Chintan Shivir: ছয় কমিটিতে জোর আলোচনা, চিন্তন শিবিরের শেষে কী কী সংকল্প নিল কংগ্রেস?

Udaipur Chintan Shivir: তিনদিনের চিন্তন শিবিরের পর উদয়পুর সংকল্প গ্রহণ করল জাতীয় কংগ্রেস। কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তাতে?

Chintan Shivir: ছয় কমিটিতে জোর আলোচনা, চিন্তন শিবিরের শেষে কী কী সংকল্প নিল কংগ্রেস?
গ্রাফিক্স: টিভি৯ বাংলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 15, 2022 | 9:12 PM

আজ রবিবার শেষ হল কংগ্রেসের তিন দিনের উদয়পুর চিন্তন শিবির। ভারতের প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি থেকে মোট ৪৩০ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন এই শিবিরে। সংগঠন, রাজনৈতিক, আর্থিক, কৃষক, সামাজিক ন্যায় এবং যুব – ৬টি মূল বিষয়ে আলোচনার জন্য গঠন করা হয়েছিল ৬টি আলাদা প্যানেল। প্রতিটি প্যানেলে আলোচনার জন্য প্রায় ৭০ জন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছিল। তিন দিনের আলোচনার শেষে যে যে প্রস্তাব উঠে এসেছিল, সেগুলি নিয়ে এদিন আলোচনা হয় কংগ্রেস কার্যকরি কমিটিতে। তারা অনুমোদন দেওয়ার পরই এদিন ‘উদয়পুর নব সংকল্পপত্র’ গ্রহণ করে। কী কী সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে? আসুন দেখে নেওয়া যাক –

১. সংগঠন বিষয়ে সিদ্ধান্ত 

৯০ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে ব্লক স্তর থেকে জাতীয় স্তর পর্যন্ত শূন্যপদ পূরণ করা হবে। ব্লক কংগ্রেসের সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডল কংগ্রেস কমিটি গঠন করা হবে। জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি, নির্বাচন পরিচালনা এবং নেতাদের জাতীয় প্রশিক্ষণের বিষয়ে ৩টি নতুন বিভাগ স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ব্লক থেকে জাতীয় স্তর পর্যন্ত প্রতিটি কংগ্রেস কমিটির পদাধিকারীদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে। দলীয় পদে কোনও ব্যক্তিই পাঁচ বছরের বেশি থাকবেন না। সংগঠনের সকল স্তরে ৫০ বছরের কম বয়সীদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে অন্তত ৫০ শতাংশ। প্রতি কমিটিতে দলিত,আদিবাসী, মহিলাদের ন্যায়সঙ্গত প্রতিনিধিত্ব রাখা হবে। ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ এবং ‘এক পরিবার এক প্রার্থী’ নীতি মানা হবে। নর্থ-ইস্ট কোঅর্ডিনেশন কমিটির অধ্যক্ষকে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়া হবে। কেন্দ্র ও প্রতিটি রাজ্যের জন্য রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি গঠন করা হবে। প্রতি বছর অন্তত একবার করে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির বৈঠক করা হবে। ৯ অগাস্ট থেকে দেশের সব জেলায় ৭৫ কিলোমিটার লম্বা পদযাত্রা করা হবে। জাতীয় কংগ্রেসের সঞ্চার বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করা হবে মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, ডেটা রিসার্চ-এর বিশেষজ্ঞদের।

২. রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত 

বসুধৈব কুটুম্বকম-এর দর্শন মেনে চলবে কংগ্রেস। ভারতীয় জাতীয়তাবাদই কংগ্রেসের মূল চরিত্র। প্রত্যেক নাগরিকের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেবেন কংগ্রেস কর্মীরা। সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্ক, সুশীল সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সক্রিয় হবে কংগ্রেস। গণতন্ত্র রক্ষার্থে সকল সম-মনস্ক রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে জোট গঠনের দরজাও খোলা রাখা হবে। ভারতের অখণ্ডতার উপর চিনের হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না। চিনা আগ্রাসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রহস্যময় নীরবতা, উত্তরপূর্ব ভারতের ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদ, জম্মু কাশ্মীরে কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়-সহ নাগরিকদের মৃত্যু, রাজ্যপালের চেয়ারের অপব্যবহার নিয়ে আক্রমণ করা হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলনের’ ঠিক ৮০ বছর পর নবসংকল্প চিন্তন শিবিরে কংগ্রেসের নতুন স্লোগান ‘ভারত জোড়ো’। ২ অক্টোবর থেকেই এই যাত্রা শুরু করা হবে।

