‘ও তো বাঁচুক’, পাঁচিলের ও পার থেকে মার্কিন সেনার হাতেই একরত্তিকে তুলে দিলেন অসহায় মা!
দেখা যাচ্ছে উচু পাঁচিলের এ পার থেকেই বিমানবন্দরের ভিতরে থাকা মার্কিন সেনার হাতে নিজের সন্তানকে তুলে দিচ্ছেন এক মহিলা। পাঁচিলের ও পারে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছিল কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
কাবুল: যতই দিন যাচ্ছে, ততই হৃদয়বিদারক ছবি সামনে আসছে কাবুল বিমানবন্দরের। তালিবানদের হাত থেকে বাঁচতে কয়েক হাজার মানুষ ছুটেছিলেন বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে। প্রথমদিকে অনেকেই প্রবেশ করতে পারলেও একটু সময় যেতেই পিছু পিছু ঢুকে পড়ে তালিবানিরাও। দখল নেওয়ার চেষ্টা করে বিমানবন্দরের। মার্কিন সেনার সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকেই বন্ধ রয়েছে বিমানবন্দরের দরজা। তবে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এখনও অনেকে পাঁচিল টপকে প্রবেশ করছেন। এমনই এক চিত্র সামনে এল যেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন সেনার হাতে নিজের কোলের সন্তানকে তুলে দিচ্ছেন মা।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা বাসিন্দাদের অসহায়তা ও বাঁচার চেষ্টা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তালিবানরা আশ্বাস দিয়েছে, শহরে রক্তক্ষয়ী কোনও ঘটনা ঘটবে না। তারা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর চান। শহর ছেড়ে পালানোর দরকারও নেই কারোর। যদিও অতীতের কথা মনে রেখেই তালিবানদের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করতে রাজি নয় কাবুলিওয়ালারা। সেই কারণেই তারা শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন।
গত সোমবার থেকেই কাবুল ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রথম দিকে কিছু সংখ্যক মানুষ ভাগ্যক্রমে বিমানবন্দরে ঢুকতে পারলেও পরে তাদের পিছু নেয় তালিবান মুজাহিদ্দিন। তারা বিমানবন্দর দখল নেওয়ার চেষ্টা করতেই পাল্টা গুলি চালায় মার্কিন সেনা। দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই শেষ আশ্রয়ের খোঁজে নানা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে আফগান বাসিন্দাদের।
সম্প্রতিই ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল, বিমানবন্দরে একটি প্লাস্টিকের বড় ট্রে তে পড়ে রয়েছে একটি শিশু। আশেপাশে তাঁর মা-বাবার কোনও চিহ্ন নেই। সেই ছবি মনে করিয়েছিল সিরিয়ায় আয়লানের ছবি, যাকে সমুদ্র সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল।
এ বার ভাইরাল হয়েছে অপর একটি ছবি, যেখানে দেখা যাচ্ছে উচু পাঁচিলের এ পার থেকেই বিমানবন্দরের ভিতরে থাকা মার্কিন সেনার হাতে নিজের সন্তানকে তুলে দিচ্ছেন এক মহিলা। পাঁচিলের ও পারে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছিল কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে নিজের সন্তানকে তালিবানদের হাত থেকে রক্ষা করার শেষ চেষ্টা সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল অবধি তালিবানি শাসনে মহিলাদের শিক্ষা-স্বাধীনতার অধিকার কেড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে যৌনদাসী বানানো বা প্রকাশ্যে খুনের মতো বহু ঘটনার জেরেই এ বার আর তালিবানের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করতে রাজি নয় আফগান বাসিন্দারা। সেই কারণেই তারা বিভিন্ন দেশের বিমানে করে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন।
ঘটনাটি যে দিনের, সেইদিনই কাবুল বিমানবন্দর থেকে একটি ব্রিটিশ বিমান উড়ান নিয়েছিল। সেই বিমানে ওই বাচ্চাটিকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেন ওয়ালেস জানান, অভিভাবক ছাড়া কোনও শিশুদের নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। যদিও তার ধারণা ওই শিশুটি তার পরিবারের সঙ্গেই গিয়েছে। আরও পড়ুন: স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার, ভাগ্যের পরিহাসে আকাশ থেকেই খসে পড়ে মৃত্যু উঠতি আফগান ফুটবল তারকার