জলের দাম ৩ হাজার টাকা, এক থালা ভাত মিলবে ৭ হাজারে! চরম অরাজকতা বিমানবন্দরের ভিতরেও

বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের বাইরে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহতও হয়েছেন দেড়শোর বেশি মানুষ। তবুও তালিবানি শাসন থেকে মুক্তি পেতে ফের বিমানবন্দরেই ভিড় জমিয়েছেন তারা।

জলের দাম ৩ হাজার টাকা, এক থালা ভাত মিলবে ৭ হাজারে! চরম অরাজকতা বিমানবন্দরের ভিতরেও
বিমানবন্দরের বাইরে এইধরনের অস্থায়ী দোকানই মিলছে খাবার ও জল।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 28, 2021 | 8:02 AM

কাবুল: বিমানবন্দরের বাইরেই হোক বা ভিতরে, যে দিকেই তাকানো হয়, কেবল হাজার হাজার মানুষই চোখে পড়ে। অনেকেই নিজের দেশে ফিরছেন, বাকিদের গন্তব্য অজানা। তবে লক্ষ্য সবার একটাই, তালিবানি শাসন থেকে মুক্তি। বিমানবন্দরের বাইরে ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই বিমানবন্দরের ভিতরেও দিনের পর দিন অভুক্ত থেকেও মৃত্যু কোনও অসম্ভব বিষয় নয়, কারণ সেখানে এক বিন্দু জলের দামও আকাশছোঁয়া।

গত সপ্তাহে কাবুল দখলের পর থেকেই দেশজুড়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তালিবানি শাসন থেকে মুক্তি পেতে হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরের দিকে ছুট লাগিয়েছেন। শেষ সম্বলটুকুও নিয়ে আসতে পারেননি অনেকেই। প্রথম কদিন বিমানবন্দরে ঢুকতে পারলেও তালিবানিরা বিমানবন্দর দখলের চেষ্টা করায় মার্কিন বাহিনীরস সঙ্গে যে সংঘর্ষ হয়, তারপর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দরের সমস্ত দরজা। কাঁটাতারের ওপারেই অপেক্ষা করে রয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

তবে বিমানবন্দরের ভিতরে যারা এক সপ্তাহ ধরে উদ্ধার হওয়ার আশায় আটকে রয়েছেন, তারাও খুব একটা ভাল নেই। কারণ সেখানে না আছে জল বা খাবার। বিমানবন্দরের বাইরে জল ও খাবার বিক্রি হলেও তা কেনার সাধ্য নেই অধিকাংশের। এক বোতল জলই সেখানে বিক্রি হচ্ছে ৪০ মাকিন জলারে, ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য তিন হাজার টাকা। এক থালা ভাত খেতে চাইলে খরচ করতে হবে ১০০ ডলার অর্থাৎ সাত হাজার টাকা।

যারা প্রাণভয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন, তাদের পক্ষে নিজের বা পরিবারের জন্য অল্প খাবার বা জল কেনার কথা কল্পনাও করা সম্ভব নয়। তবে আফগান নাগরিকদের কথা ভেবেও এই দাম ধার্য করা হয়নি, কারণ খানার বিক্রেতাদের সাফ কথা, মার্কিন ডলার থাকলে তবেই খানার মিলবে। সম অঙ্কের অন্য কোনও দেশের টাকা দিলে চলবে না।

রয়টার্সের শেয়ার করা ওই ভিডিয়োয় খাবারের দাম শুনেই এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, এই খাবার আফগানিদের জন্য় নয়। তাদের কাছে এত টাকাও নেই আর অনেকের সামর্থ্য থাকলেও এই পরিস্থিতি টাকা জোগাড় করা অসম্ভব।

বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের বাইরে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহতও হয়েছেন দেড়শোর বেশি মানুষ। তবুও তালিবানি শাসন থেকে মুক্তি পেতে ফের বিমানবন্দরেই ভিড় জমিয়েছেন তারা। বিগত কয়েকদিন ধপে কাঁটাতার পেরিয়ে ঢোকার চেষ্টা করলেও তা বিফল হয়েছে। তাই এ বার অন্য পথ খুঁজে নিয়েছেন আফগানিরা।

বিমানবন্দরের বাইরেই যে বর্জ্য পদার্থের যে নালা গিয়েছে, তার মধ্যে দিয়ে তারা বিমানবন্দরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন। বাকি সময় যে নালার দুর্গন্ধে ৫ মিনিটও দাঁড়ানো যায় না, সেখানেই ১-২দিনব ধরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সকলে। একদিন আগেই এই নালাতেই পড়েছিল বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া মৃতদেহগুলি। যে টুকু জল বয়ে যাচ্ছিল, তাও রক্তের রঙে লাল হয়ে গিয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এখনও অবধি কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ভিড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন উদ্ধার হওয়ার আশায়। তবে ফ্রান্স, জার্মানির তরফে ইতিমধ্যেই উদ্ধারকার্য শেষ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি দেশগুলিও একে একে জানিয়ে দিচ্ছে, নিজেদের দেশের নাগরিক ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। আরও পড়ুন: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে মহিলাদের কাজের অধিকার, সরকার গড়তে একাধিক বড় সিদ্ধান্ত তালিবানের