Kolkata : কংক্রিটের তলায় চাপা পড়ছে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি, FIR করেই দায় সেরেছে প্রশাসন ?

Kolkata :পরিবেশ দফতরের তথ্য বলছে, পূর্ব কলকাতার জলাভূমি যে সমস্ত মৌজা জুড়ে বিস্তৃত, সেখানে জনসংখ্যা গত ২০ বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতেই চাপ বেড়েছে জলাভূমির উপর।

Kolkata : কংক্রিটের তলায় চাপা পড়ছে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি,  FIR করেই দায় সেরেছে প্রশাসন ?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 02, 2023 | 11:25 PM

সায়ন্ত ভট্টাচার্য

কলকাতা : বিগত ১৪ বছরে ৩৫৯টি এফআইআর থানায়। ব্যাস! এখানেই শেষ। শুধুমাত্র থানায় অভিযোগ জানিয়েই ক্ষান্ত থেকেছে রাজ্য প্রশাসন এবং কলকাতা পুরনিগম (Kolkata Municipality)। এর বাইরে পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে কংক্রিটের বেআইনি নির্মাণ রুখতে এবং ভাঙতে আর কোন পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। এই অভিযোগ বিরোধী দলের নয়। সম্প্রতি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা ক্যাগ যে রিপোর্ট (CAG Report) পেশ করেছে দিল্লিতে (Delhi), তাতেই তথ্যগুলি স্পষ্ট আকারে তুলে ধরা হয়েছে। জানানো হয়েছে, সঙ্কটে রয়েছে পূর্ব কলকাতার জলাভূমির অস্তিত্ব।

কী বলছে পরিবেশ দফতরের তথ্য?

পরিবেশ দফতরের তথ্য বলছে, পূর্ব কলকাতার জলাভূমি যে সমস্ত মৌজা জুড়ে বিস্তৃত, সেখানে জনসংখ্যা গত ২০ বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জলাভূমির ৩৭টি মৌজার মধ্যে কোনও কোনওটিতে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনঘনত্ব ৪৫০০ জন। যা স্বাভাবিক ভাবেই চাপ তৈরি করছে ওই এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে। রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, জলাভূমি ভরাট হওয়ার ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। নির্দিষ্ট করে কয়েকটি বেসরকারি কলেজের নামও উল্লখে করেছে ক্যাগ। পাশাপাশি রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে এই এলাকায় বসতি, নির্মাণের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। যার ফলে জলাভূমি এলাকার জলে এবং মাটিতে উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ভারী ধাতব পদার্থের পরিমাণ। শহরের অপরিশোধিত তরল বর্জ্য জলাভূমিতে এসে মেশার কারণে যে বিপদ বাড়ছে ক্রমাগত।

এদিকে জলাভূমি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিজের বাজেট ভাষণে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বুধবার বাজেট পেশ করতে গিয়ে তিনি রামসার জলাভূমির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশের রামসার এলাকা সংরক্ষণের উপরে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। জলাভূমি সংরক্ষণে স্থানীয় গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তাই আগামী তিন বছরে জলাভূমি সংরক্ষণ করে ইকো-পর্যটনের সুযোগ এবং সেই সূত্রে সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের আয়ের সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

আন্তর্জাতিক এই ‘রামসার সাইট’কে ২০২৬-এর মধ্যে সম্পূর্ণ জবরদখলমুক্ত করা হবে বলে টার্গেট নিয়েছে রাজ্য সরকার। ১২ হাজার ৫০০ হেক্টরের এই এলাকার জন্য ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে রাজ্য জানিয়েছে, আগামী চারবছরে জলাভূমি-সহ গোটা এই এলাকাকে বেআইনি নির্মাণ মুক্ত করে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব করা হবে। কিন্তু যেভাবে কংক্রিটের নির্মাণ একের পর দাঁড়িয়ে পড়েছে সেগুলিকে আদৌও ভাঙা সম্ভব কিনা তা নিয়ে রীতিমতো দ্বন্দ্বে রয়েছে কলকাতা পুরনিগমের কর্তাদের একাংশ। 

জলাভূমির উপরে নির্মাণ তৈরিতে ছাড়পত্র মেলে কীভাবে? উঠছে প্রশ্ন

এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরনিগমের পরিবেশ বিভাগের এক কর্তা বলেন, “রাজনৈতিক কারণে আজ পর্যন্ত পূর্ব কলকাতা জলাভূমির উপরে থাকা কংক্রিট নির্মাণ গুলিকে ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি। একের পর এক অংশ বেদখল হয়ে গিয়েছে। ছোট-বড় সব ধরনের নির্মাণ এখন এই পূর্ব কলকাতা জলাভূমির উপরে।” প্রশ্ন একটাই, এই জলাভূমির উপরে নির্মাণ তৈরিতে ছাড়পত্র মেলে কীভাবে? পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ নির্মাণ তৈরির নকশায় অনুমোদন দেয় কি করে? শুধু যে কংক্রিটের নির্মাণ রয়েছে তা নয়, বাসন্তী হাইওয়ের উপর বেআইনি প্লাস্টিক এবং রাবার কারখানারও উল্লেখ রয়েছে ক্যাগ রিপোর্টে। সব জেনেও ‘কলকাতা ওয়টেল্যান্ডস ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। কলকাতা পুরনিগমের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, বেশকিছু বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে নির্মাণগুলোকে ভেঙে ফেলার জন্য নোটিসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন হয়ে যাওয়ায় যাবতীয় প্রক্রিয়া আটকে গিয়েছে।

পূর্ব কলকাতা জলাভূমি থেকে প্রতি বছর পাওয়া যায় গড়ে ২০ হাজার মেট্রিক টন মাছ 

পরিবেশ দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি থেকে প্রতি বছর গড়ে ২০ হাজার মেট্রিক টন মাছ পাওয়া যায়। সবজি আসে অন্তত পঞ্চাশ হাজার মেট্রিক টন। ২৫০টির বেশি জলাশয়ে ফি বছর ৩৬ রকমের পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জলাভূমি থেকে উপকৃত হন। শহরের ৬০ ভাগ বিষাক্ত কার্বন শুষে নেয় এই জলাভূমি। সিএজি নিজের রিপোর্টে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমির উপরে শহরের পরিবেশের ভারসাম্য অনেকটাই নির্ভর করছে। কিন্তু, অচিরেই সেই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে যদি পূর্ব কলকাতা জলাভূমি রক্ষা করা না যায়। প্রশাসনকে এই ব্যাপারে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।