Bhabanipur By-Election: বিশ্লেষণ: ভবানীপুরে ‘খেলবেন’ মমতা-প্রিয়াঙ্কা, কিন্তু নির্ণায়ক ‘গোল’ দিতে পারে এই দুই ওয়ার্ড

Bhabanipur By-Election: ধর্ম এবং ভাষা, এই দুইয়ের নিরিখে কোন ওয়ার্ডের কত শতাংশ মানুষ কোন দলে ভোট দিয়ে এসেছেন, সেই প্রবণতা হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমরা।

Bhabanipur By-Election: বিশ্লেষণ: ভবানীপুরে 'খেলবেন' মমতা-প্রিয়াঙ্কা, কিন্তু নির্ণায়ক 'গোল' দিতে পারে এই দুই ওয়ার্ড
এই ভোটযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ বাজিমাত করবে, তা এই দুই ওয়ার্ডের উপরই অনেকাংশে নির্ভর করছে। অলংকরণ-অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 22, 2022 | 1:11 PM

ভবানীপুরের ভোটযুদ্ধের ডঙ্কা বাজতে শুরু করেছে সজোরে। আবহাওয়া যতই বাধ সাধুক, প্রচারে খামতি নেই নেত্রী-নেতাদের। নেত্রী প্রথমে লেখা কারণ, তৃণমূল ও বিজেপির হয়ে যে দু’জন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন, তাঁরা দু’জনেই মহিলা নেত্রী। তাঁদের সমর্থনে প্রচার করছেন নেতারা। আর এই বিধানসভায় কে জয়লাভ করবেন, তার চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ৮ টি ওয়ার্ডের বিন্যাসে। এই ৮ টি ওয়ার্ডের মানুষই ঠিক করে দেবেন, চেনা মাটিতে ফের একবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ধ্বজা ওড়াবেন, নাকি পেশায় আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল শেষ হাসি হাসবেন।

সেই ফয়সলা অবশ্য আগামী ৩ অক্টোবরই হয়ে যাবে। তবে ভবানীপুর কেন্দ্রের গুরুত্ব অন্যান্য কেন্দ্রের একটু আলাদা। কেননা, এই বিধানসভায় বাঙালি ছাড়াও একটা বড় সংখ্য হিন্দি, পঞ্জাবি, গুজরাটি-সহ বহু ভাষাভাষী মানুষেরা বসবাস করেন। ফলে এই কেন্দ্রের ভোট বিন্যাসও যে সহজে অনুমেয় নয়, তা বোধগম্য। কিন্তু আমরা সেই মুশকিল আসান করেছি। ভবানীপুরের কোন ওয়ার্ডের মানুষেরা কোন নির্বাচনে কার দিকে ভোট দেন, আবার কোন সময় কত শতাংশ মানুষের ভোট অন্যদিকে ঘুরে যায়, এই প্রতিবেদনে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরা হচ্ছে।

৬৩, ৭৭, ৭৪, ৭১, ৭০, ৭২, ৭৩, ৮২। কলকাতা পুরসভার এই ৮ টি ওয়ার্ড নিয়ে ভবানীপুর কেন্দ্র। ভবানীপুরের ভোটারদের মধ্যে ৪২ শতাংশ বাঙালি হিন্দু, ২৪ শতাংশ মুসলিম এবং ৩৪ শতাংশ অবাঙালি হিন্দু। প্রতিটি ওয়ার্ডের জনবিন্যাস, মানুষের ভাষা ও ভোট দেওয়ার চরিত্রও ভিন্ন এখানে। তাই ধর্ম এবং ভাষা, এই দুইয়ের নিরিখে কোন ওয়ার্ডের কত শতাংশ মানুষ কোন দলে ভোট দিয়ে এসেছেন, সেই প্রবণতা হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমরা।

