একুশেই চব্বিশের বার্তা! সর্বভারতীয় ক্যানভাসে আজ তৃণমূলের শক্তি পরীক্ষা
Kolkata: 21 July 2021: মমতার জনপ্রিয়তার ওপর ভর করেই দেশজুড়ে সংগঠন বাড়াতে চায় তৃণমূল। একুশের মঞ্চ থেকে চব্বিশে মোদী উত্খাতের শপথ নিতে পারে তৃণমূল।
কলকাতা: শহিদ স্মরণে একুশে (21 July 2021) এবার কোভিডের জন্য হবে ভার্চুয়ালি। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভাষণ দেবেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। জেলায় জেলায় সারা হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর কী বার্তা দেন নেত্রী, সেই অপেক্ষাতেই তৃণমূল কর্মীরা। এবারে একুশের তাতপর্য অনেকটাই আলাদা। রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে এবার সর্বভারতীয় স্তরে শহিদ স্মরণ করছে তৃণমূল। আর এই মঞ্চেই নেওয়া হচ্ছে আগামী চব্বিশের শপথ।
একুশের উদযাপন ঘিরে ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে তৃণমূলের। করোনার কারণে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পালিত হবে তৃণমূলের শহিদ দিবস। শহর থেকে ব্লকে, প্রতিটি গ্রামে থাকবে জায়েন্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা করে অনুষ্ঠান দেখানোর আয়োজন। দিল্লি, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, ত্রিপুরাতেও থাকছে জায়েন্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা।
ভার্চুয়ালি ২১
তৃণমূল ভবনের বাইরে বানানো হয়েছে অস্থায়ী শহিদ বেদি। সেখানে স্ক্রিন বসিয়ে নেত্রীর ভাষণ শোনানো হবে। সাড়ে ১১ টা নাগাদ তৃণমূলের ধর্মতলার শহিদ বেদিতে মালা দেবে সায়নী ঘোষ, বিশ্বজিত্ দেব, জাভেদ খানরা। সাড়ে ১২ টা নাগাদ শ্রদ্ধা জানাবেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দুপুর ১টা নাগাদ শহিদ স্মরণে রাজ্য ও ভিনরাজ্যের প্রতিনিধিরা। বিধায়কদের নিজেদের এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে। কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে জায়েন্ট স্ক্রিন বা টিভিতে ভাষণ শোনানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দুপুর ২টোয় বক্তৃতা শুরু করার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিধানসভা নির্বাচন জিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে নরেন্দ্র মোদীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে সর্বভারতীয় স্তরে স্বীকৃত। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে প্রাসঙ্গিক করতে চাইছিলেন জাতীয় রাজনীতিতে। আর এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরেই বহু রাজনৈতিক দল একত্রিত হতে চাইছে মোদী বিরোধী মোর্চা গড়তে।
একুশের ২১-এর গুরুত্ব
এবারের ২১ জুলাই অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে আজ তৃণমূলের প্রসার। নির্বাচনে জয়লাভের পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এবার সর্বভারতীয় স্তরে নিজেদের উপস্থিতিকে আরও বেশি জোরদার করতে চায় তৃণমূল। তারই বার্তা দেওয়ার মঞ্চ হিসাবে নেত্রী বেছে নিয়েছেন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চকেই। একুশের নির্বাচনের লড়াই মূলত হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী বনাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নির্বাচনের ফলের পর অবিজেপি শক্তিগুলির মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। মমতা ব্র্যান্ডকেই শান দিতে চাইছে তৃণমূলও।
একুশের নির্বাচনে মমতার কাছে কার্যত পর্যুদস্ত হয়েছেন মোদী-শাহ। তৃতীয় বারের জন্য বাংলার সরকার গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধাক্কা খেয়েছে মোদী-শাহের অপ্রতিরোধ্য গতি। দেশজুড়ে মোদী বিরোধী মুখ হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবিজেপি আঞ্চলিক দলগুলির মাঝেও ‘বাংলার মেয়ে’র গুরুত্ব বেড়েছে। অন্যদিকে, জয়ের হ্যাটট্রিকে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূলও। মমতার জনপ্রিয়তার ওপর ভর করেই দেশজুড়ে সংগঠন বাড়াতে চায় তৃণমূল। একুশের মঞ্চ থেকে চব্বিশে মোদী উত্খাতের শপথ নিতে পারে তৃণমূল। সেই প্রক্রিয়াই হয়তো শুরু হতে চলেছে। বলছেন বিশ্লেষকরা।
প্রেক্ষাপট
১৯৯৩ সালে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই ২১ জুলাই শহিদ স্মরণ হিসাবে পালিত হচ্ছে। ২০০৬-০৭ সালে জমি অধিগ্রহণ আন্দোলনের হাত ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্কাগতিতে উত্থান। ২০০৮ সালের স্লোগানে ‘২১ জুলাই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই’। সে বছর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে রেকর্ড ভিড়। বাম সরকারকে উত্খাত করার স্লোগান তোলেন মমতা। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে ভাল ফল করে তৃণমূল। ২০১০ সালে ‘পরিবর্তন চাই’ স্লোগানের ডাক দিয়ে বাম সরকারকে উত্খাত। এবার লক্ষ্য চব্বিশ! আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: কেবলই কি শহিদ স্মৃতি? নাকি ২১ জুলাইয়ে লুকিয়েছিল তৃণমূল তৈরির বীজও