Sundarban: সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার কলেজেই AI চালিত শিক্ষা শুরু
Sundarban: এই AI-চালিত চ্যাটবট কলেজেরই এক প্রাক্তন ছাত্র বিশেষভাবে পড়ুয়াদের জন্য কাস্টমাইজ করেছেন। শিক্ষকদের তৈরি বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার এবং API রিসোর্সের সংযোজনের মাধ্যমে এটি আরও কার্যকরভাবে শিক্ষার্থীদের শেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চল ক্যানিংয়ে অবস্থিত বঙ্কিম সর্দার কলেজ। মূলত সুন্দরবনের গোসাবা, বাসন্তী, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, কুলতলি এলাকার পড়ুয়ারাই এখানে পড়াশুনার জন্য ভর্তি হন। দূর দুরান্ত থেকে পড়ুয়াদের অনেক কষ্ট করেই এই কলেজে আসতে হয়। তাই কলেজ পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখেই সুন্দরবনের এই কলেজ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান উন্নয়নের জন্য AI-চালিত চ্যাটবটের ব্যবহার শুরু করেছে সম্প্রতি। যা প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলেই দাবি অধ্যাপক অধ্যাপিকা ও পড়ুয়াদের।
বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতির (NEP) অধীনে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের AEC ইংরেজি ও বাংলা, CVAC সংবিধান, ENVS এবং নবপ্রবর্তিত ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম পাঠ্যক্রম হিসেবে গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থী দূরবর্তী গ্রাম থেকে আসায় দৈনিক কলেজে আসা ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। পাশাপাশি, বড় শ্রেণীকক্ষের অভাব ও পর্যাপ্ত শিক্ষকের সঙ্কট এই বিষয়ে শিক্ষাদানকে আরও কঠিন করে তুলেছে।ফলে সব কলেজেই এই সব বিষয়ের ক্লাস রুটিনে থাকলেও বাস্তবে তা হয় না।
এদিকে বাধ্যতামূলক বিষয় হওয়ার কারণে পড়ুয়ারা এই বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশুনা করতে বাধ্য হয়। কিন্তু কলেজে এ বিষয়ে ক্লাস না হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদেরকে।তাই এই সমস্যার সমাধানের জন্য প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, কলেজ প্রশাসন, অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকমণ্ডলীর নেতৃত্বে AI-চালিত চ্যাটবটের মাধ্যমে শিক্ষাদানের নতুন পদ্ধতি চালু করেছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে এই চ্যাটবট ব্যবহার করে নিজেদের গতিতে ও সুবিধামতো সময়ে অধ্যয়ন করতে পারবে,যা তাদের জন্য একটি স্বনির্ভর ও ইন্টারঅ্যাক্টিভ শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে।
এই AI চ্যাটবটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী, প্রতিটি বিষয় পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। তেমনি পরীক্ষার ধরন, প্রশ্নপত্রের গঠন, মডেল প্রশ্ন এবং নমুনা উত্তর সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণাও পাচ্ছে।ব্যাকরণ, সাহিত্য ও সংবিধান বিষয়ক বিশদ ব্যাখ্যাও মিলছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন অনুসারে সংক্ষিপ্ত বা বিস্তারিত উত্তরও তাঁরা পেয়েছে চোখের নিমেশে। নিজেদের সময়, সুযোগ মতই তাঁরা স্বনির্ভর ভাবে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।
এই AI-চালিত চ্যাটবট কলেজেরই এক প্রাক্তন ছাত্র বিশেষভাবে পড়ুয়াদের জন্য কাস্টমাইজ করেছেন। শিক্ষকদের তৈরি বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার এবং API রিসোর্সের সংযোজনের মাধ্যমে এটি আরও কার্যকরভাবে শিক্ষার্থীদের শেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। শিক্ষার ব্যক্তিগতকরণ (Personalized Learning), বিস্তৃত পুনরাবৃত্তি (Spaced Repetition) এবং উদ্ধারণের মাধ্যমে শেখা (Learning through Retrieval)—এই আধুনিক শিক্ষামূলক কৌশলগুলোর সুবিধাও শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে। গত এক মাসে শিক্ষার্থীরা AI চ্যাটবট ব্যবহার করে স্বশিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করেছে এবং তাদের পাঠ্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে বলেই দাবি কলেজ কতৃপক্ষের। ফলে, শ্রেণীকক্ষের অভাব, পর্যাপ্ত শিক্ষকের সংকট এবং দৈনিক যাতায়াতের অসুবিধা আর বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না বলেই দাবি করছেন তাঁরা।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি,এই উদ্যোগ শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নতি নয়, বরং এটি শিক্ষাক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী বিপ্লব।এটি প্রমাণ করেছে যে সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।এই অগ্রণী উদ্যোগের মাধ্যমে, বঙ্কিম সর্দার কলেজ ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এই AI চ্যাটবটের ব্যবহার এখনই সমস্ত বিষয়ের উপর ব্যবহার করতে নারাজ কলেজ কতৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, সেটা হলে প্রথাগত শিক্ষা পদ্ধতিতে আঘাত আসবে। আগামীদিনে স্কুল,কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাবে। ফলে পরিকাঠামোগত কারণে যে যে বিষয়ে ক্লাস নিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে বর্তমানে সেই সেই বিষয়গুলি শিক্ষার জন্যই শুধুমাত্র প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।





