‘ঘরের নয়, এই চাবি আসলে বিকাশের চাবি’, লাইট হাউস প্রকল্পের উদ্বোধনে বললেন প্রধানমন্ত্রী

দেশবাসীর ঘর তৈরির স্বপ্ন পূরণে নতুন আবাস যোজনার উপকারীতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আশা ইন্ডিয়া প্রোগ্রাম তৈরি হচ্ছে। এর সাহায্যে পাঁচটি সর্বাধুনিক প্রজেক্টকে একই ছাদের তলায় আনা যাবে। সকলের স্বপ্ন থাকে, নিজের ঘর তৈরি করা, কিন্তু সেই স্বপ্ন সফল হত না। এবার সেই স্বপ্নই সফল হবে। বিগত ৬ বছরে এই আবাস যোজনা সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে।"

'ঘরের নয়, এই চাবি আসলে বিকাশের চাবি', লাইট হাউস প্রকল্পের উদ্বোধনে বললেন প্রধানমন্ত্রী
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Jan 01, 2021 | 4:30 PM

রাজকোট: নতুন বছরে নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। দেশের মানুষের মাথার উপর ছাদ তৈরি করার উদ্দেশে প্রজেক্ট লাইট হাউসের (Project Light House) মাধ্যমে রাজকোটে ১১৪৪টি বাড়ির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পের হাত ধরে ১১৪ কোটি টাকা খরচে ইন্দোর (Indore),আগরতলা(Agartala) , রাজকোট (Rajkot), রাঁচি (Ranchi), লখনউ (Lucknow), চেন্নাই (Chennai)- এই ছটি শহরে বাড়ি তৈরি করা হবে। এই প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকলের জন্য আবাসস্থল তৈরিই সরকারের লক্ষ্য।”

নতুন বছরের প্রথম দিনেই বাসস্থান প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “২০২১ সালের শুভেচ্ছা সকলকে। আজ নতুন ভাবনা, সংকল্প নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত আমরা। এই লাইট হাউস প্রজেক্ট তারই প্রকাশস্তম্ভ।” আবাস যোজনা নিয়ে তিনি বলেন, “আগে আবাস যোজনায় সরকার ঘরের গুণগত মান নিয়ে চিন্তিত ছিল না, এখন তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আমাদের এখানে এমন অনেক বিষয় বা বস্তুই রয়েছে, যা পরিবর্তন ছাড়াই বছরের পর বছর চলতে থাকে। আবাসনও তাই। এটা বদলাতে হবে। কেন দ্রুত ঘর তৈরি হবে না! বিশ্বের প্রায় ৫০টিরও বেশি কোম্পানি এতে অংশ নিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। এতে বাড়ি তৈরি করতে কম সময় লাগবে। দেশের মানুষের এই বিষয়ে জানা জরুরি।”

প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা আলোচনা করে তিনি বলেন, “ইন্দোরে যে ঘর তৈরি হবে , তা প্রি-ফেব্রিকেটেড স্যান্ডউইচ প্যানেল তৈরি হবে। চেন্নাইতে আমেরিকা ও ফিনল্যান্ডের প্রি-কনস্ট্রাকটিভ সিস্টেমে কাজ হবে। আগরতলায় নিউজিল্যান্ডের টেকনোলজিতে ঘর তৈরি হবে। লখনউতে কানাডার টেকনোলজি ব্যবহার করে আবাসনগুলি তৈরি করা হবে।”

আরও পড়ুন: কেন্দ্রকে খোঁচা দিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা রাহুলের, বললেন, ‘কৃষকদের পাশে আছি’

তিনি কর্মসংস্থানের বিষয়টিও উল্লেখ করে বলেন, “আগামী ১২ মাসে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ১০০০টি ঘর তৈরি হবে। আগামী বছরের ২৬ জানুয়ারির আগেই এই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পড়ুয়া থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট সকলেরই কাজের সংস্থান হবে। একইসঙ্গে যাঁরা ঘর বানাবে, তাঁদের জন্য হিউম্যান সায়েন্সের ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগও দেওয়া হবে।অনলাইনেই যাবতীয় পড়াশোনা করা যাবে।”