৬৩ নম্বর ওয়ার্ড

শুরুটা করা যাক ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে। ভবানীপুরের যে কটি ওয়ার্ডে অবাঙালি আধিপত্য বেশি, তার মধ্যে অন্যতম এই ওয়ার্ড। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতিও এখানে যথেষ্ট। তুলনায় বাঙালি নিতান্তই কম। মোট ভোটারদের মধ্যে ৫০ শতাংশ এই ওয়ার্ডে অবাঙালি। মুসলিম ভোটারদের হার ৪১ শতাংশ। বাঙালি ভোটার মাত্র ৮ শতাংশ এই ওয়ার্ডে।

তাই খুব স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিতভাবে, লোকসভা ভোটে প্রতিবারই এই ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে থাকে। কিন্তু বিধানসভায় এসে হিসেবটা উল্টে যায়। ২০১৪ এবং ২০১৯-এর ভোটে এই ওয়ার্ডে বিজেপি লিড নিলেও ২০১৬ ও ২০২১ সালের বিধানসভায় এই ওয়ার্ডে জয়লাভ করে তৃণমূলই।

৭৭ নম্বর ওয়ার্ড

ভবানীপুরের এই ওয়ার্ড এককথায় পুরোপুরি মুসলিম অধ্যুষিত। এখানকার ৮৪ শতাংশ ভোটারই সংখ্যালঘু। বাঙালি ৯ এবং অবাঙালি ৭ শতাংশ। ফলে লোকসভা হোক বা বিধানসভা, এই ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের একক আধিপত্য বিরাজমান। ভোটপ্রচার শুরু হওয়ার পর এই ওয়ার্ডেই একটি মসজিদে গিয়ে ইমামদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মমতা।

৭৪ নম্বর ওয়ার্ড

ভবানীপুরে যে কয়েকটি ওয়ার্ডে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক বেশ মজবুত, তার মধ্যে অন্যতম এই ওয়ার্ড। কারণ এখানে অবাঙালি ভোটারদের হার ৪৯ শতাংশ। বাঙালি ভোটার এখানে ৩৬ শতাংশ। সংখ্যালঘুদের হার ১৬ শতাংশ।

তাই লোকসভা হোক বা বিধানসভা, এখানকার ভোটারদের পাল্লা সর্বদাই বিজেপির দিকে ঝুঁকে। ২০১৪ সাল থেকে দুই লোকসভা ও দুই বিধানসভা ভোটে এই ওয়ার্ডে মাত্র একবার, অর্থাৎ ২০১৬ সালে লিড নিতে সক্ষম হয়েছিল তৃণমূল। বাকি তিনবারই বিজেপি এগিয়ে থেকেছে।

৭১ নম্বর ওয়ার্ড

এখানে বাঙালিদের উপস্থিতি একটু বেশি হলেও হিন্দিভাষী ভোটারদের হারও যথেষ্ট। এখানে প্রায় ৫৫ শতাংশই বাঙালি। অবাঙালি ৪২ শতাংশ। মুসলিমদের খুব একটা আধিক্য নেই এখানে। সংখ্যালঘু ভোটের হার মাত্র ৩ শতাংশ। তবে ইংরাজিতে যাকে ‘ভোট সুইং’ বলা হয়, সেই প্রবণতা এখানে লক্ষ্য করা যায়।

কেননা ২০১৪ এবং ২০১৬ সালের ভোটে এই ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও ২০১৯ সালের লোকসভায় বিপুল মার্জিনে লিড নেয় বিজেপি। কিন্তু চলতি বছরের বিধানসভাতেই আবার এগিয়ে ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। ফলে এই ওয়ার্ডের দিকে বিশেষ নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।

৭০ নম্বর ওয়ার্ড

প্রকৃতপক্ষে অবাঙালি অধ্যুষিত, এবং বিজেপির শক্ত ঘাঁটি এই ৭০ নম্বর ওয়ার্ড। অবাঙালি ভোটারদের হার এখানে ৬১ শতাংশ হওয়ায় যে কোনও নির্বাচনেই হেসেখেলে বিজেপিই এখানে এগিয়ে থাকে। সেটা লোকসভা হোক বা বিধানসভা। এই ওয়ার্ডে বাঙালি ভোটার ৩৫ শতাংশ, সংখ্যালঘু ভোট এখানে মাত্র ৩ শতাংশ।

