উডবার্নে খোশ মেজাজে মদন, পুরনো সিনেমা দেখলেন সুব্রত, শোভনের কেবিন এড়িয়ে গেলেন অনেকেই

এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের ভিভিআইপি করিডোরে মদন মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কেবিনের এটাই ছিল ছবি।

উডবার্নে খোশ মেজাজে মদন, পুরনো সিনেমা দেখলেন সুব্রত, শোভনের কেবিন এড়িয়ে গেলেন অনেকেই
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 19, 2021 | 10:48 AM

সৌরভ গুহ: একজনের পাশেই ছিল পরিবার। তাই অসুস্থতার মাঝেও বিছানায় শুয়ে বেশ খোশ মেজাজেই সময় কাটালেন। পাশের কেবিনের মানুষটা রাজনীতিতে অনেকটাই বর্ষীয়ান। ফলে বৃহত্তর পরিবার দলীয় কর্মীদের সঙ্গেই টুকটাক কথা বলে চললেন। এই দুই কেবিন থেকে খানিক দূরে আরেক ঘর। সেদিকে অবশ্য ঘেঁষার আগ্রহ খুব বেশি কেউ দেখাননি। কেননা সেখানে যিনি ছিলেন তিনি অনেকদিন ধরেই নিজের পরিবার এবং বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েনের জেরে চর্চায় রয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের ভিভিআইপি করিডোরে মদন মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কেবিনের এটাই ছিল ছবি।

মঙ্গলবার সারাটা দিন জুড়ে অবশ্য এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি এই তিন ভিভিআইপি-র দিকেই নজর ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে রাজ্যবাসীর। তবে উডবার্ন চত্বরের আসল কানাঘুষো চলছিল ১০৬ নম্বর কেবিনকে নিয়ে। দুপুরেই শোভনের ওই ঘরে চলে আসেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু সময় কাটিয়ে তিনি ক্ষান্ত হননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি আবদার করে বসেন, শোভনবাবুর পাশের ঘরেই ভর্তি করতে হবে তাঁকে। সূত্রের দাবি, শোভনের পাশে ১০৫ নম্বর কেবিনে বেশ কিছুক্ষণ সময়ও কাটান বৈশাখী। এরই মধ্যে আচমকা খবর আসে, শোভনকে দেখতে হাসপাতাল আসছেন তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়।

ব্যাস, ওমনি গুঞ্জন বাড়তে শুরু করে হাসপাতাল চত্বরে। স্ত্রী আর বান্ধবী মুখোমুখি হলে ১০৬ নম্বর কেবিনের পরিস্থিতি ঠিক কী হবে, তা নিয়ে ভেবেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও শেষপর্যন্ত সেই দৃশ্য আর দেখা যায়নি। রত্নার বদলে আসেন পুত্র ঋষি। বাবার সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি মদন মিত্রের ঘরে সময় কাটান কানন-পুত্র।

মদন মিত্রের ঘরে তখন বসে কামারহাটি ও ভবানীপুর থেকে আসা বেশ কিছু কর্মী। কাছের মানুষদের কাছে পেয়ে অক্সিজেন মাস্কটা খুলে রেখে হালকাচালে কিছুক্ষণ গল্পও করেন মদন। সেফ হোম, অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বিছানাতে শুয়েই। দূর থেকে আসা এক অনুগামীকে বলেন, “সিবিআই-এর এই আচরণ সবাই বুঝছে। হেরে গিয়েও মোদী এই সব করাচ্ছে। এর ফল বিজেপিকে পেতে হবে দেখবি।”

এদিকে সুব্রত মুখোপাধ্যায় ঘরের বাইরে স্পিকটি নট। উঁচু গলায় কেউ কথা বললেই পাশে থেকে কেউ বলে উঠেছেন, ‘আস্তে, বৌদি আছে ঘরে’। বৌদি মানে ছন্দ বাণী মুখোপাধ্যায়। সকাল থেকেই হাসপাতালে ছিলেন তিনি। নিজের হাতেই রান্না করে আনেন। আসলে গতকাল প্রেসিডেন্সি জেলে তেমন কিছুই খাওয়া হয়নি সুব্রতবাবুর। মঙ্গলবার দুপুরে অবশ্য বাড়ির ভাত খেয়েছেন তৃপ্তি করে। হালকা তেল মশলায় রান্না করা প্রতিদিনের খাবার। এসেছিলেন সুব্রতর বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায় ও ভাগ্নে।

আরও পড়ুন: ১০২ জ্বর ফিরহাদ হাকিমের, সঙ্গে পেটে ব্যথা, কিন্তু হাসপাতালে যেতে চান না মন্ত্রী

গতকাল থেকেই অবশ্য তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছিল। আজ সকালেও চালাতে নেবুলাইজারও। তবে তারই মধ্যে বাড়ির লোকজনকে কাছে পেয়ে একটু হালকা মেজাজেই ছিলেন সুব্রত। সামনে চলেছে টিভি। নিউজ থেকে পুরনো সিনেমা, বেডে শুয়েই চোখ রেখেছেন সুব্রত। গলার অবস্থা তো বেশ খারাপ। গতকাল প্রায় আওয়াজই বেরোচ্ছিল না। আজ অবশ্য কিছুটা ভাল রয়েছে। এরই মধ্যে ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও।

এ দিন হাসপাতালে তৃণমূলের যে সাংসদ ও বিধায়করা আসেন, তাঁরা সুব্রতবাবুর কেবিনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেই আড্ডা দিতে চলে আসেন মদন মিত্রের ঘরে। তবে ভুল করে একবারও কোণের ঘরের দিকে ভুলেও পা মাড়াননি কেউ। দলের প্রাক্তন মেয়র মন্ত্রী এখন ঠিক কোন দলে রয়েছেন তা নিশ্চিত না জেনে সেদিকে পা না বাড়ানোই মঙ্গল। এমনই হাবভাব ছিল ভিজিটারদের। একজন তো বলেই ফেললেন, “না না এদিকেই ঠিক আছে। ওদিকে আবার ঝড় ঝঞ্ঝা বড্ড বেশি।”