৩. আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত

উদারীকরণ নীতি গ্রহণের ৩০ বছর পর আর্থিক নীতি বদল আবশ্যিক। রোজগারের উপর মূল ফোকাস রেখেই তৈরি হয়েছে ‘নবসংকল্প আর্থিক নীতি’। কেন্দ্রীয় সরকার পিএসইউগুলিকে তাদের পুঁজিপতি বন্ধুদের কাছে অল্প দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। এর বিরোধিতা করা হবে। জনকল্যানই হবে কংগ্রেসের এই নয়া আর্থিক নীতির মূল বিষয়। কেন্দ্র ও প্রান্তিক এলাকার আর্থিক সম্পর্কের পুনর্সমীক্ষা করা হবে। অর্থনীতিতে যুক্ত করা হবে রোবোটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং -এর মতো আধুনিক প্রযুক্তিকে। মাথায় রাখা হবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদের কথাও।

৪. কিষাণ এবং ক্ষেতমজুর বিষয়ক সিদ্ধান্ত

৮ বছর ধরে সরকার চালালেও বিজেপি সরকার কৃষকদের ঋণ মুক্তির বিষয়ে উদাসীন। ঋণ শোধ না করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করা হচ্ছে। কংগ্রেস ঋণ মকুবের দাবি জানাবে। কৃষকদের আরেক বড় সমস্যা ফসলের দাম না পাওয়া। কৃষক আন্দোলনের মুখে কেন্দ্র এমএসপির প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ কিছু করেনি। এই অবস্থায় কংগ্রেসের দাবি, কস্ট অব ক্যাপিটাল, জমির ভাড়া জুড়ে ৫০ শতাংশ বেশি এমএসপি দিতে হবে। কৃষি বীমার ক্ষেত্রে নো প্রফিট নো লস নীতি গ্রহণ করা হবে। আগামী অর্থিক বর্ষে আলাদা করে কৃষক বাজেট তৈরির দাবি জানানো হবে। কৃষি সরঞ্জামগুলিকে জিএসটি কাঠামোর বাইরে আনার দাবি করা হবে। ২০১৯ সালের ঘোষণাপত্র মতো প্রতিটি কৃষক পরিবারকে মাসে মাসে ৬০০০ টাকা ভর্তুকি দেওয়ার দাবি জানানো হবে। কৃষি মান্ডির সংখ্যা ৭৬০০ থেকে বাড়িয়ে ৪২০০০ করার দাবি জানানো হবে।

৫. সামাজিক ন্যায় বিষয়ক সিদ্ধান্ত

সংসদে, বিধানসভাগুলিতে এবং বিধান পরিষদগুলিতে  ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণের দাবি জানানো হবে। পিছিয়ে পড়া অংশের নতুন নেতা তৈরির জন্য লিডারশিপ মিশন চালু করবে কংগ্রেস। দলে সামাজিক ন্যায় পরিষদও গঠন করা হবে। পাশাপাশি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য মিশন তৈরি করা হবে। ৬ মাসে বাদে বাদে এসটি, এসটি, ওবিসি এবং মহিলাদের কল্যানের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

৬ যুব সমাজ বিষয়ক সিদ্ধান্ত

করোনার ফলে যে বড়লোক এবং গরীব শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভাইড তৈরি হয়েছে, তা ঘুচিয়ে দিতে সক্রিয় হবে কংগ্রেস। যুব সমাজের এখন সবথেকে বড় সমস্যা কাজের অভাব। এর জন্য আগামী ১৫ অগাস্ট থেকে সারা দেশে ‘রোজগার দো’ পদযাত্রা করা হবে। সংগঠনে ৫০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত রাখা হবে যুবদের জন্য। আগামী নির্প্রাবাচনগুলিতে প্রার্থী বাছাইও করা হবে এমনভাবে, যাতে ৫০ শতাংশ প্রার্থীর বয়স ৫০ বছরের নিচে হয়। এর পাশাপাশি যুব সমাজে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে যুব উৎসব, যুব সংসদ, সাস্কৃতিক উৎসব এবং বিভিন্ন যুব ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।