Orphan Child: সবুজ মনে আনচান! পড়শির কোলে বাড়ছে একরত্তি, আচমকা হাইকোর্টে মামলা বাবার…
Howrah: রূপকথায় সেই যে কবে সুয়োরানি-দুয়োরানির গল্পে যেমন শোনা যেত, এ মেয়ের গল্প যেন তেমনই। ছোট্ট মেয়েটা জানে না আইনের মারপ্যাঁচ। বড়দের জটিল জগত।
রূপকথায় সেই যে কবে সুয়োরানি-দুয়োরানির গল্পে যেমন শোনা যেত, এ মেয়ের গল্প যেন তেমনই। ছোট্ট মেয়েটা জানে না আইনের মারপ্যাঁচ। বড়দের জটিল জগত। হাতে ডলপুতুল নিয়ে দাদার কোলে খেলে বেড়ায় সে। মায়ের সঙ্গে হাত ধরে ঘুরতে যায়। বাবার কোলে বসে মুছিয়ে দেয় চোখের জল। একরত্তি জানে না, কীভাবে বুকে পাথর চেপে রেখেছেন জহর-জুলি।
হাওড়ার বাসিন্দা জহর রায় ও জুলি রায়। নিজেদের সন্তান বলতে একটি ছেলে। এলাকারই এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আসত ওই একরত্তি। সে ছিল ওই মেয়ের মামাবাড়ি। একরত্তি মা-হারা মেয়েটা দিদার আশ্রয়ে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু, সে দিদাও আত্মঘাতী। কোথায় যাবে ওটুকু মেয়েটা! নিজের মেয়ে নেই, তাই মেয়ের অভাব যেন পূরণ করলেন ওই ছোট্টটিকে দিয়ে। একেবারে নিজের মেয়ের মতো কোলে তুলে নিলেন একরত্তিকে। তখন তার বয়স সাত মাস। হ্যাঁ, মেয়েটার জন্মদাতা বাবাকে খবর দেওয়া হয়েছিল। তবে দিদা মারা যাওয়ার খবর পেয়েও মেয়েকে দেখতে আসেননি তিনি। অস্বীকার করেছেন বরং। জানতেও চাননি মেয়ে বেঁচে রয়েছে কি না। অথচ, তাঁরই সন্তান ওই পুঁচকে মেয়েটা!
বোধ হওয়ার পর থেকে যখন প্রথম মুখে বুলি ফুটল তখন, জহরকেই সে বলতে শিখল বাবা, জুলিকে মা। রায় পরিবারেরই সদস্য হল সে। পুঁচকের পরিচয় হল রায়বাড়ির নামেই। এখন সে সদ্য পেন্সিলে আঁক কাটতে শিখেছে। স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। জুলিই তাকে বাড়িতে বসে শেখান ‘অ আ, ক, খ’। পালক-মায়ের সঙ্গেই মেয়েটা সুর তুলে বলে, ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে।’
এরই মাঝে বিপদ। যেন কোনও ফিল্মের টার্নওভার। মেয়েকে নিজের কাছে ফেরত চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ জন্মদাতা বাবা। আগেও এমন আইনি লড়াই হয়েছে। তখন হাওড়া আদালত রায় দিয়েছিল, মেয়ে ১৫ বছর বয়স অবধি তার দিদার কাছে থাকবে। তারপর, সে নিজে নির্বাচন করবে সে কার সঙ্গে আদপে থাকতে চায়। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু, জন্মদাতা বাবার মন ভরেনি। আপিল করেছেন হাইকোর্টে। মামলার জল এতদূর গড়ায় শঙ্কিত রায় পরিবারও।
জুলির কথায়, “যখন ওর কেউ ছিল না, ওর বাবা আসেনি। দিদা মারা গিয়েছে, আমার খবর দিয়েছি। আসেনি। যোগাযোগই করেনি। ওইটুকু মেয়ে কোথায় যেত! তারপর আজ ওর বাবা হাইকোর্টে গিয়েছে। জানি না আদালত কী রায় দেবে। তবে ও তো আমাদেরই মেয়ে! ওকে আমরা সেভাবেই বড় করেছি। ও বুলি ফোটার পর থেকে আমাকেই মা বলে জানে।”
অন্যদিকে, জুলির স্বামী জহর বলেন, “ভয় পাই, খুব ভয় পাই! এই বোধহয় মেয়েটাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল! ওর বাবা তো কোনও যোগাযোগই করেনি। আজ হাইকোর্টে গিয়ে মামলা করছে। যখন ওর জ্ঞান ছিল না, তখন কোথায় ছিল! আমরাই তো ওকে বড় করেছি। ও তো আমাদেরই মেয়ে।” বলতে বলতেই চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে জহরের। ছোট্ট মেয়েটা অবাক হয়ে দেখে তার বাবা কাঁদছে। হাতের তালু দিয়ে বাবার চোখ মুছিয়ে দেয় সে। স্নেহ বড় বিষম বস্তু! ও যে জানে না এই কঠোর সত্যিটা। জানে না বড়দের দুনিয়াটা কতটা রুক্ষ।
রবি দত্ত নামে ওই শিশুরই এক প্রতিবেশী অবশ্য বলেছেন, “জুলি বৌদি ছোট থেকে মেয়েটাকে বড় করল। নিজের মেয়ের মতো। ওর বাবা তো আসেওনি। আমরা তো বলেইছি জহরদা’দের, কোনও সমস্যা হলে আমরা পাশে রয়েছি।” তাও কি মায়ের মন মানে! বুকের ধনকে কেউ যদি ছিনিয়ে নিতে চায়! তবে আইন কী বলছে?
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় যদিও জানিয়েছেন, আইনের পরিভাষা অন্য। যদি, ওই শিশুর জন্মদাতা বাবা কোনও যোগাযোগ না আচমকাই মেয়ের অধিকার দাবি করেন, তবে তিনি সঙ্গে সঙ্গে অধিকার পেয়ে যাবেন এমনটা নয়। সেক্ষেত্রে আদালত সবার আগে দেখবে, আদৌ ওই মেয়ের বাবা তাঁর সন্তানের দায়িত্ব নিতে সক্ষম কি না। যদি তা হয়েও থাকেন, তবে ওই একরত্তি কি তাঁর কাছে খুশি থাকবে, নাকি যেভাবে তার পালক পরিবারের কাছে সে বড় হয়ে উঠছে তাতে বেশি সুরক্ষিত থাকবে। শিশুর সু-ভবিষ্যত যথাযথ চিন্তা করেই দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবুও মন মানেনি। এখন আদালতের দিকেই তাকিয়ে গোটা রায় পরিবার। আর যা-হোক, মেয়েকে হারাতে চান না তাঁরা। না হলই বা রক্তের সম্পর্ক। সেই কি শেষ কথা!
দেখুন ভিডিয়ো:
আরও পড়ুন: School Opening: বাজল স্কুলের ঘণ্টা, বাদ সাধল ইউনিফর্ম!