মমতার ‘মস্তিষ্কপ্রসূত’ ফ্রেট করিডরের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর, সমালোচনায় মুখর তৃণমূল

নতুন ফ্রেট করিডরের মাধ্যমে রাজ্যের ডানকুনি থেকে পঞ্জাবের লুধিয়ানা অবধি সংযোগ স্থাপন হবে।

মমতার 'মস্তিষ্কপ্রসূত' ফ্রেট করিডরের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর, সমালোচনায় মুখর তৃণমূল
নতুন ফ্রেট করিডরের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি:ANI
Follow Us:
| Updated on: Dec 29, 2020 | 7:32 PM

কলকাতা: আত্মনির্ভরতাই মন্ত্র প্রধানমন্ত্রীর। মঙ্গলবার নিউ ভাউপুর-নিউ খুরজা (New Bhaupur-New Khurja) রুটে পণ্যবাহী রেল করিডরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পূর্ব থেকে পশ্চিম ভারত পণ্য পরিবহনের সুবিধায় উদ্বোধন হল এই ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের (Dedicated Freight Corridor project)। এই নতুন ফ্রেট করিডরের মাধ্যমে রাজ্যের ডানকুনি থেকে পঞ্জাবের লুধিয়ানা অবধি সংযোগ স্থাপন হবে। ভার্চুয়াল মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভরতার কথা বলেন। অন্যদিকে, ফ্রেট করিডর উদ্বোধনের পরই প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনায় সরব তৃণমূল।

৫৭৫০ কোটি টাকা খরচে তৈরি ৩৫১ কিমির এই করিডরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “এই ফ্রেট করিডরগুলি আত্মনির্ভর দেশ গড়তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এর মাধ্যমে কৃষক, ব্যবসায়ীরা সহজেই তাঁদের পণ্য পরিবহন করতে পারবে।” অনুষ্ঠানে বিরোধীদের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “২০০৬ সালেই এই প্রকল্পের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্ত রাজ্য সরকারগুলি বা কেন্দ্র, কেউই এই প্রকল্প নিয়ে একটুও তৎপরতা দেখায়নি। ২০১৪ সাল অবধি একটি ট্রাকও বসানো হয়নি এবং নির্ধারিত আর্থিক অনুদানও সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। ২০১৪ সালের পর সরকার এই প্রকল্পকে পুনরায় শুরু করে কিন্তু ততদিনে বাজেট প্রায় ১১গুণ বেড়ে গিয়েছে।”

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলির সমালোচনা করা নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটের রাজনীতি করতেই ডানকুনি- লুধিয়ানা সংযোগকারী ফ্রেট করিডর উদ্বোধন করা হল। ২০১১ সালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই মমতা বন্দোপাধ্যায় এই ফ্রেট করিডরের পরিকল্পনা করেছিলেন। পূর্ব ভারত থেকে পশ্চিম ভারতে পণ্য পরিবহনের জন্য পৃথক রেলপথের প্রয়োজন, এটা প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়ই। করিডর তৈরির কাজও শুরু হয়েছিল ডানকুনি থেকে। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্র সরকার এই চিন্তাভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যায়নি।

আরও পড়ুন: দেশে করোনা প্রতিষেধকের সফল ‘ড্রাই রান’! কয়েক দিনের মধ্যেই টিকাকরণ?

হুগলি জেলা পরিষদের পূর্ত্য কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা সুবীর মুখার্জী এ বিষয়ে বলেন, “গত ছয় বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর পদে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এতদিন কেন এই কাজ করেননি? বাংলায় নির্বাচন আসছে দেখেই বিজেপির ঝুলি থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক প্রসূত পরিকল্পনা বাইরে বেরোচ্ছে। এটা থেকেই বোঝা যায় বাংলা আজ যা ভাবে, গোটা দেশ তা আগামীকাল ভাবে। আগামী দিনেও বাংলাই পথ দেখাবে।”

অন্যদিকে বিজেপির মুখপাত্র প্রণয় রায় বলেন, “১৮৩৯ কিমির মধ্যে আজ কেবল ৩৫১ কিমি পথের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে ডানকুনি পর্যন্ত করিডর চালু হয়ে যাবে। এতে ১৪ হাজার মেট্রিকটন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন হবে। মূলত চাল, ডাল, সবজি, যা দূরে নিয়ে যেতে নানা সমস্যা হত এবং পরিবহন খরচ বেশি হত, এখন আর তা হবে না, এতে বহু কৃষক উপকৃত হবে।”

তৃণমূলের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন,”এখন তৃণমূল বলছে এই প্রকল্প মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পরিকল্পিত। মমতা বন্দোপাধ্যায় শুধু ঘোষণামন্ত্রী হয়েই থেকে গিয়েছেন, কোনও অর্থ বরাদ্দ করেননি। বিজেপি সরকার এসে অর্থ বরাদ্দ করেছে। প্রধানমন্ত্রী রূপায়ণ করেন, বাস্তবায়ন করেন আর মমতা বন্দোপাধ্যায় শুধু ঘোষণা করেন। দুই দলের মধ্যে এটাই তথাৎ।”

সাংসদ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়ও প্রধানমন্ত্রীর ফ্রেট করিডর উদ্বোধন নিয়ে মুখ খোলেন। এদিন পোলবার সেঁইয়াতে তৃণমূলের এক জনসভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, “মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রথম এই করিডরের প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিলেন। আজ প্রধানমন্ত্রী বুঝছেন। তবে সেটা ভোটের আগেই কেন? খুব লোভ বাংলাকে নিয়ে। অত সহজে হবে না। অনেক আন্দোলনের পর তৃণমূল সরকারে এসেছে। আমরা এমনিই ক্ষমতায় আসিনি।”

আরও পড়ুন: ‘লভ জিহাদ’ রুখতে শিবরাজও হাঁটলেন যোগীর পথে, জারি হল অধ্যাদেশ