Bangladesh: উর্দুস্তান হওয়ার পথে বাংলাদেশ? মৌলবাদীরা লিখছে নতুন ইতিহাস

Bangladesh: হাসিনা দেশ ছাড়া হওয়ার পর এবং সামরিক বাহিনীর অধীনে মহম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর, এখন বাংলাদেশের ক্ষমতা ইসলামী মৌলবাদীদের হাতেই। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পাকিস্তানিদের সহায়তা করেছিল এবং এখন ফের একবার পাকিস্তানের প্রতি তাদের দরদ উথলে উঠছে। 

Bangladesh: উর্দুস্তান হওয়ার পথে বাংলাদেশ? মৌলবাদীরা লিখছে নতুন ইতিহাস
মুজিব নয়, মৌলবাদীদের কাছে জাতির জনক জিন্নাহImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Sep 15, 2024 | 9:59 PM

ঢাকা: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মূল বিষয়টাই ছিল বাংলা ভাষা। কিন্তু, হাসিনার বিদায়ের পর কি তা আর থাকবে? নাকি বাংলাদেশ ক্রমে হয়ে উঠবে উর্দুদেশ বা উর্দুস্তান? অন্তত হাসিনা বিদায়ের মাস দেড়েক পর, বাংলাদেশের পরিস্থিতি সেই দিকেই এগোচ্ছে। দেশভাগের পর, শুরু থেকে যে বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করেছিলেন বাংলাদেশিরা, সেখানেই গত সপ্তাহে ধুমধাম করে পালন করা হল পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা, মহম্মদ আলি জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। আর সেই উপলক্ষ্যে ঢাকার বুকে হল উর্দু কবিতা পাঠ, উর্দু গান। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ঢাকায় উদযাপিত হল জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী। যেখান থেকে উঠে এল এক অদ্ভুত তত্ত্ব, জিন্নাহ ছাড়া নাকি বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকত না। শেখ মুজিবের বদলে, জিন্নাহকেই তারা বাংলাদেশের জাতির জনক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

গত বুধবার, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল নবাব সলিমুল্লাহ অকাদেমি। সেখানে জিন্নাহর প্রশস্তি তো করা হয়েছেই, সেই সঙ্গে ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উর্দু কবিতা আবৃত্তি হয়েছে, উর্দু গান গাওয়া হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনারের। তবে, তার বদলে অনুষ্ঠানে যোগ দেন ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান আব্বাস। অনুষ্ঠানে জিন্নাহর জীবনের বিভিন্ন মাইলফলকের কথা উল্লেখ করেন এক বাংলাদেশি অধ্যাপক। জিন্নাহ সম্পর্কে একটি উর্দু কবিতা আবৃত্তি করা হয়। পাকিস্তানি ছাত্র মহম্মদ তাহির এবং পাক ডেপুটি হাইকমিশনার জিন্নাহ সম্পর্কে লেখা উর্দু গান পরিবেশন করেন।

ঢাকায় জিন্নাহর জন্মদিন পালন

মহম্মদ সামসুদ্দিন নামে এক বক্তা দাবি করেন, পাকিস্তান না থাকলে বাংলাদেশের অবস্থাও কাশ্মীরের মতো হত। ভারত নাকি তাদের গলায় ছুরি ধরে থাকত। শুধু পাকিস্তান সৃষ্টির জন্যই নয়, বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্বাধীনতার জন্যও জিন্নাহকেই কৃতিত্ব দেন তিনি। তাঁর মতে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের অংশ না হলে আজ বাংলাদেশের অস্তিত্বই নাকি থাকত না। তিনি আরও দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ‘আল্লামা ইকবাল হল’ বা ‘জিন্নাহ অ্যাভেনিউ’-এর মতো নামগুলি নাকি মুছে ফেলা হয়েছিল নয়া দিল্লির স্বার্থ রক্ষা করতে। এতে বাংলাদেশের নিজস্ব কোনও স্বার্থ ছিল না। নজরুল ইসলাম নামে আরে বক্তাও একই কথা বলেন। তিনি অবশ্য আরও এক কদম এগিয়ে বলেন, “জিন্নাহ আমাদের জাতির পিতা, কিন্তু আমরা তা স্বীকার করি না। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে হবে।”

ভাগ্যের এমন পরিহাস, এক সময় এই উর্দু ভাষা জাতীয় ভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধেই লড়াইয়ে নেমেছিল পূর্ব পাকিস্তান বা আজকের বাংলাদেশের মানুষ। ১৯৫২ সালে শিক্ষা, সংবাদমাধ্যম, মুদ্রা, ডাকটিকিট – সমস্ত কিছুতে উর্দুকে সরকারি ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানে মানুষ বাংলাকে সহ-সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা কঠোর হাতে এই প্রতিবাদ দমন করেছিল। বাংলা ভাষাপন্থীদের আন্দোলনের উপর গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। ডজন খানেক প্রতিবাদীর মৃত্যু হয়েছিল।তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে বাংলাদেশ সরকার পরে শহিদের মর্যাদা দিয়েছে। অথচ, সেখানেই আজ উর্দু গান ও কবিতায় মহম্মদ আলি জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করা হচ্ছে।

আবার ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে স্বাধীনতার যুদ্ধে পাক সেনার বিরুদ্ধেই লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। ৩০ লক্ষ বাঙালি তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল। বাংলাদেশে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। হাজার হাজার মহিলাকে ধর্ষণ, গণধর্ষণ করা হয়েছিল। যা আজ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায় বলে ধরা হয়। জিন্নাহর সৃষ্ট দেশ থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্যই ছিল সেই লড়াই। তারাই আজ জিন্নাহকে জাতির জনক বলে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন করছে, একেও ভাগ্যের পরিহাস ছাড়া কি বলা যায়? সেই লড়াইয়ে যে দেশ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তার নাম ভারত। ইউনুসের বাংলাদেশে এখন ভারত হয়েছে শত্রু আর পাকিস্তান বন্ধু।

হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের এই রূপ দেশে এমনকি অবাক পাকিস্তানিরাও। ইসলামাবাদের কূটনৈতিক বিশ্লেষক আশফাক হাসান প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশ কি নতুন করে ইতিহাস লিখছে? আর ঢাকার সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী বলেছেন, “এটা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর চপেটাঘাত। আমি বাকরুদ্ধ!” আসলে, ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়া হওয়ার পর এবং সামরিক বাহিনীর অধীনে মহম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর, এখন বাংলাদেশের ক্ষমতা ইসলামী মৌলবাদীদের হাতেই। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পাকিস্তানিদের সহায়তা করেছিল এবং এখন ফের একবার পাকিস্তানের প্রতি তাদের দরদ উথলে উঠছে।