Ansarullah Bangla Team: ইউনুসের প্রশ্রয়ে ফের চাঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আনসার! কেন চিন্তায় মোদী সরকার?

Ansarullah Bangla Team: আনসারুল্লা বাংলা টিম, আল কায়েজার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের এই ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। জেলবন্দি ছিল, তাদের সর্বোচ্চ নেতা জসিমুদ্দিন রহমানি। তবে, হাসিনার বিদায়ের পর বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। রহমানিকে মুক্তি দিয়েছে ইউনুস সরকার। আনসার কিন্তু এপার বাংলাতেও জঙ্গি ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা করেছে।

Ansarullah Bangla Team: ইউনুসের প্রশ্রয়ে ফের চাঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আনসার! কেন চিন্তায় মোদী সরকার?
প্রতীকী ছবিImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Sep 03, 2024 | 10:07 PM

ঢাকা: ঢাকার গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার। জেলের প্রধান গেটের ছোট দরজাটার বাইরে তঠস্থ জেলরক্ষীরা। আছে বাংলাদেশ সেনার সদস্যরাও, আর কয়োকশো জনতা। ছোট দরজাটা খুলে বেরিয়ে এল সাদা কুর্তা, চেক কাটা লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তি। মাথায় সাদা ফেজটুপি, ঘাড়ে সযত্নে ফেলা লাল-সাদা চেককাটা কাফিয়ে। গোফ নেই, দাড়ি আছে। সেনার সামনেই তাঁর মাথায় পুষ্পবৃষ্টি করা হল। তারপর তিনি উঠল এক হুডখোলা কালো রঙের এসইউভিতে। তাকে দেখেই তীব্র চিৎকারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল উপচে পড়া ভিড়। হুডখোলা গাড়ি থেকে ডিক্টাফোনে বক্তৃতা শুরু করল ওই ব্যক্তি। গলার শিড় ফুলিয়ে বলল, “প্রতিশোধ চাই”। সমবেত জনতাও একসঙ্গে গর্জে উঠল ‘প্রতিশোধ, প্রতিশোধ…’। তারপর আবার ওই ব্যক্তির আস্ফালন, “শেখ হাসিনা দেখুন, আপনি যাকে জেলে রেখেছিলেন, সে আজ বাইরে। আর আপনি? দেশের বাইরে।” জনতার ভিড় থেকে উঠল আরও এক রাউন্ড চিৎকার। এরপর ঢাকার রাজপথে শোভাযাত্রা করে এগোল তার গাড়ি। তাকে নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে গেল সেই দেশের সেনা। কে এই ‘বিশিষ্ট’ ব্যক্তি? বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিম বা আনসারুল্লা আল ইসলাম-এর প্রধান, জসিমুদ্দিন রহমানি।

শুধু হাসিনার মাথাব্যথা ছিল না

শেখ হাসিনা তাকে জেল বন্দি করে রেখেছিলেন। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন শেখ হাসিনা। এখন সেই দেশে চলছে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর তাঁর সরকারের আমলেই, সম্প্রতি জেল থেকে ছাড় পেয়েছে দুর্ধষ্য জঙ্গি নেতা মুফতি জসিমউদ্দিন রহমানি। বাংলাদেশে একাধিক নাস্তিক-যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক লেখকদের হত্যার সঙ্গে জড়িত তার সংগঠন আনসুরল্লাহ বাংলা টিম। সোজা কথায় একটি জঙ্গি সংগঠন। তাদের অনুপ্রেরণা, বিন লাদেনের আল কায়েদা। শুধু অনুপ্রেরণাই নয়, তারা ‘আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’ বা ‘আইকিউইএস’-এর সঙ্গে যুক্তও বটে। যাদের লক্ষ্য, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করা। তবে, আনসারুল্লাহ শুধু শেখ হাসিনার বাংলাদেশের মাথাব্যথা ছিল না। ভারতের জন্যও যথেষ্ট চিন্তার কারণ আনসার। আর বর্তমান বাংলাদেশে তাদের নেতাকে যেভাবে প্রায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পাহারা দিল তাদের সেনা, নয়া দিল্লির চিন্তার কারণ আছে বইকি!

আনসারের উৎস

২০০০-এর প্রথম দশকে বাংলাদেশে ‘জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’ নামে এক ভয়ঙ্কর জঙ্গি গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়েছিল। আনসারুল্লা বাংলা টিমের উদ্ভব সেই জঙ্গি গোষ্ঠী থেকেই। ২০০৪ সালের ৩০ জুন, বাংলাদেশের বরগুনা সদর উপজেলায় এক জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অভিযান চালিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছিল ৩৩ জন জঙ্গি। তবে, পালিয়ে গিয়েছিল তাদের প্রশিক্ষক। আটক জঙ্গিদের জেরা করে জানা গিয়েছিল, জসিমউদ্দিন নামে ঢাকার মহম্মদপুরের জামেয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসার এক শিক্ষক ওই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল। ওই মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে অবশ্য কাউকে পাওয়া যায়নি। ২০০৭ সালে জেএমবি প্রধান-সহ জামাতুলের আরও কয়েকজন নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ফলে, তাদের জঙ্গি তৎপরতা অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছিল। এর পাঁচ বছর পর, ২০০৯ সালে জসিমউদ্দিনই গঠন করেছিল ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’। এরপর থেকে তারা গোপনে সদস্য সংগ্রহ করে গিয়েছে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে শুরু হয় তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড।

