Rabindranath Tagore Jayanti 2022: রবীন্দ্রকবিতা পড়ে অবহেলায় শিবপুর শ্মশানের চিতার সামনে

Rabindra Kabita: এখন চরম ঔদাসীন্য আর অবহেলার শিকার ঐতিহাসিক এই ফলকটি। অনেকেই দেখেন শিবপুর শ্মশানের কাঠের চুল্লির সামনে এই প্রায় ম্লান শ্বেতপাথরের ফলক। গুরুত্ব দেন না

Rabindranath Tagore Jayanti 2022: রবীন্দ্রকবিতা পড়ে অবহেলায় শিবপুর শ্মশানের চিতার সামনে
অবহেলার শিকার রবীন্দ্রকবিতা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 09, 2022 | 1:00 PM

নন্দন পাল

চরম ঔদাসীন্য আর অবহেলার শিকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কবিতার খোদাই করা ফলক। অনেকেই দেখেন শিবপুর শ্মশানের কাঠের চুল্লির সামনে এই প্রায় ম্লান শ্বেতপাথরের ফলক। গুরুত্ব দেন না। ভ্রাতুস্পুত্রী শোভনার মৃত্যুতে একটি আট লাইনের কবিতা লেখেন পিতৃব্য রবীন্দ্রনাথ। সেই শোকগাথা সম্বলিত ফলকই এখন অনাদরে। শিবপুর শ্মশান ঘাটের কাঠের চুল্লির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করার মুখে সেই কবিতা আজও রয়েছে। তাতে লেখা- “শোভনা,

অন্তর বিকিরণে তব জীবন শতদল মুদিলতার আঁখি। মরমে যাহা ব্যাপ্ত ছিল স্নিগ্ধ পরিমল মরণে নিল ঢাকি’। লয়ে গেল সে বিদায়কালে মোদের আঁখিজল মাধুরীসুধা সাথে। নূতন লোকে শোভনারূপ জাগিবে উজ্জ্বল বিমল নবপ্রাতে।।’’

১৯০৩-এ স্থানীয় মানুষদের আর্থিক অনুদানে তৈরি হয় হাওড়ার শিবপুরের শ্মশানঘাট। অর্থদাতাদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী উগর মল লোহিয়া। তাঁর নামানুসারেই এই শ্মশান ঘাটের তৎকালীন নাম হয় উগর মল লোহিয়া বার্নিং ঘাট। এই শ্মশান ঘাটের সঙ্গে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের মানুষের যোগ প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি। গঙ্গার পূর্ব পাড়েরও যোগও রয়েছে এই শ্মশানের সঙ্গে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই পুত্র হেমেন্দ্রনাথ ও বীরেন্দ্রনাথের বিবাহ হয় হাওড়ার বেতড়ের ৪ নম্বর মহেশ পাল লেনের বাসিন্দা হরদেব চট্টোপাধ্যায়ের দুই কন্যা নীপময়ী-প্রফুল্লময়ীর সঙ্গে।

হাওড়ার লোক গবেষক ডাঃ সুকান্ত মুখোপাধ্যায় বলছেন, “বিশ্বকবির সেজদাদা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ন’দাদা বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন হাওড়ার জামাই। হেমেন্দ্রনাথের বিবাহের সময়ে তৎকালীন সাঁতরাগাছি ছিল ব্রাহ্মণ অধ্যুষিত। তাঁরা ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে এই বিবাহের প্রতিবাদ করেন। সেই বিবাহে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ লাঠিয়াল নিয়ে স্বয়ং উপস্থিত হন। পুলিশের সার্জেন্ট ও লাঠিয়ালদের উপস্থিতিতে হেমেন্দ্রনাথ এবং নীপময়ীর বিবাহ হয়। হেমেন্দ্রনাথের লেখা ‘আমার বিয়ের কথা’ পুস্তিকায় এই ঘটনার উল্লেখ করেন।’’

হেমেন্দ্রনাথ ও নীপময়ীর এগারো জন সন্তানের মধ্যে দুই কন্যা শোভনা ও সুষমা। অদ্ভুতভাবে তাঁদেরও আবার বিবাহ হয় হাওড়ার শিবপুরের একই বাড়িতে। শোভনার স্বামী নগেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং সুষমার স্বামী যোগেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন দুই ভাই। ঠাকুরবাড়িতে বেড়ে ওঠা, লরেটো স্কুলের ছাত্রী শোভনা ছিলেন বিদুষী। তিনি ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে বেশ কিছু ট্রাভেলগ লেখেন। এছাড়াও তিনি দেশীয় গাছ-গাছালির ওপরে ‘ইন্ডিয়ান প্ল্যান্টস’ নামের বেশ কিছু পুস্তিকা লিখেছিলেন। তখনকার দিনের দু’টি বিখ্যাত বইয়ের লেখিকা ছিলেন শোভনা মুখোপাধ্যায়- ইন্ডিয়ান ফেবলস এন্ড ফোকলরস আর ওরিয়েন্টাল টেলস। ভ্রাতুস্পুত্রী শোভনার মৃত্যুতে আট লাইনের কবিতা লেখেন কাকা রবীন্দ্রনাথ।

শোভনার স্বামী নগেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের লেখা সেই শোকগাথা চিতপুরের কাশী স্টোন স্টোর থেকে খোদাই করিয়ে এনে স্থাপন করেন শিবপুর শ্মশানের পুরানো বাড়ির পূর্বদিকের দেওয়ালে। বহুদিন অলক্ষ্যেই ছিল এই আট লাইনের কবিতা। মাত্র ত্রিশ বছর আগে রবীন্দ্ররচনাবলীর অন্তর্গত হয়েছে এই শোককাব্য।

অথচ এখন চরম ঔদাসীন্য আর অবহেলার শিকার ঐতিহাসিক এই ফলকটি। অনেকেই দেখেন শিবপুর শ্মশানের কাঠের চুল্লির সামনে এই প্রায় ম্লান শ্বেতপাথরের ফলক। গুরুত্ব দেন না। তবে পরে বুঝতে পেরে বলেন প্রয়োজন সংরক্ষণের।শিবপুর শ্মশানে অনাদরে শুধু কি রবীন্দ্রনাথ? শ্মশান থেকে গঙ্গার পাড়ের দিকে গেলে দেখা যায় হাওড়ার একঝাঁক উজ্জ্বল মানুষদের স্মৃতিসমাধির বাগানে অবহেলার জঙ্গল আর শুকরের প্রতিপালন। শ্মশানযাত্রীরা অভিযোগ করেন বিদেহী প্রিয়জনের অস্থি বিসর্জনের ঘাটটিও ভেঙে বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়ে রয়েছে। হুঁশ নেই কারও। এই অবজ্ঞা আর উদাসীনতার রোজনামচার মাঝে অগুনতি মৃত্যুর সাক্ষী একলা রবীন্দ্রনাথ!

Rabindranath

অগুণতি কবিতার সাক্ষী একা রবীন্দ্রনাথ

মৃত্যুকে বহুবার বড় কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। মরণ তাঁর কাছে কখনও ‘শ্যাম সমান’ আবার কখনও পুত্রশোকে মলম দেওয়া ‘দেবালয়ের প্রদীপ’সম। নিশিদিন অনির্বাণ আলোকশিখার প্রত্যাশী বিশ্বকবির আট লাইনের এই কবিতা আজও একলা সাক্ষী হাজার হাজার চিতার জ্বলে ওঠা আর নিভে যাওয়ার মাঝে।