Opposition Unity: বিরোধী ঐক্য ‘সোনার পাথরবাটি’! সংখ্যালঘু হয়েও রাজ্যসভায় যেভাবে একের পর এক বিল পাশ করে মোদী সরকার

Opposition Unity: রাজ্যসভায় এনডিএ-র হাতে রয়েছে ১১০টি আসন, আর বিরোধীদের হাতে ১২৯টি। কাজেই সংখ্যার হিসেবে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেই কেন্দ্রের আনা যে কোনও বিল তারা রাজ্যসভায় আটকে দিতে পারে। কিন্তু, বিরোধী ঐক্য যে বরাবরই সোনার পাথরবাটি।

Opposition Unity: বিরোধী ঐক্য 'সোনার পাথরবাটি'! সংখ্যালঘু হয়েও রাজ্যসভায় যেভাবে একের পর এক বিল পাশ করে মোদী সরকার
গ্রাফিক্স - অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 23, 2023 | 9:35 PM

নয়া দিল্লি: দিল্লি রাজ্য সরকারের আমলা নিয়োগ ও বদলি বিষয়ে কেন্দ্রের জারি করা একটি অধ্যাদেশ রাজ্যসভায় খারিজ করার জন্য সকল বিরোধী দলের সমর্থন চাইছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন আদায়ে, মঙ্গলবার (২৩ মে), কলকাতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। তৃণমূল নেত্রী সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যসভায় যদি বিলটিকে আটকে দেওয়া যায়, তাহলে সেটাই হবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। তবে, শেষ পর্যন্ত কি রাজ্যসভায় বিলটিকে আটকাতে পারবে বিরোধীরা? সেই বিষয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। লোকসভায় বিজেপি তথা এনডিএ-র নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কাজেই লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের আনা কোনও বিল আটকানো বিরোধীদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু রাজ্যসভার আসনের মধ্যে এনডিএ-র হাতে রয়েছে ১১০টি আসন, আর বিরোধীদের হাতে ১২৯টি। কাজেই সংখ্যার হিসেবে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেই কেন্দ্রের আনা যে কোনও বিল তারা রাজ্যসভায় আটকে দিতে পারে। কিন্তু, অতীতে একের পর এক বিলের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল

মোদী সরকরের আমলের সবথেকে চর্চিত এবং বিতর্কিত বিল ছিল নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৯ বা সিএবি ২০১৯। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর বিলটি নিয়ে রাজ্যসভায় ভোটাভুটি হয়েছিল। রাজ্যসভার ১২৫ জন সদস্য বিলটিকে সমর্থন করেছিলেন, ১০৫টি ভোট পড়েছিল বিরুদ্ধে। সেই সময় নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং শিরোমণি অকালি দল বিজেপির সঙ্গী ছিল। এই দুই শরিক দলের ভোট পাওয়ার পাশাপাশি এআইএডিএমকে, নবীন পট্টনায়কের বিজেডি, চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি এবং জগন্মোহনের ওয়াইএসআর কংগ্রেস দল বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছিল। শিবসেনার সঙ্গে ততদিনে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল বিজেপির। লোকসভায় তারা সিএবি-কে সমর্থন করেছিল, কিন্তু রাজ্যসভায় ভোটদান থেকে বিরত ছিল তারা।

কৃষি বিল

২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্যসভায় ধ্বনি ভোটে পাশ হয়েছিল দুই কৃষি বিল – ফার্মার্স প্রোডিউস অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) বিল, ২০২০ এবং ফার্মার্স (এমপাওয়ামেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যাস্যুরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস বিল, ২০২০। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দল বিলটির উপর ভোটাভুটির দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু, রাজ্যসভার অধ্যক্ষ সেই দাবি মানেননি। এর প্রতিবাদে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন বিরোধী সাংসদরা।

শ্রম বিধি বিল 

২০২০-র ২৩ সেপ্টেম্বর রাজ্যসভায় পাশ হয়েছিল ৩টি শ্রম বিধি বিল – অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশন কোড, ২০২০, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনম কোড ২০২০ এবং কোড অন সোশ্যাল সিকিওরিটি, ২০২০। এই বিলের বিষয়ে বিরোধীদের ভোটাভুটির দাবি আমল দেননি রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান। এর বিরোধিতায় সংসদের দুই কক্ষই বয়কট করেছিল বিরোধীরা। বিরোধীশূন্য রাজ্যসভায় পাশ হয়েছিল এই তিন শ্রম বিধি বিল। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের সাংসদরা সংসদ এলাকায় গান্ধী মূর্তি থেকে আম্বেদকরের মূর্তি পর্যন্ত মিছিল করেছিলেন।

তিন তালাক বিল

২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি, তিন তালাক বিল বা, মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অব রাইটস অন ম্য়ারেজ) বিল ২০১৯ পাস হয় রাজ্যসভায়। জেডিইউ এবং এআইডিএমকে-র মতো বিজেপির শরিক দলগুলি বিলটির বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু, বিলটির বিরুদ্ধে ভোটদানের বদলে এই দুই দল ভোটদানে বিরত ছিল। তাদের অনুপস্থিতিই বিলটি পাশ হতে সহায়তা করেছিল। ভোটাভুটিতে বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ৯৯ জন বিধায়ক। আর বিরুদ্ধে ভোট পড়েছিল ৮৫টি। এনডিএ-র বাইরে থাকা বিজেডি বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছিল।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল বিল

২০১৯ সালের ৫ অগস্ট রাজ্যসভায় পাশ হয়েছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর রিঅর্গানাইজেশন বিল। এই বিলর পক্ষে ভোট পড়েছিল ১২৫টি এবং বিপক্ষে ৬১টি, একজন ভোটদানে বিরত ছিলেন। পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির দুই সাংসদ রাজ্যসভার মধ্যেই সংবিধান ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করার পর তাঁদের সংসদ ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। বিরোধী শিবিরের অন্যতম অংশ, মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি বা বিএসপি এবং শিব সেনা বিলটির পক্ষে ভোট দেয়। এছাড়া এআইএডিএমকে, বিজেডি এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসও বিলটিকে সমর্থন করেছিল।

কাজেই দেখা যাচ্ছে, বিরোধীদের হাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যা থাকলেও, তাদের ঐক্যের অভাব রাজ্যসভায় বারবারই বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সুবিধা করে দিয়েছে। কখনও বিরোধীদের একাংশ কেন্দ্রকে সমর্থন করেছে, কখনও বিরোধী দলগুলির মধ্যে কোনও দল ভোটদানে বিরত থেকেছে। আর তাতে লাভ হয়েছে সরকার পক্ষেরই। বিরোধীদের অনৈক্যের সুযোগেই একের পর এক বিল পাশ হয়েছে রাজ্যসভায়। কাজেই, কেজরীবালের আহ্বানে কেন্দ্রের পাশ করা অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে বিরোধীরা কতটা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, এখন সেটাই দেখার।