৭২ নম্বর ওয়ার্ড

কখনও এদিক, কখনও ওদিক। ভবানীপুরের সবচেয়ে দোদুল্যমান ওয়ার্ড যদি কোনওটা হয়ে থাকে। তবে তা অবশ্যই ৭২ নম্বর। তবে একটা সুস্থির ট্রেন্ড অনুসরণ করে এই ওয়ার্ড। লোকসভা ভোট এলেই এই ওয়ার্ড থেকে লিড নেয় বিজেপি। আবার বিধানসভা ভোটে এখানে এগিয়ে যায় তৃণমূল।

কিন্তু কেন? এ ক্ষেত্রেও এই ওয়ার্ডের জনবিন্যাসেই উত্তর লুকিয়ে। এখানে বাঙালি ৫৬ শতাংশ, অবাঙালি ৪১ শতাংশ, এবং মুসলিম ৩ শতাংশ। তাই ভোট অনুযায়ী এখানকার মানুষের মতও ঘোরে। এ বারের উপনির্বাচনেও এই ওয়ার্ডের ভোট কোনদিকে যায় তা বিরাট গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

৭৩ নম্বর ওয়ার্ড

শুধুমাত্র ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন বাদে এই ওয়ার্ডে কখনই লিড নিতে পারেনি বিজেপি। এখানকার ভোটারদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ বাঙালি। অবাঙালি ৩৩ শতাংশ। তাই বাকি দুই বিধানসভা এবং ২০১৪-র লোকসভায় তৃণমূলই এগিয়ে ছিল এই ওয়ার্ডে। সংখ্যালঘু ভোটারদের হার এখানে ২ শতাংশ।

৮২ নম্বর ওয়ার্ড

শেষ এবং তৃণমূলের আরের শক্ত ঘাঁটি এই ৮২ নম্বর ওয়ার্ড। বাঙালি ভোটারদের হার ৭৭ শতাংশ। আবাঙালি ভোটারদের হার ২১ শতাংশ। কাজেই ২০১৪ সাল থেকে কোনও নির্বাচনেই এখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। ফলে এ বারও গেরুয়া শিবির খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: Corruption: ‘দুর্নীতি’ স্বীকার করেও রাজ্য বলল, ‘অপরাধী পালিয়ে গিয়েছে’! ‘আইওয়াশ হচ্ছে?’ প্রশ্ন আদালতের

‘খেলা হবে’ যে দুই ওয়ার্ডে

ওয়ার্ডভিত্তিক বিশ্লেষণ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট। ৮ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬ টি ওয়ার্ডের ভোটারদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা একটি গতিপথ অনুসরণ করে। কিন্তু ৬৩ এবং ৭২ নম্বর ওয়ার্ড যে তৃণমূলের রক্তচাপ বাড়িয়ে রেখেছে। যে কারণে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কখনও মসজিদ, কখনও গুরুদ্বারায় যাচ্ছেন মমতা। আবার তৃণমূলের তাবড় তাবড় নেতা-নেত্রীদেরও দলীয় সুপ্রিমোর হয়ে প্রচারে নামতে হচ্ছে। তৃণমূলের কাছে সংখ্যালঘু এবং বাঙালি অস্মিতা হাতিয়ার হলে বিজেপিও ভবানীপুরের অবাঙালি ভোটকে অস্ত্র করছে। কিন্তু এই ভোটযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ বাজিমাত করবে, তা এই দুই ওয়ার্ডের উপরই অনেকাংশে নির্ভর করছে। ফলে ভবানীপুরে মোট ৮ টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ হলেও আসল ‘খেলা’ এই দুই ওয়ার্ডের ভোটাররাই খেলবেন বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।

আরও পড়ুন: Covid Death: করোনায় মৃত্যু হলে ৫০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য, সুপ্রিম কোর্টে জানাল কেন্দ্র