Sandip Ghosh: কতটা শিক্ষিত সন্দীপ?
Sandip Ghosh: তথ্য বলছে, সন্দীপ বেড়ে উঠছেন বনগাঁতে। পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সন্দীপ ঘোষ ক্লাস এইট পর্যন্ত বনগাঁ স্কুলে পড়ে রামকৃষ্ণ মিশনে চলে যান। সেখান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে আবার ফের বনগাঁ হাইস্কুলে এসে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন।
কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডে উত্তাল দেশ। ফুঁসছে বাংলা। নাগরিক আন্দোলের ঢেউ দিকে দিকে। এরইমধ্যে বারবার উঠে এসেছে একটাই নাম, সন্দীপ ঘোষ। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। লাগাতার পড়েছেন সিবিআই জেরার মুখে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে চলছে ট্রোলের বন্য়া। বাড়ির সামনেও টানা চলেছে বিক্ষোভ। তাঁর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ভুড়ি ভুড়ি ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ উঠছে নানা মহল থেকে। তবে তা যে এই প্রথম উঠছে এমনটা নয়। জল গড়িয়েছে রাজ্যের পাশাপাশি একেবারে দেশের শীর্ষ আদালতে। সত্যিই কতটা প্রভাবশালী সন্দীপ? কী কারণে তাঁর ইস্তফার পর রাতারাতি তাঁকে ফের আরও একটি মেডিকেল কলেজে বহাল করল সরকার সেই প্রশ্নও জোরালো হয়েছে। কিন্তু, জানেন কী এত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সন্দীপের শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন?
তথ্য বলছে, সন্দীপ বেড়ে উঠছেন বনগাঁতে। পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সন্দীপ ঘোষ ক্লাস এইট পর্যন্ত বনগাঁ স্কুলে পড়ে রামকৃষ্ণ মিশনে চলে যান। সেখান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে আবার ফের বনগাঁ হাইস্কুলে এসে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। ১৯৮৯ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তোলেন ৭৯.৭ শতাংশ নম্বর। যে সময়ের কথা হচ্ছে সেই সময় প্রায় ৮০ শতাংশ নম্বর যে অনেকটাই বড় ব্যাপার তা এখনও এক বাক্যে মানেন সকলেই। সোজা কথায়, ছোট থেকেই এলাকায় মেধাবী ছাত্র বলেই পরিচিতি ছিল তাঁর। উচ্চমাধ্যমিকে অভাবনীয় ফলের পর সেই সময় স্কুলের শিক্ষক থেকে সহপাঠী প্রত্যেকেরই তাঁকে নিয়ে গর্বের অন্ত ছিল না। কিন্তু, এখন আরজি কর কাণ্ডের পর অস্বস্তিতে পড়ছেন তাঁরা।
বনগাঁ স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর ডাক্তারিতে ভর্তি। ভর্তি হন এই আরজি করেই। পাশ করেন ১৯৯৪ সালে। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ধীরে ধীরে একেবারে উন্নতির শিখড়ে পৌঁছাতে থাকেন তিনি। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নানা মহিমায়, নানা ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে। অস্থি শল্য চিকিৎসক হিসাবে বেশ নামও করেন। ২০২১ সালে আরজি করের অধ্যক্ষ হিসাবে কাজ শুরু। আরজি করের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার আগে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভাইস-প্রিন্সিপালেরও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালে তাঁকে আবার পাঠানো হয়েছিল মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে। সেই সময় আরজি করে হস্টলে র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে চলছিল তোলপাড়। তখনই হয় তাঁর বদলিও। যদিও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফের পুুরনো পদে বহাল হন। যা নিয়ে সেই সময় বিস্তর বিতর্কও হয়।
বনগাঁ হাই স্কুলের বায়োলজির প্রাক্তন শিক্ষক হরি গোপাল সরকারের গলাতে এই সন্দীপকে নিয়ে প্রশংসা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত রয়ে গেল আক্ষেপের সুর। তিনি নিজেও পড়িয়েছেন তাঁকে। ভাল ছাত্রের দরাজ সার্টিফিকেটও দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরেও বলছেন, “বনগাঁ হাইস্কুলের একটি সুনাম আছে। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে সন্দীপের নাম জড়িয়ে থাকায় খুব কষ্ট হচ্ছে।” একই সুর বনগাঁ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কুনাল দের গলাতেও। বলছেন, “১৯৮৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। ভাল ছাত্র ছিলেন। আরজি কর কাণ্ডের সঙ্গে তাঁর নাম থাকায় খুব খারাপ লাগছে।”
প্রসঙ্গত, সন্দীপের বিরুদ্ধে একাধিকবার উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। উঠেছে ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়োগে স্বজনপোষণ, সরকারি অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ। অবৈধভাবে ইন্টার্ন নিয়োগের অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকী চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে টেন্ডারেও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। যদি তিলোত্তমা কাণ্ডের আবহে যেদিন তিনি পদত্যাগ করেছিলেন সেদিন যদিও ‘সাফাইয়ের’ সুর শোনা গিয়েছিল তাঁর গলায়। বলেছিলেন, “আমার নামে মিথ্যা রটেছে। ডাক্তারদের মধ্যেও চোর ডাকাত রয়েছে, সেই মুখোশগুলো খুলে যাবে। আমি অর্থোপেডিক সার্জেন, আমার দুটো হাত রয়েছে, আমি কিছু করে খেতে পারব। আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে, আমি বাবা হিসাবে পদত্যাগ করলাম।”