পার্থর মাস্টারস্ট্রোকে একাধিক জায়গায় নমনীয় ইনভেস্টর
একগুচ্ছ বিষয়ে নমনীয় হয়েছে বিনিয়োগকারী সংস্থা। আরও একটি বিষয়ে নমনীয় হওয়ার পথে শ্রী সিমেন্ট।
কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
ক্লাব-ইনভেস্টর চুক্তি জট সমাধানের পথে। ইস্টবেঙ্গল দিবসে শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারও সেই কথার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। তবে ক্লাব-ইনভেস্টরের এই চুক্তি জটিলতায় মাস্টারস্ট্রোক ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন সচিব তথা বিশিষ্ট আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্তের। চুক্তি জট সমাধানে গত শুক্রবার প্রাক্তন সচিবের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বর্তমান কর্তারা। আসরে নেমেই জট সমাধানে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের অক্সিজেন দিলেন পার্থ। বিশিষ্ট আইনজীবীর প্রস্তাবে সায় শ্রী সিমেন্টের। একগুচ্ছ বিষয়ে নমনীয় হয়েছে বিনিয়োগকারী সংস্থা। আরও একটি বিষয়ে নমনীয় হওয়ার পথে শ্রী সিমেন্ট।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, যে যে বিষয়গুলিতে ইনভেস্টর শিথিলতা আনল, তা দেখে নেওয়া যাক-
১. কনস্টিটিউশন অব টার্মিনেশন: ইনভেস্টর যদি নিজে থেকে চুক্তি বিচ্ছেদ করে (ভলেন্টিয়ারি টার্মিনেশন) তা হলে ক্লাব তার অধিকার, সম্পত্তি ফিরে পাবে। আগে বলা হয়েছিল, শ্রী সিমেন্টের ইউনিল্যাটারাল রাইটস অব এক্সিস্ট থাকবে। অর্থাত্ ৯০ দিনের নোটিসে ইনভেস্টর চুক্তি বিচ্ছেদ করে চলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ক্লাব তার সম্পত্তি ফিরে পাবে না।
২. নিউ ইনভেস্টর: নতুন বিনিয়োগকারী সংস্থার আসার বিষয়ে কোনও বিশেষ উল্লেখ ছিল না। ক্লাব যদি মনে করে নতুন ইনভেস্টর (যার শেয়ার অনেক বেশি) নিয়ে আসবে তা হলে আনতে পারে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারী সংস্থাও যদি মনে করে সহযোগী কোনও ইনভেস্টর বা স্পনসর নিয়ে আসলে আর্থিক দিক দিয়ে তাদের উপরেও চাপ কমবে সেটাও হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গলের গঠিত বোর্ডই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। বোর্ড যদি গ্রীন সিগনাল দেয় তাহলেই তা সম্ভব।
৩. আনকন্ডিশনাল রিমুভাল অব ইস্টবেঙ্গল ডিরেক্টর্স: টার্মশিটে বলা হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শেয়ার ২০ শতাংশের নীচে নামবে না। কিন্তু চুক্তিপত্রে বলা হয়েছে, মেটেরিয়াল ব্রিচ অব কনস্টিটিউশন হলে ৯০ দিনের মধ্যে ক্লাব যদি ক্ষতিপূরণ দিতে না পারে, তাহলে ক্লাবের শেয়ার ২৪ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। বোর্ডে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ডিরেক্টরের সংখ্যাও কমানো হবে এবং ক্লাব তা মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু এই জায়গায় বিনিয়োগকারী সংস্থা নমনীয় হয়েছে। ক্লাবের শেয়ার হোল্ডিং রাইটস একই থাকবে। ক্লাবের কোনও ডিরেক্টরকেও সরাতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে শুধু ক্লাব অ্যাকটিভিটিসে বিনিয়োগ বন্ধ করে দিতে পারে শ্রী সিমেন্ট।
