চন্দ্র। বলছেন, “বিগত পুর নির্বাচনে ঝালদার জনগণ কোনও দলকেই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়নি। যেখানে পাঁচ-পাঁচ করে প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন, সেখানে দুইজন নির্দলের উপর ভাগ্য নির্ধারণ করছে… যে কোন দলের বোর্ড চলবে। তৃণমূল অটুট আছে। কিন্তু এখানে নির্দলদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সুষ্ঠুভাবে পুরবোর্ড পরিচালনা করার জন্য।”
ঝালদা শহর কংগ্রেসের যুব সভাপতি তথা ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিজয় কান্দু, “আমাদের চেয়ারম্যান বসে গিয়েছে নিয়ম মতো। ওরা আসলে বেআইনিভাবে চেয়ারম্যান বসিয়েছে। আমরা সাতজন কাউন্সিলর মিলে পুরপ্রধানকে বদলেছি এবং আমাদের পুরপ্রধান দিয়েছি। আমাদের পুরপ্রধান বসবে এবং আমরা মেয়াদ পূরণ করব। মানুষ সবই পরিষেবা পাবেন। আগে যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি এককভাবে কাজ করতেন। কিন্তু আমরা তা করব না। পুরো ঝালদাবাসীর জন্য সব কাজ আমরা করব।”