Nepal: প্রাচীন ভারতের মানচিত্রে লুম্বিনি নিয়ে আপত্তি, নয়া সংসদ ভবন নিয়ে বিতর্ক এবার নেপালে
Ancient Indian map mural: নয়া সংসদ ভবনে প্রাচীন ভারতের মানচিত্রের একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। মানচিত্রে প্রাচীন ভারতের ভৌগোলিক এলাকার মধ্যেই দেখানো হয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডকে। এই নিয়ে আপত্তি তুলল নেপাল, পাকিস্তান।
নয়া দিল্লি/ কাঠমান্ডু: গত রবিবার, ভারতের নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তারপর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেলেও, এই নয়া সংসদ ভবন নিয়ে বিতর্ক থামছে না। এর আগে বিতর্ক ছিল দেশের ভিতরে, ২০টি বিরোধী দল একযোগে উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কট করেছে। এবার, বিতর্ক তৈরি হল বিদেশে। নয়া সংসদ ভবনে প্রাচীন ভারতের মানচিত্রের একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। মানচিত্রে প্রাচীন ভারতের ভৌগোলিক এলাকার মধ্যেই দেখানো হয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডকে। চিহ্নিত করা আছে প্রাচীন ভারতের প্রধান প্রধান রাজ্য এবং প্রাচীন শহরগুলি। ম্যুরালটিতে বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনি নগরকেও দেখানো হয়েছে। বর্তমানে লুম্বিনি নেপালের অত্যন্ত পবিত্র শহর এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও বটে। ভারতের নয়া সংসদ ভবনে স্থাপিত প্রাচীন ভারতের মানচিত্রে সেই শহরকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়েই আপত্তি তুলেছেন নেপালের রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ।
বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল ‘প্রচন্ড’। নতুন সংসদ ভবন থেকে প্রাচীন ভারতের মানচিত্রের ম্যুরালটি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য প্রচন্ডকে আহ্বান জানিয়েছেন নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিরোধী দল সিপিএন-ইউএমএল-এর নেতা কেপি শর্মা ওলি। ম্যুরালটির বিষয়ে তিনি বলেছেন, “এটা ন্যায্য নয়। বিশ্বের কাছে ভারত নিজেকে একটি প্রাচীন এবং শক্তিশালী দেশ হিসাবে উপস্থাপন করে। গণতন্ত্রের মডেল হিসাবে তুলে ধরে। এই রকম একটি দেশ যদি নেপালের অঞ্চলগুলিকে তাদের মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত করে এবং সেই মানচিত্র সংসদ ভবনে স্থাপন করে, তবে তাকে ন্যায্য কাজ বলা যায় না।”
তবে, নেপালের এই আপত্তি একেবারেই ভিত্তিহীন। নয়া সংসদ ভবনে স্থাপিত ম্যুরালটি প্রাচীন ভারতের মানচিত্র। লুম্বিনি থেকে শুরু করে তাম্রলিপ্ত, পাটলিপুত্র-সহ প্রাচীন ভারতের সকল শহর ও স্থানকেই দেখানো হয়েছে। এই মানচিত্রে কখনই বর্তমানে নেপালের ভৌগলিক এলাকায় থাকা লুম্বিনিকে ভারতের শহর বলে দেখানো হয়নি বা সেই দাবি করা হয়নি। বস্তুত, লুম্বিনি শহর ভারত ও নেপালের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ইতিহাসকে ধরে রেখেছে। ২০২২ সালের মে মাসে বুদ্ধের জন্মতিথিতে এই পবিত্র শহরে বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চর্চার একটি কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা।
আসলে ভারত ও নেপালের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে কালাপানি এলাকার দখল নিয়ে। কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকাটির উপর দাবি জানায় দুই দেশই। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ভারত সরকার একটি রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করেছিল, যেখানে কালাপানিকে উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলার অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছিল। ওই মানচিত্র নিয়ে সরকারিভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল নেপালের নেতারা। সীমান্ত বিতর্ক নিয়ে ভারতের উপর চাপ বাড়াতেই প্রাচীন ভারতের মানচিত্রটি নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
শুধু নেপালই নয়, নয়া সংসদে প্রাচীন ভারতের এই মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করেছে পাকিস্তানও। মানচিত্রে দেখানো শহরগুলির মধ্যে রয়েছে প্রাচীন শহর তক্ষশীলাও। বর্তমানে শহরটি পাকিস্তানে অবস্থিত। এই বিষয়ে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মমতাজ জাহরা বালোচ ভারতের নয়া সংসদে এই ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, এই মানটিত্রের মাধ্যমে ভারতের সরকার ‘অখন্ড ভারত’-এর অযৌক্তিক দাবি তুলছে। স্বপ্ন দেখছে একদিন পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলি ভারতের অংশ হয়ে উঠবে। “এটা সংশোধনবাদী এবং সম্প্রসারণবাদী মানসিকতার প্রকাশ”, বলে দাবি করেছে পাক বিদেশ মন্ত্রক।