৪. ট্রান্সফার অব রিয়াল প্রপার্টি: টার্মশিটে বলা হয়েছিল, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তাঁবু-মাঠ-গ্যালারি সবকিছু ব্যবহারের জন্য শ্রী সিমেন্টকে দিয়ে দিতে হবে। ক্লাবের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এই সব কিছু ব্যবহারের জন্য সেনার অনুমতি প্রয়োজন। বিনিয়োগকারী সংস্থা এই বিষয়টা মেনে নিয়েছে। তবে সেনার কাছ থেকে নো অবজেকশন চিঠি দিয়ে ক্লাবের তাঁবু, মাঠ, গ্যালারি ব্যবহারের অনুমতি নিতে পারবে শ্রী সিমেন্ট। এ জায়গায় ক্লাবকেও সহযোগিতা করে বলতে হবে, তাদের কোনও আপত্তি নেই।
৫. ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সদস্যপদে যারা রয়েছেন, তাদের সংখ্যা ইনভেস্টরকে জানাতে হবে। তিন মাস অন্তর শ্রী সিমেন্টকে সেই সংখ্যাটা আপডেট করতে হবে। সদস্যদের যা অধিকার ছিল, তাই-ই থাকবে। যদি কোনও পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে এসসি ইস্টবেঙ্গলের বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই গ্রাহ্য হবে। সদস্যদের সঠিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে ক্লাব তাঁবুতে প্রবেশ করতে হবে। তবে মাঠে যদি কোনও ম্যাচ থাকে, বা ক্লাবের কোনও অনুষ্ঠান থাকে, সেই বিশেষ ক্ষেত্রে দর্শকরা অবশ্যই প্রবেশ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
৬. ক্লাব যদি কোনও একস্ট্রা অর্ডিনারি জেনারেল মিটিং বা এজিএম করে সেক্ষেত্রে ৩১ দিনের নোটিস দিলেই হবে। কার্যকরী কমিটির বৈঠকের ক্ষেত্রে ১৫ দিনের নোটিস দিতে হবে। এর আগে মূল চুক্তিপত্রে বলা হয়েছিল, মিটিংয়ের ক্ষেত্রে ক্লাবকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে নোটিস দিলেই হবে।
সূত্রের খবর, উপরোক্ত বিষয়গুলিতে নমনীয় হয়েছে ইনভেস্টর। ক্লাবকে সেই চিঠির উত্তর পাঠিয়েও দিয়েছেন পার্থ। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে যদি এই বিষয়গুলিতে কোনও আপত্তি না থাকে, তা হলে মূল চুক্তিপত্রে সইয়ের পরই হবে চূড়ান্ত সমাধান। আরও একটি বিষয়ে বিনিয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে নমনীয় হওয়ার অনুরোধ করেছে ক্লাব। মূল চুক্তিপত্রে বলা হয়েছে, যে কোনও জায়গায় লোগো ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে ক্লাব অনুমোদন নিতে হবে। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন সচিব তথা বিশিষ্ট আইনজীবী পার্থ সেনগুপ্তর প্রস্তাব, স্পোর্টিং রাইটসের বাইরে অন্যান্য বিষয়ে লোগো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইনভেস্টরের অনুমতি প্রয়োজন নয়। অর্থাত্ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গঠনতন্ত্রে মেমোরান্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী, যা যা অ্যাক্টিভিটিসে (স্পোর্টিং ইভেন্ট ছাড়া) ক্লাবের অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে সেই সব জায়গায় লোগো ব্যবহার করতে পারবে। বিনিয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে এর উত্তর এখনও আসেনি। শ্রী সিমেন্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হরিমোহন বাঙ্গুর শহরে আছেন। তাঁর অনুমতি মিললেই লোগো ইস্যুতে নমনীয় হবে লগ্নিকারী সংস্থা।
আরও পড়ুন: East Bengal: ‘টার্মশিটের সঙ্গে মূল চুক্তিপত্রের ফারাক কই’, প্রশ্ন পার্থর
আরও পড়ুন: East Bengal: ‘মরার ঘায়ে ইঞ্জেকশন দিতে হবে’, পার্থসারথি সেনগুপ্ত