দেশবাসীর ঘর তৈরির স্বপ্ন পূরণে নতুন আবাস যোজনার উপকারীতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আশা ইন্ডিয়া প্রোগ্রাম তৈরি হচ্ছে। এর সাহায্যে পাঁচটি সর্বাধুনিক প্রজেক্টকে একই ছাদের তলায় আনা যাবে। সকলের স্বপ্ন থাকে, নিজের ঘর তৈরি করা, কিন্তু সেই স্বপ্ন সফল হত না। এবার সেই স্বপ্নই সফল হবে। বিগত ৬ বছরে এই আবাস যোজনা সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে। শহরে আবাস যোজনার হাত ধরে লক্ষাধিক ঘর তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। ঘর বানানোর জন্য প্রাপ্ত সরকারী টাকার সমস্ত অংশটাই উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে সরাসরি যাবে।”

অন্যান্য সরকারি প্রকল্প ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সরকারি প্রকল্পের ফলে শহরের মানুষরা উপকৃত হচ্ছেন। করোনা সঙ্কটের মাঝেই গৃহ ঋণে নতুন যোজনা শুরু করেছে সরকার। এতে অর্ধেক তৈরি হওয়া ঘরগুলির জন্য মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আজ দেশে ৬০ হাজার রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট তৈরি হয়েছে। সকলের জন্য বাসস্থান-এটাই আমাদের লক্ষ্য। গরিবদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি থেকে শুরু করে যুবকদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করছে এই আবাস যোজনা। এটা কেবল ঘরের নয়, এই চাবি আসলে বিকাশের চাবি।”

আরও পড়ুন: আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ে হাথরসের জেলাশাসককে বদলি যোগী সরকারের

করোনাকালে পরিযায়ী শ্রমিক (Migrated Workers)-দের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনা আমাদের শ্রমিকদের সামর্থ্যকে আক্রমণ করেছে। গত বছর করোনার জন্যেই সাধ্যের মধ্যেই রেন্টাল হাউজিং কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে। মূলত পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও রিয়েল এস্টেট সেক্টরে নজর দেওয়া হচ্ছে। স্বল্পমূল্যের ঘরগুলির ক্ষেত্রে করের বোঝা কমিয়ে ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ ঘরের ক্ষেত্রেও জিএসটি মকুব করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২ কোটি ঘর বানানো সম্ভব হয়েছে। শহরেও এই সংখ্যা যাতে আরও বাড়ে, তার চেষ্টাও করা হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রীর এই প্রজেক্টের প্রশংসা করেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Aditynath) বলেন, “উত্তর প্রদেশে আবাস যোজনার মাধ্যমে ৭০ লাখ গরীব মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। রাজ্যের সকল মানুষ মাথার উপর ছাদ পেয়েছে। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। লাইট হাউস প্রজেক্ট একটি মাইলস্টোন তৈরি করবে।”

মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান (Shivraj Singh Chouhan) বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সংকল্প ২০২২ সালের মধ্যে সকলের জন্য ঘর তৈরি করা। আমার ভাল লাগছে যে, মোদীজী এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন। মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। ইতিমধ্যেই ৬০ লাখ মানুষ আবাস যোজনার অন্তর্গত হয়েছেন এবং তাদের মাথার উপর ছাদ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হলেন ‘ম্যান অব আইডিয়াজ’। এটি একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ, যা প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। ধরিত্রী আমাদের নারায়ণ, জনতা আমাদের জনার্দন।”

অন্যদিকে, অনুষ্ঠানের অতিথি হিসাবে উপস্থিত বিজয় রুপানি (Vijay Rupani) বলেন, “লাইট হাউজ প্রজেক্টের জন্য মোট ১১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই যোজনার ফলে ৬০,০০০ পাকা ঘর বানানো সম্ভব হয়েছে। যারফলে ছ’টি রাজ্যের প্রায় সকল মানুষই ঘর পাবেন। আমাদের সরকার এই বিষয়টি সুনিশ্চিত করবে, যাতে বাকিদের কাছেও একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হয়। সস্তা ও টেকসই ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছে মোদী সরকার।”

আরও পড়ুন: নতুন বছরের প্রথম দিনই দিল্লির ১৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে শীতলতম