Russia quit ISS: আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে বিদায় নিচ্ছে রাশিয়া, নিজের পায়েই কুড়ুল মারলেন পুতিন?

Russia quit ISS: মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) রাশিয়া জানিয়েছে ২০২৪ সালের পরই তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে বিদায় নেবে। একাংশের মহাকাশ গবেষকদের দাবি, এই পদক্ষেপ রাশিয়ার মহাকাশ চর্চার ক্ষেত্রে নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারার সামিল।

Russia quit ISS: আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে বিদায় নিচ্ছে রাশিয়া, নিজের পায়েই কুড়ুল মারলেন পুতিন?
নিজের পায়েই কুড়ুল মারলেন পুতিন?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 26, 2022 | 11:30 PM

মস্কো: ২০২৪ সালেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে সরে যাবে রাশিয়া। ইউক্রেনে হামলা নিয়ে মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমী দেশগুলির বিরোধের মধ্যেই মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) এই বিরাট ঘোষণা করল ক্রেমলিন। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার উপর বহু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমী দেশগুলি। তবে এখনও পর্যন্ত মহাকাশ চর্চার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে মস্কোর সহযোগিতার সম্পর্কই ছিল। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তে, তাও বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে সরে গিয়ে, নিজেদের পৃথক মহাকাশ স্টেশন তৈরি করার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। তবে, মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত গবেষকদের দাবি, এই পদক্ষেপ রাশিয়ার মহাকাশ চর্চার ক্ষেত্রে নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারার সামিল।

জুলাই মাসের মাঝামাঝিই রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, ‘রসকসমস’এর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে ইউরি বোরিসভকে। সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, রসকসমসের নয়া প্রধান এদিন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জানান, রাশিয়া আইএসএস ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূত্রের খবর, পুতিনের সামনে তিনি নয়া রুশ মহাকাশ স্টেশন তৈরির পরিকল্পনাও উপস্থাপন করেছেন। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রসকসমসের এই নয়া পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন পুতিন। সমগ্র পরিকল্পনা শুনে তিনি বলেছেন, “ভাল।”

এরপরই ইউরি বোরিসভ বলেছেন, “আপনারা জানেন, আমরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় কাজ করি। নিঃসন্দেহে, আমরা আমাদের অংশীদারদের প্রতি আমাদের সমস্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করব। তবে ২০২৪ সালের পর স্টেশন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এই সময়ের মধ্যে আমরা একটি রুশ অরবাইটাল স্টেশন তৈরি করা শুরু করব।”

তবে এই বিষয়ে এখনও রাশিয়ার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু জানানো হয়নি বলে দাবি করেছেন নাসার পক্ষে আনচতর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেক ডিরেক্টর রবিন গ্যাটেনস। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে গ্যাটেনস বলেছেন, “আজকের খবরটি সম্পর্কে আমাদের অংশীদারের কাছ থেকে আমরা এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বার্তা পাইনি।” তিনি আরও জানিয়েছেন, নাসা কোনওভাবেই মহাকাশ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সহযোগিতার সম্পর্কের অবসান চায় না। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালেই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কার্যক্ষমতা শেষ হবে বলে মনে করা হয়েছিল। তবে, নাসা এখন জানিয়েছে, বর্তমানে স্পেস স্টেশনটি যে অবস্থায় আছে, তাতে নিশ্চিন্তে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এটি কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।

১৯৯৮ সালে পথ চলা শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের। বিভিন্ন দিক থেকেই এই পদক্ষেপ ছিল যুগান্তকারী। তার মধ্যে অন্যতম বিষয় ছিল মহাকাশ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পারস্পরিক সহযোগিতার সূচনা। তার আগে ঠান্ডা যুদ্ধ চালাকালীন, বিশ্বের এই দুই সুপার পাওয়ারের মধ্যে মহাকাশ জয় নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা চলেছিল। রাশিয়া যেখানে সবার প্রথমে মহাকাশে মানুষ পাঠিয়েছিল, আমেরিকা সবার প্রথম চাঁদে মানুষ পাঠাতে সফল হয়। ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর, দুই দেশ যখন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, মনে করা হয়েছিল দুই শক্তির সমন্বয়ে মহাকাশ চর্চার ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের শুরু হবে। কিন্তু রাশিয়ার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এই নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পুতিনের নতুন রাশিয়া আর আগের অবস্থানে থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে, সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী একাংশের মহাকাশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইএসএস থেকে প্রস্থানের সিদ্ধান্তে রাশিয়ার মহাকাশ চর্চা ক্ষেত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদের মতে, বোরিসভ যতই বলুন, ২০২৪-এর মধ্যে রাশিয়া তাদের নিজস্ব অরবাইটাল স্টেশন তৈরি শুরু করবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে একটি নতুন স্পেস স্টেশন নির্মাণ করা কার্যত অসম্ভব। ২০২৪ কেন, তার দুই বছর পরও রাশিয়ার স্পেস স্টেশন তৈরি করতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এই মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘সবচেয়ে উদার তহবিল’ পেলেও একটি পূর্ণাঙ্গ মহাকাশ স্টেশন তৈরি করতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগবে। এর অর্থ, দীর্ঘ কয়েক বছর মহাকাশে যাওয়ার কোনও জায়গা থাকবে না রাশিয়ার। ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের মানববাহী মহাকাশ উড়ান কর্মসূচিকে বন্ধ রাখতে হবে।