আনসারের জঙ্গি কার্যকলাপ

বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি ধাপে নাশকতা চালায় এবিটি। শেষতম ধাপ হল, নিশানা করে হত্যা করা। যা এর আগে, বাংলাদেশের কোনও জঙ্গি সংগঠনের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। আহমেদ রাজীব হায়দার, আসিফ মহিউদ্দিন, অভিজিৎ রায়, ওয়াসিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, একেএম শফিউল ইসলাম-সহ বহু বিশিষ্ট বাংলাদেশি নাস্তিক ব্লগারদের হত্যার দায় স্বীকার করেছে তারা। হত্যার আগে, তাদের হুমকি দেওয়া হত। শুধু তাই নয়, ২০২২-এর নভেম্বরে, ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত দুই জঙ্গিকে ঢাকার একটি আদালত কক্ষ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আনসার। মোটরবাইকে করে এসে রাসায়নিক স্প্রে করে পুলিশকে নিরস্ত্র করে দিয়েছিল তারা।

একই সঙ্গে, একটি ব্যাঙ্ক ডাকাতির অভিযোগও রয়েছে এই জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাঙ্ক লিমিটেডের একটি শাখায় এই ডাকাতি করেছিল তারা। ৮-১০ জন এবিটি সদস্য বন্দুক নিয়ে ব্যাঙ্কে ঢোকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তারা ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের মুখে বন্দুক ধরে ৫ লাখ টাকা লুঠ করার চেষ্টা করেছিল। কয়েকজন ব্যাঙ্ক কর্তা তাদের বাধা দিতে গিয়েছিল। তাদের উপর নির্বিচারে ছুরি চালায় জঙ্গিরা। চিকিৎসা চলাকালীন, এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার, এক নিরাপত্তা কর্তা এবং এক গ্রাহকের মৃত্যু হয়েছিল। তারা পালানোর সময়, স্থানীয়রা এক মসজিদের লাউডস্পিকার ব্যাঙ্ক ডাকাতির কথা ঘোষণা করলে, হিংস্র রূপ দেখা যায় আনসার সদস্যদের। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি, মলোটভ ককটেল এবং গ্রেনেড ছোডে় পথচারীদের লক্ষ্য করে। প্রায় ২০ জন আহত হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে, গণপিটুনিতে তিন এবিটি সদস্যরও মৃত্যু হয়।

নিষিদ্ধ ও নাম বদল

এই ডাকাতির ঘটনার পরই, ২০১৫ সালের মে মাসে, আনরুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল হাসিনা সরকার। সেই সঙ্গে, আনসার সদস্যদের ধরপাকড় শুরু হয়। তারও আগে, ২০১৩ সালের ১২ অগস্ট বরগুনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের প্রধান জসিমুদ্দিন রাহমানিকে। নাস্তিক যুক্তিবাদী ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে, জসিমুদ্দিন রাহমানিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল বাংলাদেশি আদালত। তার সঙ্গে ধরা পডে়ছিল আনসারের ৩১ সহযোগীও। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ-সহ আরও চারটি মামলা দায়ের হয়েছিল। সম্প্রতি, সেই সবগুলি থেকেই তাকে মুক্তি দিয়েছে ইউনুস সরকার, আর হত্যা মামলায় জামিন। এদিকে, এবিটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর সংগঠনটি ফের আত্মপ্রকাশ করে আনসার আল ইসলাম নামে। এই অবস্থায়, জসিমুদ্দিন রাহমানি মুক্তি পাওয়া যথেষ্ট চিন্তার। বিশেষ করে, ভারতের জন্য।

ভারতের চিন্তা

আনসার আল ইসলাম বা আহসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার বাংলা-কে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত পশ্চিমবঙ্গ, অসম সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ। তাদের রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের মাটিতে তারা এখনও তাদের পুরনো নাম, আনরুল্লাহ বাংলা টিম নামেই সক্রিয়। দুই রাজ্যেই এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে তাদের সন্ত্রাসবাদের জাল ছড়াতে চাইছে আনসার। চলতি বছরের মে মাসেও গুয়াহাটি রেলস্টেশন থেকে এবিটি-র দুই জঙ্গিকে আটক করেছিল অসম পুলিশ। উত্তর-পূর্ব ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালাতে লস্কর-ই-তৈবা-সহ পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির অংশীদারও হয়েছে তারা। এমনকি, ২০২২-এ লস্করের সাহায্যে ভারতে একটি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিও স্থাপন করেছিল আনরুল্লাহ। ওই বছরই তাদের প্রায় ১০০ সদস্য ত্রিপুরায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। সম্প্রতি, হবিবুল্লাহ নামে পূর্ব বর্ধমান জেলার মানকর কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে ধরেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। পুলিশের দাবি, তার সঙ্গে আনসার আল ইসলামের যোগ আছে। অনলাইনে জঙ্গি প্রচার চালাত সে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের পিছনেও আনসারের হাত থাকার প্রমাণ পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা।