China Crisis: ভয়ঙ্কর সঙ্কটের মুখে চিন, নতুন ভাইরাসের ছোঁয়াচ এড়াতে পারবে না বাকি দেশগুলিও!
China Power shortage leads to Global Crisis: বিদ্য়ুৎ সঙ্কটের কারণে উৎপাদন হার কমবে, তার ফলে বিদেশে সেই উৎপাদিত পণ্যের রফতানিও হ্রাস পাবে। ইতিমধ্যেই অর্থনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন চিনের জাতীয় আয় কমার।
বেজিং: একে করোনা ভাইরাসের (COVID-19) আমদানি করে গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল চিন(China)। সেই ভাইরাসের ঠেলা সামলাতে না সামলাতেই বিশ্বজুড়ে আরও একটি ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে চলেছে চিন। এর সংক্রমণও এখন থেকেই ছড়াতে শুরু করেছে। তবে এই ভাইরাস রোগ ধরিয়ে প্রাণে না মারলেও, মুখের ভাতটুকু কেড়ে ধনে-প্রাণে শেষ করে দেবে। এই ভাইরাসের নাম হল আর্থিক মন্দা(Financial Crisis), যা ইতিমধ্যেই চিন থেকে ছড়াতে শুরু করেছে। সেই মন্দার আঁচ থেকে রক্ষা পাবে না বাকি দেশগুলিও, তার আন্দাজও করাই যাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে কতটা শিকড়-বাকড় ছড়িয়েছে চিন, তা বোঝা গেল সেই দেশের বিদ্যুত্ বিপর্যয় (Power Outrage) দেখেই। চিনে বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দেওয়ায় গাড়ি প্রস্তুতকারক কারখানা থেকে পশম প্রস্তুতকারক, বিশ্বজুড়ে বহু সংস্থাই পড়েছে সমস্যায়। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ হল চিন। সেই দেশের বিদ্যুত্সঙ্কট শিল্প ও উত্পাদন ক্ষেত্রেও ধাক্কা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই।
করোনা সংক্রমণের শুরুতে মাস ছয়েক চিনের অর্থনীতি ধাক্কা খেলেও, সংক্রমণ রোধের সঙ্গে সঙ্গেই দেশের অর্থনীতিরও হাল সামলে নিয়েছিল চিন। তবে এ বার বিদ্য়ুৎ সঙ্কটের কারণে উৎপাদন হার কমবে, তার ফলে বিদেশে সেই উৎপাদিত পণ্যের রফতানিও হ্রাস পাবে। ইতিমধ্যেই অর্থনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন চিনের জাতীয় আয় কমার। চিনের উত্পাদন কমলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তান। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া ও চিলির মতো দেশে ধাতু রফতানি করায়, সেই ক্ষেত্রটিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উৎপাদন ও অর্থ সঙ্কটের কারণে চিনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য-বন্ধু জার্মানির উত্পাদন শিল্পও মার খাবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পণ্যের বিপুল চাহিদা:
শুধু তাই নয়, চিনের উৎপাদন শিল্প সঙ্কটের কারণে গোটা বিশ্বেই কয়েকটি পণ্যের চাহিদা মারাত্মক বাড়িয়ে তুলবে। করোনা কালে সংক্রমণ থেকে কার্ডবোর্ড এবং প্যাকিং বাক্সের চাহিদা বিপুল পরিমাণে বেড়েছে, বিশ্বে কার্ডবোর্ডের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ হচ্ছে চিন। ফলে চিনে কার্ডবোর্ডের উত্পাদন কমলে বিশ্বজুড়েই কার্ডবোর্ডের জোগান কমবে, হু হু করে বাড়তে থাকবে চাহিদা। একইভাবে অন্যান্য অত্য়াবশ্যকীয় পণ্য, যার বড় অংশই চিন থেকে রফতানি হয়, তার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
খাদ্য সঙ্কট:
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কৃষি উত্পাদক দেশও হচ্ছে চিন। ভারত চাষবাসের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হলেও, এমন বহু দেশই রয়েছে যারা চিন থেকে খাদ্যপণ্য কেনে। বিদ্যুতের ঘাটতির জন্য় আগামিদিনে চিনের স্বয়ংক্রিয় কৃষি ব্যবস্থার ক্ষতি হতে পারে, ফলে ভুট্টা, সয়াবিন, বাদাম ও তুলো উত্পাদন কমতে পারে। এই পণ্যগুলিই যে সমস্ত দেশ আমদানি করে, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়বে। বিদ্যু্ত্ সঙ্কটের কারণে ইতিমধ্যেই চিনে একাধিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের কারখানা বন্ধ রয়েছে। ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে প্যাকেটজাত খাদ্য, সবকিছুরই দাম ঊর্ধ্বমুখী দেশের অন্দরে। বিদেশে রফতানি হলে সেই পণ্যের আরও দাম বাড়বে।
চিনের ডেয়ারিগুলিতেও বিদ্যুত্ সঙ্কটের প্রভাবে উত্পাদন হ্রাস পেয়েছে, প্রভাব পড়েছে চিনের পশু প্রতিপালন ও কসাইখানাগুলিতেও। যেসব দেশ চিন থেকে দুধ ও শুয়োরের মাংস আমদানি করে তারাও আতঙ্কের প্রহর গুণছে। তবে এখানেই শেষ নয়, সমস্যা আরও রয়েছে। আম জনতার হাতে টাকা না থাকায়, শীতের আগে পশমের চাহিদা নেই। এদিকে, চিনকে পশম রফতানি করে অস্ট্রেলিয়ার মেশপালকরা। ফলে চিন থেকে আগামী এক মাসের মধ্যে তারা অর্ডার না পেলে চরম বিপদের মুখে পড়বে।
প্রযুক্তি সঙ্কট:
সস্তায় নকলনবিশি করে যন্ত্র, যন্ত্রাংশ, মাইক্রোচিপ ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স তৈরিতে চিনের জুড়ি মেলা ভার। বিশ্বে প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে চিন। আইফোন থেকে গেমিং কনসোল, যেকোনও গ্যাজেট উত্পাদনেই শীর্ষে রয়েছে চিন। গাড়ি ও যন্ত্রাংশের সেমি কন্ডাক্টর উত্পাদনেও চিন এগিয়ে রয়েছে। এমনিতেই করোনাকালে কয়েকশো বহুজাতিক চিন থেকে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে, যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়েছে। এবার বিদ্যুৎ সঙ্কট এবং তার জেরে অর্থসঙ্কটের মুখে চিনের প্রযুক্তির ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
তবে জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে চিনে এখন ছুটির সপ্তাহ চলছে। এই সময়ে এমনিতেই উত্পাদন বন্ধ থাকে। ফের কর্মসপ্তাহ চালু হলেই আসল বিপদ বোঝা যাবে।