শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে মহিলাদের কাজের অধিকার, সরকার গড়তে একাধিক বড় সিদ্ধান্ত তালিবানের

নয়া সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে আইন ব্যবস্থা, অন্তর্বর্তী সুরক্ষা, প্রতিরক্ষা, বিদেশমন্ত্রক, অর্থ, তথ্যমন্ত্রকে। এছাড়াও কাবুলকে ঘিরে একটি বিশেষ মন্ত্রক গঠনের পরিকল্পনা চলছে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে মহিলাদের কাজের অধিকার, সরকার গড়তে একাধিক বড় সিদ্ধান্ত তালিবানের
অফিসে যখন যেতেন, কানে ইয়ারফোন গুঁজে বলিউড শিল্পী নেহা কক্করের গান শোনা ছিল তাঁর রোজকার অভ্যাস। কিন্তু তালিবানি দৌরাত্ম্যে জুলাই মাস থেকেই অফিস যাওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এতদিন বাড়িতে বসেই খারাপ সময়গুলো কাটাতেন নিজের প্রিয় সঙ্গীতশিল্পী নেহার কক্করের গান শুনে। রবিবার ভারত থেকে এক সংবাদিক বন্ধু তাঁকে রবীন্দ্রনাথের 'তুমি রবে নীরবে...' গানটির এসরাজ সংস্করণ পাঠায়। তারপর সেটাই স্পিকারে হালকা শব্দে শুনছিলেন তিনি। হয়তো মনটা শান্ত রাখতে সেটা কিঞ্চিৎ সাহায্য করেছিল।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 28, 2021 | 6:51 AM

কাবুল: আর দেরী নয়। শীঘ্রই সরকার গঠন করতে চায় তালিবান। বিমানবন্দরে অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার পরই নড়েচড়ে বসেছে তালিব গোষ্ঠী, আফগানিস্তানের শাসন ব্যবস্থা নিজেদের মুঠোয় রাখতে আপাতত একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিল তারা। ইতিমধ্যেই কোন পদে কে বসবেন, তা নিয়ে আলোচনা করছেন শীর্ষ নেতৃত্বরা, এমনটাই তালিবান সূত্রে খবর।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার কাবুলের হামিদ কারজ়াই বিমানবন্দরের বাইরে যে হামলা হয়, তারপরই দ্রুত নিজেগদের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য অন্তর্বতী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কতদিনের জন্য এই সরকার গঠন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

তালিব সূত্রে খবর, আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারে দেশের সমস্ত বর্ণের মানুষদেরই জায়গা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালিবান। দীর্ঘ এত বছর ধরে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা উপভোগ করেননি কেউই। তালিবানিদের পরিকল্পনা, দেশের সমস্ত মানুষকে একজোটে শাসন করতে বিভিন্ন বর্ণের মানুষদের হাতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এদের মধ্যে পস্তুন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রদেশের ছোট জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও থাকবেন।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালিবানের তরফে জানানো হয়েছে, ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তানের দায়িত্বভার পালনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারে একজন “আমির-উল-মোমিনিন” অর্থাৎ শীর্ষনেতার বিশ্বাসভাজন কোনও তালিবান কম্যান্ডার এই দায়িত্ব পাবেন।  ইতিমধ্যেই তালিবানের শীর্ষ নেতারা আগামিজদিনের তালিব সরকার ও তার মন্ত্রী কারা হবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করেছেন।

নয়া সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে আইন ব্যবস্থা, অন্তর্বর্তী সুরক্ষা, প্রতিরক্ষা, বিদেশমন্ত্রক, অর্থ, তথ্যমন্ত্রকে। এছাড়াও কাবুলকে ঘিরে একটি বিশেষ মন্ত্রক গঠনের পরিকল্পনা চলছে। সরকার গঠনে সাহায্য করতে ইতিমধ্যেই কাবুলে এসে পৌঁছেছেন তালিবানের সহ প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বরাদর। অন্যদিকে, তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ ওমারের ছেলে মোল্লাহ মোহাম্মদ ইয়াকুবও কাুন্দাহার  থেকে রাধানীতে এসে উপস্থিত হয়েছেন। তাজিক  উজবেকের উপজাতিগুলির নেতাদেরও সরকারের অংশ করতে চাইছে তালিবান, এমনটাই সূত্রের খবর।

তালিবানদের দাবি, আমেরিকার তরফে বারংবার চাপ দেওয়া হচ্ছে পুরনো সরকার থেকেও কিছুজনকে নতুন সরকারে জায়গা দিতে। এদের মধ্যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজ়াই, আফগানিস্তানের হাই কাউন্সিলের প্রাক্তন প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ রয়েছেন।

মহিলাদের অধিকারের প্রশ্নে তালিবান নেতারা জানিয়েছেন, আগের সরকারে যেমন মহিলারা কাজ করতেন, এই সরকারেও তারা বিভিন্ন সরকারি বিভাগের অধীনে কাজ করতে পারবেন। তবে মূলত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতেই কাজের অধিকার সীমাবদ্ধ থাকবে। এছাড়াও, একটি বিশেষ আদালত গঠন করা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে। স্থানীয় স্তরে গঠিত এই বিশেষ আদালত দুর্নীতি দমন ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে, যাতে আগামিদিনে এই ধরনের অপরাধ আর কেউ না করে। আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: তালিবানকে শক্তিশালী বানাল কারা? নেপথ্যেই বা কে?